স্বাগত ১৪৩০ বাংলা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ এপ্রিল ২০২৩, ৩:৪৪:১২ অপরাহ্ন
সজীব হোক জীবনের সুখানুভুতিগুলো
আহমাদ সেলিম:
সব ফুল টবের জন্য আদর্শ নয়। দরকার উপযুক্ত জায়গা। আবার অনেক সুদর্শন এবং দুর্লভ ফুল টবের মধ্যেও হয়। দরকার কেবল পরিচর্যা। মানুষের জীবনের সাথে প্রকৃতি, এই ফুল, এই টবের গভীর একটা সম্পর্ক চিরকালীন। সেই সম্পর্কের ভেতর দিয়েই জীবন পাল তুলে, পাখি ডানা মেলে, রোদের বিন্যাস হয় আবার কখনো ভিজায় ভরা বরষায়। মহাকালের ভেতর দিয়ে এভাবেই বয়ে যাচ্ছে সময়। নিগুঢ় অন্ধকার শেষে নতুন সকালের সূচনা হয়। তবে আজকের সকালটা ভিন্ন। সবুজ পাতাগুলো সি¯œ। আজ পয়েলা বৈশাখ। স্বাগত ১৪৩০। বিদায় ১৪২৯।
আমাদের জীবনজুড়ে অজ¯্র জঞ্জাল। চারপাশে বাধার বনভূমি, স্বপ্ন, দুঃস্বপ্নের কাটাতার। আমাদের উদ্যানজুড়ে জমে আছে রক্তজবার মতো ক্ষত। আমরা ভালো নেই, আমাদের স্বপ্নগুলো ভালো নেই, আমাদের ফুলের গাছগুলো, টবগুলো, কম্পমান পাতাগুলো দূষণের শিকার।
তবু আমরা ভালো থাকি, সুন্দর একটি সকালের স্বপ্ন নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। একজন খোঁড়া কখনো চায় না, তার মতো সব মানুষ খোঁড়া হয়ে যাক, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলুক। একজন জন্মান্ধের প্রত্যাশা থাকে সবসময়, কেউ একজন তাকে হাত ধরে সড়কটি পার করে দিক, তাকে নিরাপদে রাখুক।
অনেক রক্তের দামে আমরা স্বাধীনতা এনেছি। ভাষার মর্যাদা সমুন্নত রেখেছি। পরিবেশ, পরিস্থিতি সবসময় একই ধারায় প্রবাহিত হয় না। সবকিছুর পরিবর্তন আছে। একদিন আমরা মহামারি করোনায় বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছিলাম। সেই বিভীষিকাময় কাল থেকে আমরা আবার জেগে ওঠেছি। আমরা বন্যার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিও মোকাবেলা করে এসেছি। এখন অনেক বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পন্য ও খাবারের মূল্য। তবু মানুষ মরছে না, আমরা বেঁচে আছি, সাধ্যমতো বেঁচে থাকবো। সব বাধা পেরিয়ে মাটি খনন করে ইতিহাসের মতো মানুষ বার বার জেগে ওঠে। আমরা এ-ও জানি, পৃথিবী একদিন অস্থিরতার জেলখানা থেকে মুক্তি পাবে। একদিন বন্ধ হবে ঠিক-যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা।
গত বছরের মতো এবারের নববর্ষের দিনটিও হাজির হয়েছে মাহে রমজান মাসে। তাই বর্ধিত কলেবরে না হলেও সীমিত পরিসরে পালন করা হবে বাঙালির সার্বজনীন দিনটি। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ একাত্মা হয়ে গাইবেÑ এসো, এসো হে বৈশাখ…।
আজ চিরায়ত নিয়মে হালখাতা খুলবেন ব্যবসায়ীরা। মিষ্টি মুখ করানোরও রেওয়াজ আছে। সভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই মানবসমাজে নানান রূপে এই বৈশাখ উদযাপিত হয়ে আসছে। আর সময়ের বিবর্তনে জাতীয় ঐক্য ও সংহতির ভিত্তি রচনা এবং ঐতিহ্যগত সংস্কৃতির বিকাশে বৈশাখ রাখছে বড় ভূমিকা। বাংলা নববর্ষের সঙ্গে সবচেয়ে নিবিড় সম্পর্ক কৃষির। এ সম্পর্কের সূত্রেই বাংলা সাল প্রবর্তন করেন সম্রাট আকবর। তাঁর আমলেই প্রবর্তিত হয় বাংলা সাল। এখন তা বঙ্গাব্দ নামে পরিচিত। বৈশাখ নামটি নেয়া হয়েছিল নক্ষত্র বিশাখার নাম থেকে। কালের বিবর্তনে নববর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক পুরনো আচার অনুষ্ঠানের বিলুপ্তি ঘটেছে। আবার যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন আয়োজন। তবে কালের আবর্তে অনেক কিছু সমাজজীবন থেকে হারিয়ে গেলেও হারায়নি কিছু আদি ঐতিহ্য। সেই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় গ্রামে বৈশাখকে বরণ করতে বাড়িঘর ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করবেন গৃহিণীরা। শহরেও ভোরে ঘুম থেকে উঠবেন সবাই। অনেকে নতুন পোশাকে সাজবেন।
দিনটিকে ঘিরে গ্রাম-গঞ্জে থাকে নৌকাবাইচ, লাঠিখেলাসহ ঐতিহ্যবাহী আয়োজন। ষাটের দশকে রমনার বটমূলে শুরু হয় বৈশাখ উদযাপন। এর মাধ্যমে বাঙালি আপন পরিচয়ে সামনে আসার সুযোগ পায়। পরবর্তী সময়ে বাঙালির রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটে পয়লা বৈশাখের। এক সময় পয়লা বৈশাখ মূলত উদযাপিত হতো ব্যবসায়ীদের হালখাতা, শুভেচ্ছা বিনিময়, গ্রামীণ মেলা- এ সবের মাধ্যমে। এখন উৎসবের বৈচিত্র ও ব্যাপ্তি বেড়েছে। পয়লা বৈশাখ বাঙালির চেতনাকে শাণিত করুক, বাঙালির অগ্রযাত্রা কে করুক বৈচিত্র্যময়।
পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারো সিলেটে বড় আয়োজন রেখেছে সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রæতি। সকাল আটটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত বøু-বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে থাকবে তাদের নানা কর্মসূচি। একইভাবে উৎসবের আয়োজন করেছে আনন্দলোক। সকাল নয়টা থেকে দুপুর বারোটা পর্যন্ত কেওয়াপাড়াস্থ শ্রীহট্ট সংস্কৃত কলেজ প্রাঙ্গণে তাদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলবে। এছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি।