স্মার্ট ফোন আসক্তি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ২:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন

এমন প্রতীজ্ঞা করা উচিত নয়, যা পালন করতে পারবে না। -ডেল কার্নেগি
মোবাইল ফোন আসক্তিতে রয়েছে দেশের তরুণ সমাজ। গবেষণার তথ্য হচ্ছে, দেশের প্রায় এক চতুর্থাংশ তরুণ তাদের স্মার্টফোনের ওপর এতোটাই নির্ভরশীল যে এটি আসক্তির মতো হয়ে গেছে। এ আসক্তিমূলক আচরণের অর্থ, তারা যদি মোবাইল ফোন সবসময়ের জন্য হাতে না পায় তাহলে তারা ‘আতঙ্কিত’ বা ‘বিচলিত’ হয়ে পড়ে। এই তরুণরা মোবাইল ফোনের পেছনে যে পরিমাণ সময় ব্যয় করে তারা সেটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।
অস্বীকার করার উপায় নেই যে, মোবাইল ফোন নামক বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর আবিষ্কার বদলে দিয়েছে মানুষের জীবনযাত্রার গতিপথ। কিন্তু এটি অনেক সময় মানুষের জীবনধারাকে স্থবির করে দিচ্ছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সচেতন মহল। যা সমাজবিজ্ঞানীদের বড় ধরণের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, শিশু-কিশোরদের মধ্যে বেড়েছে মোবাইল আসক্তি। ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় শিশু-কিশোররা ইন্টারনেটভিত্তিক গেমস ও নানা ভিডিও নিয়ে ব্যস্ত থাকছে। এর ফলে বখাটেপনা ও নানান অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে উঠতি বয়সি কিশোররা। সংঘটিত হচ্ছে কিশোর অপরাধ। দেখা যায়, সহজেই অনৈতিক ভিডিও দেখার সুযোগ পেয়ে যায় অপরিণত বয়সিরা। আর এসব শিশু-কিশোরই একটু বড় হলে জড়িয়ে যাচ্ছে নানা অপকর্মে। বাজারে, রাস্তার মোড়ে আড্ডা দেওয়াসহ গ্রাম-পাড়া-মহল্লায় তৈরি হচ্ছে তাদের একাধিক গ্রæপ। বড়দের সঙ্গে বেয়াদবি, শিক্ষকদের অবমূল্যায়ন করতেও দ্বিধা করে না এরা। গবেষণায় দেখা গেছে, বিগত করোনামহামারি বিপর্যয়ে দেশের স্কুলশিক্ষার্থীদের মোবাইল আসক্তি বেড়েছে ৬৭ শতাংশ। শুধু শিশু কিশোর নয়, সব বয়সিদের মধ্যেই মোবাইল ফোন আসক্তি বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আসক্তি এক ধরণের রোগ। দেখা যায় অনেকেই মোবাইল ফোনের সংস্পর্শে না থাকলে উদ্বেগ, বিষণœতা আতঙ্ক ও নিঃসঙ্গতা অনুভব করছেন। মানুষের এই অবস্থাকে বলা হয ‘নোমোফোবিয়া’। মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারায় বা ফোন ছাড়া থাকার ভীতি থেকে তৈরি হওয়া আতঙ্ক বা উদ্বিগ্নতাকে নোমোফোবিয়া বলে। এই রোগে আক্রান্তরা মোবাইল ছাড়া নিজেকে অসহায় মনে করে। নোমোফোবিয়া রোগটি আক্রান্ত ব্যক্তির আচরণে ও মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। নোমোফোবিয়া সাধারণত তরুণদের মাঝে বেশি হলেও সাম্প্রতিককালে ছোট-বড় নির্বিশেষে সবার মাঝে এর নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।
আসল কথা হলো, স্মার্টফোনের ব্যবহারে সচেতন হওয়া জরুরি। এর অতিরিক্ত ব্যবহার যেমন মানুষের মেজাজে প্রভাব ফেলতে পারে, তেমনি মানুষের মন-মেজাজ স্মার্টফোন ব্যবহারের পরিমাণকে প্রভাবিত করতে পারে। সর্বোপরি মোবাইল ফোন আসক্তি যাতে কোন ধরণের বিপর্যয় সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। অবসরে বই পড়া, বাগান করা ও খেলাধুলার প্রতি মনোনিবেশ করা দরকার। যেকোন ব্যাপারেই উদ্বিগ্ন, চিন্তিত ও হতাশাগ্রস্ত না হয়ে প্রফুল্ল চিত্তে জীবনকে উপভোগ করাই মূল কথা।