ত্যাগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ২:৪৯:৪২ অপরাহ্ন
নুশরাত রুমু
মাকে দুপুরে খেতে না বসায় অনু বললো- তুমি কাল থেকে ভাত খাও না কেন মা?
রাহেলা হেসে বললো- আমি তো রোজা রেখেছি অনু, বড় হলে তোমাকেও রাখতে হবে।
-রোজা কি মা?
-মহান আল্লাহকে খুশি করার জন্য শেষরাতে খানা খেয়ে সারাদিন কিছু না খেয়ে সূর্য ডোবার পর মসজিদে আজান দিলে খাবার খেয়ে ইফতার করতে হয়। শেষরাতে ঘুম থেকে উঠে খাবার খাওয়াকে সেহেরি বলে। সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার পর খাবার খাওয়াকে বলে ইফতার।
-দিনে তাহলে পানি ও খাওয়া যাবে না?
না সোনা, কেবল পানি নয় কিছুই খাওয়া যাবে না। কোন খারাপ কাজ করা যাবে না, ঝগড়া করা যাবে না। আরো কিছু নিয়ম আছে, বড় হলে জানবে।
-আচ্ছা দাদিমা তো কত বড়, তাহলে দাদিমা কেন রোজা রাখেনি?
-তোমার দাদিমা তো খুব অসুস্থ, তাই রাখে না।
অনুর প্রশ্নের শেষ নেই। ৫ বছরে খুব চটপটে হয়েছে। সারাদিন মাকে প্রশ্ন করে যায়।
রাহেলার অনেক ধৈর্য, অসুস্থ শাশুড়ির সেবা, সংসারের কাজ সব সামলে অনুকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে উত্তর দিতে থাকে।
স্বামী ঢাকায় চাকরি করে। মাসে দু’ একবার আসে।
রোজার মাসের প্রথম অর্ধেকটা এভাবেই কেটে গেল।
১৬ রোজার দিন রাহেলা কাপড় ধুয়ে রোদে দিচ্ছিল, এমন সময় বাবা মোজাম্মেল হক অনুকে ডাকতে ডাকতে বাড়ি ঢুকলেন।
অনু নানাভাইকে দেখে মহাখুশি। দৌড়ে এসে প্যাকেটগুলো নিলো। প্যাকেটের ভেতর নতুন জামা,জুতো, শাড়ি দেখে অবাক হয়ে সে। শুরু হয়ে গেল তার প্রশ্ন। নানাভাই অনুকে কোলে নিয়ে বলল
-কদিন পরেই তো ঈদ, তাই এনেছি।
-ঈদ কী নানাভাই?
ঈদ মানে খুশি। একমাস রোজা রাখার পর নতুন চাঁদ উঠলে পরদিন ঈদ হয়। ঈদের দিন গোসল করে নতুন জামা পরবে, বড়দের সালাম করবে, ফিরনি সেমাই খাবে। অনেক মজা হবে।
-কিন্তু আমাদের পাশের বাড়ির আসমারা তো খেতেই পায় না, ওরা কি করে মজা করবে নানাভাই?
যাদের আছে তারা সাহায্য করবে, তবেই তো খুশি আসবে। মহান আল্লাহ তেমন হুকুমই দিয়েছেন।
আরো কিছুক্ষণ গল্প করে নানাভাই ফিরে গেলেন।
ঈদের আগের দিন অনুর বাবা সবার জন্য ঈদের নতুন কাপড় কিনে বাড়ি এলো।
ঈদের দিন সকালে রাহেলা অনুকে গোসল করিয়ে নতুন জামা পরাতে গিয়ে নানার দেয়া জামাটা খুঁজে পেলো না। কিছুক্ষণ পর অনু বললো- ওটা আমি আসমাকে দিয়ে দিয়েছি। নানাভাই বলছিল যাদের নেই তাদের সাহায্য করতে। হতবাক রাহেলা কিছু বলার আগে শাশুড়ি বললেন খুব ভালো করেছিস, ত্যাগই হলো রোজার আসল শিক্ষা।