মুজিবনগর সরকার ও মুক্তিযুদ্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ৩:৩২:০৫ অপরাহ্ন
মো. দিলওয়ার হোসেন বাবর
বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয় অধ্যায় হল ১৯৭১ সালের আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে যে নামটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে তা হল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকার। এই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বা মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বেই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ বা স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালিত হয়।
মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল এই সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের অন্যতম মুক্তাঞ্চল কুষ্টিয়া জেলার অন্তর্গত মেহেরপুর মহকুমার আমবাগান ঘেরা বৈদ্যনাথতলা গ্রামে শপথ গ্রহণ করে। এই বৈদ্যনাথতলা গ্রামে জাতির ইতিহাসের এত বড় একটা ঐতিহাসিক ও সংগ্রামী সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম (ভারপ্রাপ্ত) ও প্রথম প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীগণের শপথ গ্রহণের মাধ্যমে এইখান থেকেই বাংলাদেশ সরকারের প্রথম যাত্রা শুরু হওয়ায় এবং এই জায়গাটিকে স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস আরও স্মরণীয় ও ঐতিহাসিক করে রাখার জন্য আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামানুসারে এই জায়গার নামকরণ করা হয় মুজিবনগর। তাই আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুজিবনগর ও মুজিবনগর সরকার একটি উল্লেখযোগ্য ও স্মরণীয় স্থান দখল করে আছে।
১৯৭১ সালে ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তাঁর নির্দেশনা ও পরিকল্পনা অনুসারে সমগ্র দেশব্যাপী শুরু হয়ে যায় পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম। এই সময় অবস্থার প্রেক্ষাপটে ও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ হতে নির্বাচিত জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সদস্যদের কেউবা দেশেই অবস্থান করেন, আবার অনেকেই পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এমতাবস্থায় দেশকে পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, নিজেদের পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায় এবং সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে দেশ পরিচালনা করার জন্য একটি জনপ্রতিনিধিশীল সরকার গঠন অপরিহার্য হয়ে পড়ে।
এমতাবস্থায় তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহমদ ও বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ১ এপ্রিল ভারতের দিল্লী পৌঁছে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরাগান্ধীর সাথে সাক্ষাৎ করে তাঁর সহযোগিতা কামনা করেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে দীর্ঘ ও ফলপ্রসু আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে, ভারত সরকার স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে ভারতে অবস্থানের অনুমতি দিবে, সরকার পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান ও অস্ত্র দিবে, আন্তর্জাতিক সাহায্য ও সমর্থন আদায়ে সহযোগিতা করবে, শরণার্থীদের ভারতে থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা করবে, একটি বেতার কেন্দ্র স্থাপনে সহযোগিতা করবে এবং প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের সার্বিক সহযোগিতা করবে।
এই আলোচনার পর তাজউদ্দিন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম ৭ এপ্রিল আবার কলকাতায় চলে আসেন এবং তৎকালীন সময়ে কলকাতায় অবস্থানরত সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ. এইচ. এম কামরুজ্জামান, খন্দকার মোস্তাক আহমদ সহ অন্যান্যদের সাথে আলোচনা ও পরামর্শ করেন। পরবর্তীতে তারা গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠন করেন। নবগঠিত প্রথম স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রী পরিষদ হল:- রাষ্ট্রপতি- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান (পশ্চিম পাকিস্তানে কারাবন্দী অবস্থায়), উপরাষ্ট্রপতি ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি- সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী- তাজউদ্দিন আহমদ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী- এ. এইচ. এম. কামরুজ্জামান, অর্থমন্ত্রী- ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী- খন্দকার মোশতাক আহমদ, প্রধান সেনাপতি কর্নেল এম.এ.জি ওসমানী, চীফ অব স্টাফ- কর্ণেল (অব:) আব্দুর রব, ডেপুটি চীফ অব স্টাফ- গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ. কে. খন্দকার।
১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল তাজউদ্দিন আহমদ ও ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম কলকাতা থেকে আবার আগরতলা আগমন করেন এবং আগরতলায় উপস্থিত এম. এন. এ ও এম.পি.এদের নিয়ে সংসদীয় দলের এক সভা আহ্বান করেন। সভায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুমোদিত হয় এবং নতুন গঠিত সরকারের নামকরণ করা হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সরকার হবে সংসদীয় পদ্ধতির এবং রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ।
১৯৭১ সালের ১৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ বাংলাদেশ বেতারে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেন। তাছাড়াও মুজিবনগর সরকারকে প্রশাসনিকভাবে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য সাবেক সিএসপি ও ইপিসিএস কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি সচিবালয়ও গঠন করা হয়, যার মন্ত্রী পরিষদ সচিব ছিলেন এইচটি ইমাম এবং মুখ্য সচিব ছিলেন রুহুল কুদ্দুস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে এই সচিবালয়ের বিভিন্ন ক্যাটাগরির কর্মকর্তাগণ দেশ ও বিদেশের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকার পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
১৭৫৭ সালের ২৩ জুন পলাশীর আ¤্রকাননের যে বৈদ্যনাথ তলায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, সেই বৈদ্যনাথতলায় আবার ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবার বাংলার নতুন সূর্য উদিত হল। দেশী বিদেশী ১২৭ জন সাংবাদিক ও কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীর মাধ্যমে অতিসংক্ষিপ্ত সময়ের মাধ্যমে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করা হয়। অনুষ্ঠানে শপথবাক্য পাঠ করান তৎকালীন চীফ হুইপ অধ্যাপক ইউসুফ আলী এবং তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি পাঠ করে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্যদের পরিচয় করিয়ে দেন। পরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বেতার ভাষণ প্রদান করেন।
মুজিবনগর সরকার যুদ্ধে বিজয়কে ত্বরান্বিত ও সুনিশ্চিত করার জন্য দেশের কয়েকজন বরেণ্য চিন্তাবিদ ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে একটি পরিকল্পনা পরিষদও গঠন করেন। পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট এই পরিকল্পনা পরিষদের সদস্যরা হলেন ড. মোজাফফর আহমদ চৌধুরী, ড. খান সরওয়ার মুর্শিদ, ড. মোশাররফ হোসেন, ড. স্বদেশ বোস ও ড. আনিসুজ্জামান।
মুক্তিযুদ্ধ সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য এবং মুজিবনগর সরকারকে সঠিকভাবে পরামর্শ ও উপদেশ দেওয়ার জন্য দলমত ও ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কয়েকজন সদস্য নিয়ে একটি উপদেষ্টা পরিষদও গঠন করা হয়। এই উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা ছিলেন- মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, কমরেড মনি সিং, মনোরঞ্জন ধর, খন্দকার মোশতাক আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম কামরুজ্জামান।
পরবর্তীতে মুজিবনগর সরকার আলোচনার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রাম সঠিক ও সুন্দরভাবে পরিচালনা করার জন্য কৌশলগত কারণে সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে বিভক্ত করে প্রত্যেক সেক্টরে একজন করে সেক্টর প্রধান বা কমান্ডার এবং সাব সেক্টরগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক সামরিক কর্মকর্তা নিয়োগ করে।
১৯৭১ সালের ৭ অক্টোবর মুজিবনগর সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে বা সমগ্র রণাঙ্গণকে ৩টি ব্রিগেড ফোর্সে বিভক্ত করে প্রত্যেক অংশে একটি বিগ্রেড ফোর্স নিয়োগ করে। প্রথম, তৃতীয় ও অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে মেজর জিয়াউর রহমানের আদ্যাক্ষর অনুসারে তৈরি করা হয় ‘জেট’ ফোর্স। ২য় ইস্ট বেঙ্গল ও ৩ নম্বর সেক্টর নিয়ে মেজর শফিউল্লাহর নামে আদ্যাক্ষর নিয়ে তৈরি করা হয় ‘এস’ ফোর্স। ৪র্থ, ৯ম, ১০ম ইস্ট বেঙ্গল নিয়ে মেজর খালেদ মোশারফের নামের আদ্যাক্ষর নিয়ে গঠন করা হয় ‘কে’ ফোর্স। এই তিনটি ব্রিগেড আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সমগ্র রণাঙ্গণে দুঃসাহসী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় সার্বিক সহযোগিতা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান, লক্ষ লক্ষ শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান, প্রয়োজনীয় খাদ্য-বস্ত্র সরবরাহ, মুক্ত এলাকায় প্রশাসন পরিচালনা এবং দেশের অভ্যন্তরে মুক্তিযুদ্ধ সমন্বয়ের লক্ষ্যে তৎকালীন এম. এন. এ ও এম.পি.এ দের নেতৃত্বে সমগ্র বাংলাদেশকে আবারও ১১টি অঞ্চলে বিভক্ত করে প্রত্যেক অঞ্চলে একজন করে আঞ্চলিক চেয়ারম্যান নিয়োগ প্রদান করা হয়। তৎকালীন সকল এম.এন.এ. ও এম.পি.এ স্ব স্ব এলাকায় আঞ্চলিক কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। প্রত্যেক অঞ্চলে একটি করে দপ্তর ছিল এবং প্রত্যেক দপ্তরে একজন করে সিএসপি বা ইপিসিএস ব্যক্তিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৭১ সালের ১৩-১৬ মে হাঙ্গেরীর বোদাপেস্টে বিশ্ব শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলে আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মুজিবনগর সরকারের পক্ষে সেখানে অংশগ্রহণ করে। সম্মেলনে তারা নিরীহ বাঙালিদের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানী বাহিনীর পৈশাচিক নরহত্যা ও বর্বরতার একটি চিত্র তুলে ধরেন এবং আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের যৌক্তিকতা তুলে ধরে বাংলাদেশের পক্ষে তাদের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করেন।
১৯৭১ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার নিউইয়র্ক শহরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এক অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তখন মুজিবনগর সরকার জাতিসংঘের ঐ অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে বিচারপতি আবু সায়্যিদ চৌধুরীর নেতৃত্বে পনের সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সেখানে প্রেরণ করে। সেখানে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা ও চলমান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বক্তব্য প্রদান করে নিরীহ ও শান্ত বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানী বর্বর বাহিনীর অত্যাচারের ভীবৎস চিত্র সমগ্র বিশ্ববাসীর সামনে সুষ্পষ্টভাবে ব্যাখ্যাসহ তুলে ধরেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তৎকালীন মুজিবনগর সরকারের ব্যবস্থাপনায় ও পরিচালনায় যে মাধ্যমটি আমাদের ন্যায়সঙ্গত মুক্তিযুদ্ধের দৈনন্দিন খবরা খবর ও পাকবাহিনীর নির্যাতনের বর্বর কাহিনী দেশ ও বিশ্ববাসীর কাছে তুুলে ধরে সেটি হল বাংলাদেশ বেতার। এই বেতার আমাদের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি ও হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। আমাদের বেতারের শিল্পীরা বা কন্ঠযোদ্ধারা নিয়মিত জাগরণী সঙ্গীত প্রচার করে রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বদা উৎসাহিত করেছে। তাদের দেহ ও মণে শক্তি যুগিয়েছে, প্রাণের মায়া ত্যাগ করে রণাঙ্গণে শত্রুদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
এম আর আক্তার মুকুল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাংলাদেশ বেতারে প্রত্যেকদিন ‘চরমপত্র’ পাঠ করে মুক্তিযোদ্ধাসহ সমগ্র দেশবাসীকে তখন উজ্জীবিত করে তুলেছেন। তৎকালীন সময়ে এম. এ. মান্নানের সম্পাদনায় ‘জয় বাংলা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হত। প্রখ্যাত লেখক ও কলামিস্ট আব্দুল গাফফার চৌধুরী ও কবি আসাদ চৌধুরী ঐ পত্রিকায় কাজ করতেন। এটিও ছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ের একটি অন্যতম হাতিয়ার।
এইভাবে আমাদের মুজিবনগর সরকারের তৎকালীন সময়ের যুগোপযোগী, বাস্তবমুখী, সুচিন্তিত ও পরিকল্পনা ও কৌশলের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেছে। সেই সাথে বাংলাদেশের সকল স্তরের, সকল শ্রেণি ধর্ম ও বর্ণের স্বাধীনতাকামী মানুষ স্ব স্ব অবস্থান থেকে স্ব স্ব কৌশলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধকে একটি জনযুদ্ধে রূপান্তর করেছে। আস্তে আস্তে তা সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিয়েছে। পরবর্তীতে ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পৃথিবীর বুকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে লাল সবুজের বাংলাদেশ আত্মপ্রকাশ করেছে। তাই যতদিন স্বাধীন বাংলাদেশ থাকবে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অবিকৃত থাকবে, ততদিন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মুজিবনগর সরকারের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।
লেখক : শিক্ষক।