রমযানুল মুবারক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ এপ্রিল ২০২৩, ৫:০৬:৩২ অপরাহ্ন
![রমযানুল মুবারক রমযানুল মুবারক](https://sylheterdak.com.bd/wp-content/uploads/2021/01/sylheterdak-5-768x406.jpg)
শাহ নজরুল ইসলাম
আজ রোববার, ২৪ রমযান ১৪৪৪ হিজরী। আজকের দিনগত রাত ২৫ রমযানের রাত। শেষ দশকের বেজোড় রাত। তাই, শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। মুসলমানদের জীবনে শবে কদরের গুরুত্ব অপরিসীম।
মানবজাতির হিদায়াত ও কল্যাণের জন্য নাযিলকৃত মহাগ্রন্থ আল কুরআন এরাতেই নাযিল হয়। সূরাতুল কদরে এ রাতের তিনটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে। (১) এ রাতে কুরআন নাযিল হয়েছে (২) এ রাত হাজার মাস (৮৩ বছর ৪ মাস) অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ এবং (৩) এ রাতে জিবরাইল (আ.) ফিরিশতা দলসহ শান্তির পয়গাম নিয়ে দুনিয়ায় অবতরণ করেন। আল্ কুরআনের সূরাই দুখানেও এরাতের গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে-‘শপথ সুস্পষ্ট কিতাবের (আল কুরআনের ) আমিতো তা অবতীর্ণ করেছি মোবারক রাতে। আমি সতর্ককারী এরাতে প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্থিরীকৃত হয় আমার আদেশক্রমে।’ (দুখান-২-৫) অধিকাংশ মুফাসসীর এব্যাপারে একমত যে উক্ত আয়াতে কুরআন নাযিলের এ রাতটি সূরা কদরে বর্ণিত লাইলাতুল কদরেরই রাত।
এ আয়াতে বর্ণিত শবে কদরের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে (১) এ রাতে কুরআন নাযিল হয় (২) এটি বরকতময় রজনী (৩) এ রাতে সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ তা’আলার ফয়সালা নির্ধারণ করা হয়। এ রাতে আল¬াহ তা’আলার সাংবাৎসরিক ফয়সালার ফিরিস্তি বাস্তবায়নের জন্য সংশি¬ষ্ট ফেরেশতাদের নিকট অর্পণ করা হয়। শবে কদর সম্পর্কে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন,‘যে ব্যক্তি শবই কদরে ঈমানসহ সওয়াবের নিয়তে ইবাদতের জন্য দাঁড়াবে তার পেছনের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী )
অন্য হাদীসে রাসূল (সা.) ইরশাদ করেছেন তোমাদের কাছে এমন এক মাস এসেছে যাতে এমন এক রাত আছে যা হাজার মাস থেকেও উত্তম। যে ব্যক্তি এরাত থেকে বঞ্চিত হবে সে সমগ্র কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। এর কল্যাণ থেকে একমাত্র হতভাগা লোক ছাড়া আর কেউ বঞ্চিত হয় না (মিশকাত শরীফ) এ বরকতময় মহিমান্বিত রাতের বরকত ও কল্যাণ থেকে কারোই বঞ্চিত হওয়া উচিত নয়। এর জন্য সর্বোত্তম সতর্ক ব্যবস্থা হচ্ছে ঝামেলাপূর্ণ পৃথিবী থেকে একটু পৃথক হয়ে নির্ঝঞ্ঝাটভাবে আল্লাহর ঘর মসজিদে রমযানের শেষ দশদিন ইতেকাফ করা। কারণ ইতেকাফের দ্বারা দুনিয়ার সকল কাজ-কর্ম ও ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে সর্বক্ষণ আল্লাহর যিকির বা ইবাদতে মশগুল থাকা।
শেষ দশ দিনের যে কোনও দিন শবে কদর হোক ইতেকাফ রত থাকার কারণে তা পাওয়া নিশ্চিত হয়ে যায়। শবে কদরের বরকত লাভের জন্য নিজ নিজ পরিবার পরিজনকেও সজাগ রেখে এ রাতের কল্যাণ লাভের জন্য উদ্বুদ্ধ করা উচিত। রাসূল (সা.) সর্বদা রমযানের শেষ দশ দিন ইতেকাফ করতেন এবং স্বীয় পরিবার পরিজনকে সজাগ রাখতেন ।
হযরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, ‘রমযানের শেষ দশক এলে রাসূল (সা.) স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে যেতেন। নিজে সারা রাত ইবাদত করতেন এবং পরিবার পরিজনকে ইবাদতের জন্য জাগ্রত করে দিতেন।’ (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এরাতে নামায, দান খয়রাত, কুরআন তিলাওয়াত ছাড়াও বিভিন্ন দু’আ ও তাসবীহ তাহলীল পাঠ করা যায়। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসুলুল্লাহ আমি যদি কোনক্রমে অনুধাবন করতে পারি যে আজই শব-ই কদর তাহলে সে রাতে আমি কি দু’আ করবো ? রাসূল (সা.) বললেন, ‘তুমি এই দু’আ পাঠ করবে ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী’ ‘হে আল¬াহ আপনি পরম ক্ষমাশীল আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন । সূতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।’