রমযানুল মুবারক আস্সালাম
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ৪:৫১:২৩ অপরাহ্ন
শাহ নজরুল ইসলাম
আজ বুধবার, ২০ রমযান, ১৪৪৪ হিজরি। মাগফিরাতের দ্বিতীয় দশকের শেষ দিন। যারা ই’তেকাফ করবেন তাদের আজ সূর্যাস্তের পূর্বেই মসজিদে পৌঁছাতে হবে এবং শরয়ীভাবে ঈদের চাঁদ দেখা প্রমাণিত হলে ই’তেকাফ শেষ করতে হবে। এ প্রসংগে মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে উল্লেখ রয়েছে যে, চার ইমামের সকলেরই এই মত যে একমাস ইতেকাফ করার ইচ্ছা থাকুক বা দশ দিন উভয় অবস্থায় ই‘তিকাফকারী ব্যক্তি নির্ধারিত সময়ে আগের দিন সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করবেন। মহিলাগণ নিজেদের স্থানে এবং পুরুষগণ মসজিদে প্রবেশ করার সময় অথবা প্রবেশ করে মনে মনে এরূপ নিয়ত করবেন যে ‘আমি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রমযানুল মুবারকের শেষ দশ দিনের সুন্নাত ই’তেকাফ শুরু করছি। সুন্নাত ই’তেকাফের নিয়তে বিশ রমযান সূর্যাস্তের পূর্বেই করতে হবে। যদি সূর্যাস্তের পর নিয়্যত করা হয় তবে এই ই’তেকাফ সুন্নাত থাকবে না বরং নফল হয়ে যাবে। কেননা নিয়্যত করার পূর্বে শেষ দশ দিনের কিছু অংশ এই রূপ অতিবাহিত হয়ে গেছে যেখানে ই’তেকাফের নিয়্যত করা হয়নি। সুতরাং পুরো দশ দিনের ই’তেকাফ হয়নি। বরং এটা নফল ই’তেকাফ হিসেবে গণ্য হবে।
ইতেকাফের জন্য যারা জীবনের এ দশটি দিন ওয়াক্ফ করবেন তাদের ই’তেকাফ থেকে যেন ফায়দা আসে। এ জন্য এর আদব রক্ষা করতে হবে। ই’তেকাফের আদবসমূহ হচ্ছে; ১.অহেতুক কথা না বলা। যথাসম্ভব নেকির আলোচনা ও আমলে মশগুল থাকা। ২. উত্তম মসজিদ নির্বাচন করা। যেমন মসজিদে হারাম বা জামে মসজিদ ইত্যাদি। ৩. বেশি বেশি কুরআন মাজীদ এবং হাদীস পাঠ করা। ৪. যিকির করা। ৫. ইলমে দ্বীন শিক্ষা করা। ৬. ইলমে দীন শিক্ষা দেয়া। ৭. সীরাতুন্নবী (সা.) শিক্ষা দেয়া। ৮. আম্বিয়া ও আওলিয়া কেরামের জীবনী পাঠ। ৯. শরয়ী আহকামের কিতাবাদী পাঠ ও রচনা করা। ১০. যে সব কথায় গুনাহও নেই সওয়াবও নেই তাও বর্জন করা।
ই’তেকাফকারীর জন্য মসজিদে কিছু ছাড় আছে, তা হচ্ছে- ১. মসজিদে পানাহার করা। ২. মসজিদে নিদ্রা যাওয়া। ৩. প্রয়োজনে মসজিদের মিনারায় আরোহন করা। মসজিদের মিনারা যদি মসজিদের অংশ বিশেষ হয় তাহলে সকল ই’তেকাফকারীর জন্য তাতে আরোহণ করা জায়েয। আর যদি মিনারা মসজিদের অংশ না হয় তাহলে সেখানে শুধু মু’আযযিন ই’তেকাফকারী আযানের জন্য আরোহন করতে পারবেন। অন্যরা নয়। ৪. ই’তেকাফকারীর মাথা ধুয়ার জন্য মসজিদ থেকে মাথা বের করা। ৫. মসজিদে অযু ও গোসল দ্বারা যদি মসজিদ অপবিত্র ও ময়লা যুক্ত হওয়ার আশংকা না থাকে তবে মসজিদে উযু বা গোসল করা । (আলমগীরী ১ম খ-)। ৬. ই’তেকাফকারীর জন্য (তার প্রয়োজনে) প্রয়োজনীয় বস্তু ক্রয় বিক্রয় করা, তবে ক্রয় বিক্রয়ের পণ্যদ্রব্য মসজিদে প্রবেশ করানো জায়েয নয়। ৭. ই’তেকাফকারীর বিবাহ করা। ৮. ই’তেকাফকরীর জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা এবং মাথার তেল ব্যবহার জায়েয।
ইতেকাফকারীর জন্য যা জায়িয নয় তা হচ্ছে : ১. ব্যবসার উদ্দেশ্যে মসজিদে ক্রয় বিক্রয় করা। ২. ক্রয় বিক্রয়ের বস্তু মসজিদে উপস্থিত করে ক্রয় বিক্রয় করা। ৩. ই’তেকাফরত অবস্থায় কথা না বলাকে ইবাদত মনে করে নিরব থাকা। তবে গুনাহজনিত কথা পরিহার করা ওয়াজিব। ই’তেকাফ অবস্থায় মজুরী নিয়ে কোন কাজ করা মাকরূহ। এক্ষেত্রে যেসব কাজ মসজিদে করা মাকরূহ সে সব কাজ মসজিদের ছাদে করাও মাকরূহ।
সাইদ ইবনে জুবাইর আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, রাসূল (সা.) ই’তেকাফকারী ব্যক্তি সম্পর্কে বলেছেন যে, ‘সে ই’তেকাফে ও মসজিদে আবদ্ধ থাকার কারণে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে এবং তার নেকির হিসাব সব ধরনের নেক কাজ সম্পাদনকারী ব্যক্তির ন্যায় জারী থাকে। সুতরাং আসুন! প্রতিটি মসজিদে স্বতঃস্ফূর্তভাবে একটি জামা’আত ই’তেকাফে বসি। এর অশেষ ফায়দা ও সওয়াব হাসিল করি। মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক তৈরি করি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।