বাঙালির নববর্ষ আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৫৭:৪৯ অপরাহ্ন
আল্লাহর কাছে উত্তম আমল হচ্ছে তোমার ভাইয়ের হৃদয় আনন্দে ভরে দেওয়া। -আল হাদিস
জীর্ণ-শীর্ণ পুরাতনকে পেছনে ফেলে নতুনের আবাহনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার দিন, বাঙালির চিরায়ত উৎসবে মেতে ওঠার দিন, প্রাণ খুলে আনন্দে ভেসে যাওয়ার দিন। আজ বাঙালির নববর্ষ, বাংলার নববর্ষ। আকাশে-বাতাসে, ফুলে-ফলে, পাখপাখালির কন্ঠে সুর ওঠেছে নতুন দিনের, নতুন বছরের। জনে-জনে, মনে-মনে রঙ লেগেছে, আন্দোলিত হচ্ছে সবাই খুশির জোয়ারে। বাঙালির কৃষ্টি সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পৃক্ত একটি নাম পয়লা বৈশাখ। আজ নারী-পুরুষ, শিশু-যুবা সকল ধর্মের সকল বর্ণের মানুষ মেতে উঠবে নতুন দিনের উৎসবে। পলাশ, শিমুল, কৃষ্ণচূড়ার রঙে সাজবে আজ গ্রাম বাংলা, শহর-নগর। সবাই প্রাণে প্রাণে একাকার হয়ে গাইবে সামনে ছুটে চলার গান। বৈশাখ যেমন আসে নতুনের কেতন উড়িয়ে, তেমনি বৈশাখের আরেক রূপ কালবৈশাখী নামক রুদ্র মূর্তি। তারপরেও এই বৈশাখকে আবাহন করে মানুষ; তারা উদগ্রীব থাকে বৈশাখকে বরণ করার জন্য সারা বছর।
বৈশাখ আসে প্রতি বছর, আসে নববর্ষ। আমরা স্বপ্ন দেখি আগামির, নতুনের স্বপ্ন, সুন্দরের স্বপ্ন। আমরা পেছনের সব পাওয়া না পাওয়ার হিসাব বন্ধ করে আগামি বছরের খাতা খুলি; সমৃদ্ধ আগামির পথে নবযাত্রায় উন্মুখ হই। ‘বাংলাদেশ’ শব্দটির সঙ্গে যেমন ‘বাঙালি’ শব্দটি জড়িয়ে আছে, তেমনি পয়লা বৈশাখ বাংলা ও বাঙালির সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু অতীতে এই বন্ধন এভাবে অটুট ছিলো না। তখন বৈশাখে নববর্ষ উদযাপন রীতিমতো ‘অপরাধ’ হিসেবেই গণ্য হতো। সেই পরাধীন দেশে বাঙালির কৃষ্টি ও সংস্কৃতিও ছিলো পরাধীন। তারপরেও জাতীয়ভাবে ঘটা করে বাংলা নববর্ষ উদযাপন না হলেও তখন এ দেশে সকল স্তরের মানুষ কৃষক, শ্রমিক, মজুর, ব্যবসায়ি, গৃহিণী বাংলা নববর্ষকে নানাভাবে বরণ করতো। বাংলা মাসের হিসেবেই তারা নানা সামাজিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতো। আর এখন বাংলা নববর্ষ নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা। কারণ, এই নববর্ষেই আমাদের আত্মপরিচয়ের শেকড় প্রোথিত। কালের পরিক্রমায় বাংলা নববর্ষ এখন নির্দিষ্ট কোনো স্থান বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এই উৎসব এখন বাংলার গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-মাঠে উদযাপিত হয়। উদযাপিত হয় শহরে নগরেও। কিন্তু এই সার্বজনীন নববর্ষ উদযাপনের মধ্যেও একটি বিষয় ভাবিয়ে তুলে সচেতন মহলকে। সেটা হলো, বাংলা আর বাঙালির নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মধ্যে বিজাতীয়-বিদেশি সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ। একটি মহল বরাবরই আমাদের ঐতিহ্য সংস্কৃতি বিরোধী নানা অপকর্মে লিপ্ত রয়েছে। তারা সুকৌশলে আমাদের শেকড় ও ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হানছে। তারাই বিভিন্ন গ্রামীণ উৎসব, পার্বন, মেলা, পালা, বাউল, জারিগানের আসরসহ অন্যান্য চিরায়ত উৎসবের বিরোধিতা করছে। শুধু সংস্কৃতির ক্ষেত্রেই নয়, তারা সামাজিক আচার-আচরণ, পোশাক পরিচ্ছদেও দেশীয় ভাবধারাকে কলুষিত করছে।
আজ নববর্ষের এই দিনে সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠেছে বিগত দিনের হিসেব মেলাতে। আমাদের ব্যক্তি ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বিগত বছরে ঘটেছে অনেকগুলো ঘটনা -দুর্ঘটনা। এর মধ্যে সাফল্য আছে, ব্যর্থতাও আছে। এই নতুন বছরে পাওয়ার আনন্দে সাফল্যের আনন্দে আমরা ভুলে যাবো অতীতের সব দুঃখ ব্যর্থতাকে। আজ শপথ নেবো নতুন বছরের প্রতিটি দিন প্রতিটি মুহূর্তে শুভ কাজের সব প্রতিবন্ধকতা উপড়ে ফেলার; শপথ নেবো নিজস্ব কৃষ্টি সংস্কৃতির লালন করার মাধ্যমে সমাজ সভ্যতা বিধ্বংসী অপকর্ম দমনের। বাঙালিরা জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোন পদক্ষেপে পরাজিত হয়নি অতীতে কখনও। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতি তথা স্বাজাত্যবোধের উজ্জীবনে ও চর্চায় আমাদের পরাজয় হবে না; বাংলা ও বাঙালির সার্বিক অগ্রগতি ও উন্নতির ধারাবাহিকতা স্তব্ধ হবে না ;বরং তা আরও বেগবান হবে। এই প্রত্যাশাতেই আজ বাংলা নববর্ষ ১৪২৯ উদযাপিত হচ্ছে। নতুন বছরে সকলের অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তির পাল্লা ভারী হোক; সারা বছরের প্রতিটি দিন হোক অনাবিল সুখের-সাফল্যের। সকলকেই নববর্ষের অফুরন্ত শুভেচ্ছা।