রমযানুল মুবারক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ৬:৩৬:১৯ অপরাহ্ন
শাহ নজরুল ইসলাম
আজ মঙ্গলবার, ২৬ রমযান, ১৪৪৪ হিজরী। আজকের দিনগত রাত ২৭ রমযানের রাত। শেষ দশকের বেজোড় রাত, যা শবে ক্বদর হবার জোর সম্ভাবনা আছে। সুতরাং এ রাতে ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে লাইলাতুল কদরের অন্বেষায় মাশগুল থাকা চাই।
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে এবং সওয়াবের আশায় রমযান মাসে রোযা রাখে, তার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে
ইবাদতে মশগুল থাকে তার পেছনের সব গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।
যির ইবনে হুবাইশ র. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত উবাই ইবনে কা’ব রা. কে জিজ্ঞাসা করলাম যে, আপনার ভাই আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলে থাকেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাত জেগে ইবাদত করবে, সে লাইলাতুল কদর পাবে। এসম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তখন উবাই ইবনে কাব রা. বলেন, ‘আল্লাহ তা’আলা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের উপর রহম করুন। তিনি চাচ্ছেন মানুষ যেন সারা বছর লাইলাতুল কদর পাওয়ার আশায় রাত জেগে ইবাদতে মশগুল থাকে। অথচ তিনি তো অবহিত রয়েছেন যে, লাইলাতুল কদর রমযানেই হয়ে থাকে এবং তা রমযানের শেষ দশকেই রয়েছে এবং তা রমযানের ২৭তম রাতে। এর
পরে তিনি শপথ করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বললেন, তা সাতাশতম রাতেই” -সহীহ মুসলিম।
আলোচ্য হাদীস থেকে প্রতিয়মান হয় যে, শবে কদর ২৭ রমযানে এটা নির্ধারিত। অথ্যাৎ ২৬ রমযান দিবাগত রাতে। কারণ আরবীতে দিনের সূচনা হয় সূর্যাস্তের পর থেকে। অন্য হাদীসে উবাদা ইবনে সামিত রা. বলেন, একদা নবী কারীম সা. শবে কদরের নির্দিষ্ট দিন সম্পর্কে অবহিত করার জন্য বাইরে আসেন। দু’জন মুসলমান আপোষে দ্বন্দ্বে লিপ্ত দেখে রাসুল্লাহ সা. বললেন, আমি তোমাদেরকে শবে কদর অবগত করার জন্য এসেছিলাম। কিন্তু তোমরা পরস্পরে দ্বন্দ্বে লিপ্ত দেখলাম, যাতে শবে কদরের নির্দিষ্ট তারিখ আমার মন থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে এই উঠিয়ে নেয়ার মধ্যেও মঙ্গল নিহিত থাকতে পারে। তোমরা শবে কদর রমযানের শেষ দশকে পঞ্চম, সপ্তম এবং নবম রাতে অনুসন্ধান কর’ -সহীহ বুখারী।
এ হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি, যে দুই মুসলমানের ঝগড়া কতটা ক্ষতিকর যে আমরা এ কারণে শবে কদরের নির্দিষ্ট রাত জানতে পারলাম না। এ থেকে শিক্ষা হচ্ছে যে আমাদের আপোষের ঝগড়া বিবাদ আমাদের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনে না বরং শক্তি সামর্থ মান সম্মান নষ্ট করে। সমাজের চোখে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। সুতরাং ঝগড়া বিবাদ পরিহার করে চলার অভ্যাস গড়ে তোলা সকলের কর্তব্য।
আর যেহেতু নির্দিষ্ট করে শবে কদর জানতে পারলাম না তাই প্রতিটি বেজোড় রাতেই আমাদের অনুসন্ধানী হওয়া চাই। এ রাতে আমরা কি করবো এ প্রশ্ন অনেকের। এ বিষয়ে সুফিয়ান সাওরী রহ. বলেন, শবে কদরে সব ইবাদতের চেয়ে দু’আই উত্তম। ইবনে রজব বলেন, ‘শুধু দু’আ নয় নামায, যিকির, তিলাওত ইত্যাদিও উত্তম। যেহেতু নবী কারীম সা. এ গুলো করতেন। আজকের রাতে বেশি বেশি করে দুআ করুন। আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন্ তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী, হে আল্লাহ আপনি বড় ক্ষমাশীল, ক্ষমা করাকে আপনি পছন্দ করেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন। আমীন।