রমযানুল মুবারক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ৯:৪১:৩৪ অপরাহ্ন

শাহ নজরুল ইসলাম
আজ সোমবার, ২৫ রমযান, ১৪৪৪ হিজরী। শেষ দশকের নাজাত অংশের অর্ধেক অতিবাহিত হচ্ছে। যারা জাহান্নামের কঠিন শাস্তি থেকে নাজাত পেল, তারা বড়ই সৌভাগ্যবান। সফলকাম মানুষ। মহান আল্লাহ দয়া করে আমাদের যেন মুক্তি দেন। বিশেষ করে বিশ্বব্যাপী মযলূম মুসলমানদের স্বাধীনতা ও মুক্তি নসীব করুন। দয়াময় করুণাময় পরম দয়ালু মাবুদের কাছে বিনীতভাবে এই প্রার্থনা করছি।
রোযার শেষে আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে সাদকাতুল ফিতর আদায় করা। সাদাকাতুল ফিতরের বিধান হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ প্রসংগে কিছু হাদীস উল্লেখ করা যেতে পারে।
ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রত্যেক গোলাম, আযাদ পুরুষ, নারী, প্রাপ্ত বয়স্ক, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিমের উপরে রাসূলুল্লাহ সা. সাদকাতুল ফিতর হিসেবে খেজুর বা যব এক সা (৩ কে.জি. ৪০০ গ্রাম) পরিমাণ আদায় করা ফরজ করেছেন। -সহীহ বুখারী। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা এক সা পরিমাণ যব দ্বারা সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম -সহীহ বুখারী। সাহাবী আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা এক সা (৩ কে.জি. ৪০০ গ্রাম) পরিমাণ খাদ্য অথবা এক সা পরিমাণ খেজুর বা এক সা পরিমাণ পনির অথবা এক সা পরিমাণ কিসমিস দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। -সহীহ বুখারী। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. সাদকাতুল ফিতর হিসেবে এক সা (৩ কে.জি. ৪০০ গ্রাম) পরিমাণ খেজুর বা এক সা পরিমাণ যব দিয়ে আদায় করতে নির্দেশ দেন। আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেন, তারপর লোকেরা যবের সমপরিমাণ হিসেবে দু-মুদ বা অর্ধ সা (১ কে.জি. ৭০০ গ্রাম) গম আদায় করতে থাকে। -সহীহ বুখারী। আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা নবী সা. যুগে এক সা খাদ্যদ্রব্য বা এক সা’ খেজুর বা এক সা’ যব বা এক সা’ কিসমিস দিয়ে সাদকাতুল ফিতর আদায় করতাম।
হযরত মুআবিয়া রা. এর যুগে গম আমদানী হলো। তখন তিনি বললেন, এক মুদ গম পূর্বোক্তগুলোর দু-মুদ এর সমপরিমাণ বলে আমার মনে হয়। -সহীহ বুখারী। সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সা.-এর যুগে এবং আবু বকর সিদ্দিক ও উমর ফারূক রা. এর শাসনামলে সাদকায়ে ফিতর দেয়া হতো আধা সা গম। (তাহাবী শরীফ) এ জন্যে আমাদের ফক্বীহগণ বলেছেন, সাদকায়ে ফিতর গম ,যব, খেজুর, কিসমিস ও পনির দ্বারা আদায় করা জায়িয আছে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরী) সাদকায়ে ফিতর যদি গম বা গমের আটা বা ছাতু দ্বারা আদায় করা হয়, তবে আধা সা অর্থাৎ এক কে.জি. ৭০০ গ্রাম আদায় করতে হবে। আর যদি খেজুর বা যব বা যবের আটা বা কিসমিস কিংবা পনির দ্বারা আদায় করা হয় তবে এক সা (৩ কে.জি. ৪০০ গ্রাম) আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে আলমগীরি, হিদায়া) আমরা উপরে ফিতরা সম্পর্কে হাদীস ও ফকীহদের মতামত উল্লেখ করেছি ।
এ থেকে পরিলক্ষিত হয় যে, ফিতরা যেভাবে আমরা ঘোষণা করি, এবারের ফিৎরা ৫৫ টাকা বিষয়টি সে রকম নয়। বরং তা খাদ্যদ্রব্য দ্বারা আদায় করেছেন রাসুল সা. এবং সহাবায়ে কেরাম, ফকীহগণও সে কথাই বলেছেন। সুতরাং শুধু আটার মূল্যে ফিৎরা নির্ধারণ এ সকল হাদীস ও ফকীহগণের মতামতের খেলাফ। আলহামদুলিল্লাহ! এবিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে যথেষ্ট পরিবর্তন এসেছে। বিগত দুই যুগ ধরে আমি দৈনিক সিলেটের ডাকে লিখেছি এবং বহু উলামা সমাবেশে আলোচনা করেছি। এখন জাতীয় পর্যায়ে তা গৃহীত হয়েছে। তাই, আমরা ফিৎরা আদায় করতে পারি আটা, গম, যব, খেজুর, কিসমিস ও পনির দ্বারা এবং সে ক্ষেত্রে গম বা গমের আটা দ্বারা আদায় করলে দিতে হবে ১ কে.জি. ৭০০ গ্রাম এবং যব, খেজুর, খুরমা, কিসমিস বা পনির দ্বারা আদায় করলে ৩ কে.জি. ৪০০ গ্রাম দিতে হবে।
আমাদের মাযহাবের ফকীহগণ বলেছেন, যে এ সবের মূল্য দ্বারাও ফিতরা আদায় করা যেতে পারে। আবার তাঁরা এও বলেছেন, যে দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যদ্রব্য দ্বারা যাকাতুল ফিত্র আদায় করা উত্তম। অন্য সময় মূল্য দিয়ে আদায় করা যায়। এ জন্য মহান আল্লাহ যাদেরকে অঢেল সম্পদ দান করেছেন তারা কিসমিস, পনির, খুরমা বা খেজুর বা এর মূল্য দ্বারা আদায়ের চেষ্টা করুন। আর যাদের সম্পদ কম কিন্তু নেসাবের মালিক তারা গম বা গমের আটা বা ময়দা বা এর মূল্য দ্বারা আদায়ে সচেষ্ট হোন। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন।