রমযানুর মুবারক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ এপ্রিল ২০২৩, ৫:১০:৪৮ অপরাহ্ন
শাহ নজরুল ইসলাম
আজ বৃহস্পতিবার, ২১ রমযান, ১৪৪৪ হিজরী। নাজাতের দশকের প্রথম দিন। মহান আল্লাহ যাদের কবূল করেছেন তারা তাঁর সন্তুষ্টি বিধানে ই’তেফাকে বসতে পেরেছেন। মহান আল্লাহ সকলের ইবাদত কবূল করুন ।
আমরা জানি যে যাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম। এ বিষয়ে আরেক দিন লিখেছিলাম। আজও এ প্রসঙ্গে আরো কিছু মাসআলা আলোচনা করছি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য যা কিছু যাকাত দিয়েছ তাই বৃদ্ধি লাভ করতে থাকবে।’ (সূরা রূম : ৩৯) যাকাতের অর্থ ব্যয়ের নির্ধারিত খাত রয়েছে । এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় যাকাত গরীবদের, সহায় সম্বলহীনদের, যাকাত আদায়কারী র্কমচারীদের’ নওমুসলিমদের মনতুষ্টির জন্য, দাস দাসীদের দাসত্ব মোছনের ব্যাপারে ঋণ গ্রস্তদের আল্লাহর রাস্তায় এবং অভাবে পতিত মুসাফিরদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে ফরয।
আল্লাহ সর্বজ্ঞ ও বিজ্ঞানময়।’ (সূরা তাওবা-৯/৬০) আলোচ্য আয়াতে যাকাত ব্যয়ের আটটি খাত উল্লেখ করা হয়েছে। ১. ফকীর : শরীয়তের পরিভাষায় ফকীর বলা হয় ঐ সকল মানুষকে যারা নেসাব পরিমাণ মালের মালিক নয়। নেসাব পরিমাণ মাল হচ্ছে যে পরিমাণ মাল থাকলে যাকাত ফরয হয়। সুতরাং যে বা যার এই পরিমাণ সম্পদ নেই আবার নিঃস্বও নয়, তাকে ফকীর বলা হয়। এরকম লোককে যাকাত দেয়া যাবে। ২.মিসকীন : যে বা যারা একেবারেই সহায় সম্বলহীন নিঃস্ব ছিন্নমূল, তাদের যাকাত দেয়া যাবে। তাদের পুনর্বাসনে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। ৩. যাকাত বিভাগের কর্মচারী : সরকারীভাবে যাকাত আদায় করা হলে সে বিভাগের কর্মচারীদের যাকাতের অর্থে বেতন দেয়া যাবে। অভাবী হলে অনুদান হিসেবেও যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে। ৪. অমুসলিমদের ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করতে বা নও মুসলিমদের পুনর্বাসন করতে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। ৫. ক্রীতদাসের দাসত্ব মোচনে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। বর্তমানে দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে। তবে নানাভাবে মানুষ এখনো শৃংখলিত। অনেকে দেশে বিদেশে কারাগারে বন্দী। সাজা ভোগের পর জরিমানার অর্থ আদায় করতে না পারায় অতিরিক্ত জেল খাটতে হচ্ছে। তার মুক্তি কল্যাণকর মনে হলে যাকাতের অর্থ তার মুক্তির জন্য ব্যয় করা যাবে বলে ফকীহ ও ইসলামী স্কলারগণ মত প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া প্রবাসে তৃতীয় বিশ্বের বহু লোক বিপদে আছে। নিজের ভুলের কারণে অথবা প্রতারিত হয়ে জেলে আছে। দেশে ফেরার জন্য টিকেট করার মত অর্থ তার হাতে নেই। এসব মানুষের মুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে বলে মত দিয়েছেন ইসলামী পÐিতগণ।
৬. ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। সমাজের অনেক লোক আছে যারা তাদের মৌলিক প্রয়োজন মেটানোর জন্য ঋণ জালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। দুর্বিঃসহ জীবন তার। এসব মানুষের ঋণমুক্তির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। ৭. যারা আল্লাহর রাস্তায় নিবেদিত আছেন, তা’লীম তা’আল্লুম, দাওয়াত ও তাবলীগ, ফিকর ও গবেষণা, জিহাদ ফী সাবীলিল্রায় মশগুল তাদের কাজ তারা যেন নির্বিঘেœ করে যেতে পারেন সে জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে। সেমতে আমাদের দেশে মাদরাসাসমূহের লিল্লাহ বোর্ডিংসমূহে ইয়াতিম ও গরীব ছাত্রদের খোরাকির জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যাবে এবং এটা উত্তম।
৮. অভাবে নিপতিত মুসাফির তিনি নিজ দেশে ধনী হলেও তাকে যাকাত দেয় যাবে। এটা হতেই পারে যে, বিদেশ বিভূঁইয়ে কারো অর্থ শেষ /খোয়া গেছে, এমতাবস্থায় তার অর্থকরি পাওয়ার কোন উপায় নেই সে মুসাফিরকে যাকাতের অর্থ প্রদান করা যাবে। যাকাত নিকটাতœীয়দের দেয়া যাবে, যদি তারা গরীব হয়। নিজ সন্তান, পিতা মাতা ও স্ত্রীকে যাকাত দেয়া যাবে না। ধনী ব্যক্তি, আল্লাহদ্রæহী, নাস্তিক, মুরতাদ যিন্দিক ইসলামের সাথে শত্রæতা পোষণকারী কাউকে যাকাত দেয়া যাবে না।
নিজ ভাই বোনকে যাকাত দেয়া যাবে, যদি তারা যাকাতের হকদার হয়। এক্ষেত্রে তাদের যাকাতের অর্থ দেয়া হচ্ছে একথা বলার দরকার নেই। নিকটজনদের যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে তা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই।