বোরো ধানে সোনালী রং ঘরে তোলার প্রস্তুতি কৃষকের
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ৪:৪৬:৪৯ অপরাহ্ন
কাউসার চৌধুরী:
ধান গাছের সবুজ রং বদলে এখন সোনালী আভার রং ধরেছে। সবুজ সমারোহের হাওরের রংও পাল্টে গেছে । হাওরজুড়ে সোনালি ধানের মৌ মৌ গন্ধ। যত দিন যাচ্ছে ততই রং বদলাচ্ছে হাওরের ফসল। কৃষকের কষ্টার্জিত ইরি-বোরো ধান ধীরে ধীরে পাকতে শুরু করেছে। কষ্টের সোনালি ফসল নিয়ে কৃষকদের স্বপ্নের শেষ নেই।
কৃষকগণ সোনালী ফসল ঘরে তোলার স্বপ্নে বিভোর। হাওরের কিছু কিছু উঁচু জমির ধান কাটা শুরু হয়ে গেলেও কৃষক-কৃষাণীরা পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই শুরুর অপেক্ষায় রয়েছেন।
কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ জেলার উপ-পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম সিলেটের ডাককে জানিয়েছেন, সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় এ বছর হাওরের ইরি-বোরোর বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। পয়লা বৈশাখ থেকেই সকল হাওরে ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়ে যাবে। এর দু-তিন দিনের মধ্যেই কাটা-মাড়াইয়ের ধুম লেগে যাবে। এখন কেবলই ধান কাটা ও মাড়াই শুরুর অপেক্ষা।
কৃষি বিভাগ আশা করছে, গেল কয়েক বছরের মধ্যে এবার বাম্পার ফলন হবে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি জমিতে চাষাবাদ হওয়ায় উৎপাদনও বেশি হবে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, দেশের ধান উৎপাদনের শীর্ষ জেলার মধ্যে সুনামগঞ্জ হচ্ছে অন্যতম। এই জেলার উৎপাদিত খাদ্য দেশের মোট খাদ্য ভান্ডারের ১৫/১৬ দিন পূরণ করা যায়। জেলার আবাদকৃত জমি থেকে এ বছর প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা মূল্যের ১৩ লাখ ৫৩ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। চালের হিসেবে এর পরিমাণ ৯ লাখ ২ হাজার মেট্রিক টন চাল।
চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলার ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪৪টি হাওরে ২ লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জেলা কৃষি বিভাগ। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪৯৫ হেক্টর জমিতে বেশি চাষাবাদ করা হয়। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১ হাজার ৮৫২ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছে ধর্মপাশা উপজেলায়। আবাদের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে দিরাই উপজেলা। ওই উপজেলায় ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। আর তৃতীয় অবস্থানে থাকা জামালগঞ্জ উপজেলায় আবাদের পরিমাণ ২৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর। সর্বনিম্ন ১০ হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়। অবশ্য জেলার মধ্যে এবার দিরাই উপজেলায় হাইব্রিড ধান বেশি আবাদ করা হয়েছে। আর তাহিরপুর উপজেলায় স্থানীয় জাতের ধানের সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছে।
জেলার আবাদকৃত জমির মধ্যে ১ লাখ ৬০ হাজার ৫৬৫ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফসি), ৬০ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড ও ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ১৬ হাজার ১৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদ করা হয়। এতে ২ হাজার ৭২০ হেক্টর হাইব্রিড, ১৩ হাজার ২৮০ হেক্টর উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ও স্থানীয় জাতের ধান ১৫০ হেক্টর। শান্তিগঞ্জ উপজেলায় মোট ২২ হাজার ৬০৯ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। চাষাবাদ করা জমির মধ্যে আছে হাইব্রিড ৮ হাজার ৬০০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ১৩ হাজার ৮৬৪ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ১৪৫ হেক্টর। দোয়ারাবাজার উপজেলায় আবাদকৃত জমির পরিমাণ ১২ হাজার ৭২০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ৬৮০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ১২ হাজার ৩০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ১০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ১০ হাজার ৫৫৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। চাষ করা জমির মধ্যে আছে হাইব্রিড ৬৮০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ৯ হাজার ৭৩৮ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ১৪০ হেক্টর। জগন্নাথপুর উপজেলায় ২০ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমি আবাদ করা হয়েছে। আবাদকৃত জমির মধ্যে আছে হাইব্রিড ৭ হাজার ৬০৯ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ১২ হাজার ৬৬১ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ৭০ হেক্টর। জামালগঞ্জ উপজেলায় আবাদের পরিমাণ ২৪ হাজার ৪৭০ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ৮ হাজার ২৬০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ১৬ হাজার ১৫০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ৬০ হেক্টর।
তাহিরপুর উপজেলায় ১৭ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড, ১৫ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ও ৫১০ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। ধর্মপাশা উপজেলায় আবাদের পরিমাণ ৩১ হাজার ৮৫২ হেক্টর। এর মধ্যে হাইব্রিড ২ হাজার ১১০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ২৯ হাজার ৭০৭ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। ছাতক উপজেলায় আবাদের পরিমাণ ১৪ হাজার ৮৩২ হেক্টর। আবাদকৃত জমির মধ্যে আছে হাইব্রিড ২ হাজার ২২ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ১২ হাজার ৭৩০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ৮০ হেক্টর। দিরাই উপজেলায় মোট ৩০ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে হাইব্রিড ১৩ হাজার ৮০০ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ১৬ হাজার ২৪৫ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের ধান ১০৫ হেক্টর। শাল্লা উপজেলায় ২১ হাজার ৬৯৪ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাইব্রিড ১২ হাজার ৯৭৯ হেক্টর, উচ্চ ফলনশীল (উফসি) ৮ হাজার ৬৫০ হেক্টর ও ৬৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধান চাষ করা হয়েছে।