পবিত্র শবে ক্বদর
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ৩:৩৬:৫৩ অপরাহ্ন
যারা বুদ্ধি ও যুক্তিতে নয়, গলাবাজি করে জিততে চায়, তারা বর্বর। -আবুল ফজল
আজ পবিত্র লাইলাতুল ক্বদর। সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজানের শেষ দশ দিনে মুসলমানদের জন্য মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার স্বরূপ এই রাতটি দেয়া হয়েছে। এই রাতকে বলা হয় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ। ‘ক্বদর’ আরবি শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে মাহাত্ম্য, সম্মান, তকদির, আদেশ। এই রাতের মাহাত্ম্য এবং সম্মানের দরুণ একে শবে ক্বদর বা মহিমান্বিত রাত বলা হয়। কঠোর সিয়াম এবং আত্মশুদ্ধির মাস মাহে রমজান শেষে মুসলমানদের জন্য আসছে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিত্র। এটা যেমন মুসলমানদের সিয়াম সাধনা আর আত্মসংযম পালনের পুরস্কার; তেমনি তাদের জন্য আরেকটি পুরস্কার হচ্ছে শবে ক্বদর।
পবিত্র মাহে রমজানের গুরুত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে অধিক পরিমাণে এই শবে ক্বদর। এই মহাপবিত্র রাতে নাজিল হয়েছে মহাগ্রন্থ আল কুরআন। আর এই পবিত্র আল কুরআনেই বলা হয়েছে ‘আমি আল কুরআন অবতীর্ণ করেছি মহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে তুমি কী জানো? মহিমান্বিত রজনী হলো সহ¯্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সেই রাতে ফেরেশতাগণ এবং রূহ অবতীর্ণ হয়, প্রত্যেক কাজে তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে। হজরত আবু বকর (রা.) বলেনÑ ‘এই রজনীকে শবে ক্বদর বলে নামকরণ করার কারণ এই যে, আমলনামা করার সময় ইতোপূর্বে যার সম্মান বা মূল্যায়ন থাকেনি, সে-ও এই রাতে তওবা ইস্তেগফার এবং এবাদতের মাধ্যমে মর্যাদার উর্ধাসনে আরোহণ করতে সক্ষম হয়। প্রখ্যাত সাহাবী হজরত কাবআইবাব (রা.) বলেন, ‘শবে ক্বদরের সূর্যাস্তের পরপরই ফেরেশতাগণ হজরত জিব্রাইল (আ.) এর নেতৃত্বে পৃথিবীর ভূ-খ-ে অবতরণ করেন এবং পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েন। প্রত্যেক স্থানে সেজদা ও রুকুতে মশগুল হয়ে পড়েন। মুমিন পুরুষ নারীদের জন্য দোয়ায় নিযুক্ত হন। মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা কেবল আমার উম্মতকেই শবে ক্বদর দান করেছেন। ইতোপূর্বে কোন উম্মতকে তা দান করেননি। এই রাতে আল্লাহর নূরের তজল্লী বিকশিত হয়। তওবা কবুল হয়। রোজাদাররা রমজান মাসে সিয়াম সাধনা করে সৃষ্টিকর্তার আদেশে তারই দিদার লাভের আশায়। শুধু শবে ক্বদর নয়। আরও অনেক পুণ্যময় রজনী রয়েছে সারা বছর, যেগুলো সাধ্যমতো ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করার চেষ্টা করেন মুসলমানগণ।
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তাকওয়ার সাথে ইবাদতে মগ্ন হলে একজন মুসলমান প্রকৃতপক্ষে পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হতে পারে। সব ধরণের পাপ পংকিলতা থেকে মুক্ত হয়ে যারা পরিপূর্ণ মানুষে পরিণত হতে পেরেছে তারাই পুণ্যবান। এই ধরণের মানুষের বসবাস যে সমাজে সেই সমাজই শান্তির-সুখের। কিন্তু এই শবে ক্বদরের প্রাক্কালে আমাদের এই সমাজে বিরাজ করছে ভিন্নচিত্র। বিশৃঙ্খলা, অশান্তি, অস্থিরতা, অপরাধ, অপকর্ম আর দুর্নীতিতে ছেয়ে গেছে গোটা সমাজ। ইবাদত বন্দেগীও হয়ে গেছে মেকী-লোক দেখানো। একদিকে মানুষ ধর্মকর্ম করছে, অপরদিকে অপরাধ-অপকর্মেও তারা লিপ্ত হচ্ছে নির্বিঘেœ। এই দ্বিমুখী আচরণ বা ভন্ডামির জন্যই সমাজের শান্তি বিঘিœত হচ্ছে। এই কালচার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের সব এবাদত বন্দেগিই হোক শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালাকে সন্তুষ্ট করার মানসে। আজকের এই শবে ক্বদরের রাতে আমরা আল্লাহর করুণা চাইবো, তিনি যেন আমাদেরকে পূর্ণাঙ্গভাবে এবং আন্তরিকতার সঙ্গে ইবাদত করার তাওফিক দান করেন।