পথশিশু দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ৩:০৩:৩৬ অপরাহ্ন

তোমার আবেদন আল্লাহতায়ালা মঞ্জুর করবেন, অন্তরে এরূপ দৃঢ় বিশ্বাস রেখে তার কাছে প্রার্থনা করো। -আল হাদিস
দেশে জনসংখ্যার কতো অংশ শিশু, এ নিয়ে রয়েছে মত পার্থক্য। তবে বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্যা চিলড্রেন’ এর মতে জনগোষ্ঠীর ৩৯ দশমিক সাত শতাংশ শিশু। সেই হিসেবে দেশের জনসংখ্যা যদি ১৬ কোটি হয় তবে এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা সাড়ে ছয় কোটি। আর এই শিশুদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে পথশিশু। আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব পথশিশু দিবস। পথশিশু অর্থাৎ ছিন্নমূল শিশু কিশোরদের পুনর্বাসন তথা তাদের জীবনমান উন্নত করার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার লক্ষে দিবসটি পালিত হয়ে থাকে। জন্ম যাদের পথে, বেড়ে ওঠা পথেÑএদের বলা হয় পথশিশু। এদের নেই নির্দিষ্ট কোন ঠিকানা। শিক্ষা-দীক্ষা, খাদ্য বাসস্থান বা চিকিৎসা কোনটারই নিশ্চয়তা নেই এদের। সমাজের সকলের অবহেলা আর অনাদরে বেড়ে ওঠা এই পথশিশুদের ‘টোকাই’ এবং ‘পথকলি’ বলেও ডাকা হয়। বিভিন্ন নামে ভূষিত এই পথশিশুদের স্বাভাবিক জীবন-যাপনের নিশ্চয়তা দিতে পারছেনা সমাজ ও রাষ্ট্র।
পথশিশুদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি। সরকারিভাবে এ ব্যাপারে কোন পরিসংখ্যানও নেই। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হচ্ছে, দেশে পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুর সংখ্যা প্রায় চার কোটি। এর মধ্যে ৩২ লাখ পথশিশু। তাছাড়া দেশে পাঁচ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার খুবই কম। বিদ্যালয় বহির্ভূত ছয় বছর বয়সী শিশুদের প্রতি চারজনের একজন এখনও বিদ্যালয়ে যায় না। এদেরই একটা অংশ পথশিশু। দেশের ছোটবড় সব শহরেই রয়েছে পথশিশু। এদের আশ্রয় ফুটপাত, বিভিন্ন বাড়ির আঙিনা, মাজার, মন্দির, টার্মিনাল, রেলস্টেশনে। কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে পাওয়া তথ্য হচ্ছে, অর্থের অভাবে ৭৫ ভাগ পথশিশু চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে যেতে পারে না। অসুস্থ হলে তাদের ৫৪ ভাগের দেখাশোনার কেউ নেই। শহরাঞ্চলে বস্তির সংখ্যা বাড়ছে দ্রæত। সেই সঙ্গে বাড়ছে ছিন্নমূল পরিবারের সংখ্যা। সেই ধারাবাহিকতায় বাড়ছে পথশিশুর সংখ্যাও। পথশিশুরা পথেই থাকে। তাদের নেই অভিভাবক। সবচেয়ে ভয়াবহ খবর হচ্ছে, এই পথশিশুদের অনেকেই নানা ধরনের অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। জরিপের তথ্য হচ্ছে, পথশিশুদের ৮৫ ভাগই মাদকাসক্ত এবং মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এরা মাদক চোরাচালানের বাহক হিসেবেও কাজ করে। চুরি, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত এই পথশিশুরা। আর মাদক, চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধের সঙ্গে জড়িত পথশিশুরাই এক পর্যায়ে ভয়ংকর অপরাধী-সন্ত্রাসীতে পরিণত হয়। তাছাড়া, ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে পথশিশুরা। এদের নোংরা অপরিচ্ছন্ন স্থানে ঘুমিয়ে রাত কাটাতে হয়। হোটেল রেস্তোরার পঁচাবাসি খাবার বা ডাস্টবিনের নোংরা খাবারও এদের খেতে হয়। তাই এরা আক্রান্ত হয় নানা ধরনের রোগে। আবার অনেক পথশিশু জড়িয়ে পড়ছে ভিক্ষাবৃত্তিতে।
পথশিশুদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় এই ধরনের উদ্যোগ বিচ্ছিন্নভাবে নেয়া হলেও তার তেমন কোন সফলতা নেই। বিগত এরশাদ সরকারের আমলে পথশিশুদের লেখাপড়ার জন্য পথকলি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয় বিভিন্ন শহরে। বর্তমানে এই বিদ্যালয়গুলোর প্রতি সরকারের নজর নেই বললেই চলে। অভিভাবকহীন হয়ে বেড়ে ওঠা এই শিশুদের অভিভাবক হয়ে দাঁড়াতে হবে রাষ্ট্রকেই। এদের ভরণ পোষণ ও লেখাপড়ার ব্যবস্থা করতে হবে সরকারি উদ্যোগে। বিভিন্ন শহরে যেসব শিশু সদন, অনাথ আশ্রম ইত্যাদি রয়েছে, এগুলো যাতে পথশিশুদের আশ্রয় ও পুনর্বাসনের জন্য ব্যবহৃত হয়, সেই উদ্যোগ নিতে হবে। ইতোপূর্বে পথশিশুদের শেল্টার হোমÑএ আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নেয় সরকার। অথচ এই শেল্টার হোম শুধুমাত্র রাজধানীতে চালু হয়েছে; জেলা পর্যায়ে চালুর উদ্যোগ নেই