সুদান : কেন এই গৃহযুদ্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ মে ২০২৩, ১:১১:১৩ অপরাহ্ন
অ্যাডভোকেট আনসার খান:
দারফুরে দীর্ঘ কুড়ি বছরের গৃহযুদ্ধ ও সামরিক স্বৈরশাসক ওমর আল-বশিরের শাসনামলে সুদানী জনগণের দূর্বিষহ জীবনযাত্রা থেকে মুক্তির আস্বাদ পেয়েছিলেন সুদানী জনগণ ২০১৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানে জেনারেল বশিরের শাসনের অবসানের কারণে। জনগণ ধরেই নিয়েছিলেন এবার হয়তো দেশটিতে গণতান্ত্রিক অধিকার সহ শান্তির সুবাতাসের দেখা মিলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রত্যাশিত সেই শান্তির আকাঙ্খা বাতাসে মিলিয়ে গেছে দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াইয়ের কারণে। ক্ষমতাকাঙ্খী জেনারেলদের ক্ষমতার ক্ষুধা পূরণের জন্য ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানে আবারও গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছে দুই প্রতিদ্বন্দ্বি বাহিনী, এএসএফ ও আরএসএফ বাহিনীর মধ্যে এবং সেটি এখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
গৃহযুদ্ধ কবলিত দেশটিতে ইতিমধ্যে শত শত নিরীহ মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার লোক আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো খবর পরিবেশন করেছে। খবরে আরও বলা হয়েছে এখনো পর্যন্ত লক্ষাধিক সুদানী মানুষ প্রাণ বাঁচাতে প্রতিবেশী দেশগুলোতে পালিয়ে গিয়েছে শরণার্থী হিসেবে। এছাড়াও কয়েক হাজার মানুষ দেশের অভ্যন্তরে বাস্তুচ্যুত ও স্থানান্তরিত হয়েছে, যা জাতিসংঘ ইতিমধ্যেই বিশাল, বিস্তৃত উত্তর -পূর্ব আফ্রিকান দেশে মানবিক বিপর্যয় হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং গৃহযুদ্ধ অব্যাহত থাকার কারণে মানবিক সমস্যা আর-ও প্রকট হওয়ার আশঙ্কা করেছেন মানবাধিকার সংগঠনগুলো ও জাতিসংঘ।
ভূকৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ লোহিত সাগরের তীরবর্তী হর্ণ অব আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে অবস্থিত সুদান রাজনৈতিকভাবে অস্থির একটি দেশ, যেখানে ক্ষমতা দখলের লড়াই যেন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হিসেবে গণমানুষের জীবনকে দূর্বিষহ করে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামরিক অভ্যুত্থান, ক্ষমতার জন্য লড়াই, গৃহযুদ্ধ দেশটিতে একটি মানবিক সংকট তৈরি করে রেখেছে।
হোয়েন পিস কিলস পলিটিক্স : ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারভেনশন অ্যান্ড অনএন্ডিং ওয়ার্স ইন দ্য সুদান, বইয়ের লেখক ও ব্রিটেনের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অব গভর্নেন্স অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের সহপরিচালক শরথ শ্রীনিবাসন বলেছেন, ভারত মহাসাগর, হর্ণ অব আফ্রিকা, উত্তর আফ্রিকা এবং আরব বিশ্বের সংযোগস্থলে অবস্হিত হওয়ায় সুদানের রয়েছে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূকৌশলগত মর্যাদা এবং এর কৃষি ও প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতার কারণে ওই অঞ্চলের আঞ্চলিক শক্তিগুলো যেমন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ অন্যান্য শক্তিসমূহও সুদানের ওপর তাদের প্রভাব ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করে বিধায় সুদানে রাজনৈতিক অস্হিরতা তৈরি হয়ে আছে বছরের পর বছরধরে। তাই সুদানের রাজনৈতিক ব্যবস্হা কখনো স্থিতিশীল হতে পারেনি দেশী-বিদেশী হস্তক্ষেপের কারণে।
২০২১ সালের অক্টোবরে সুদানের দীর্ঘ ২০ বছর ধরে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল ওমর আল বশির সরকারকে একটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় জেনারেল বুরহান ও জেনারেল হামাদতির নেতৃত্বে অধিষ্ঠিত ঐক্যমত্যের সরকার দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে এনে জনজীবনে স্বস্তি দিতে পারবে, এমনটি-ই মনে করা হয়েছিলো। ২০১৯ সালে স্বৈরশাসক ওমর আল বশির-কে ক্ষমতাচ্যুতির পরবর্তীতে ২০২১ সালে একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত একটি শাসক পরিষদ সুদানের রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন এবং ওই শাসক পরিষদের প্রধান ছিলেন জেনারেল বুরহান এবং উপপ্রধান ছিলেন জেনারেল হেমেদিত।
আন্তর্জাতিক সমর্থনে এবং এসএএফ ও আরএসএফ এবং বেসামরিক রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহযোগিতায় শাসক পরিষদ সুদানে বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তন এবং গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য পদক্ষেপ গ্রহন করেছিলেন। তবে বেসামরিক প্রশাসনের উত্তরণের প্রস্তাবিত পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছু বিষয় নিয়ে দুই জেনারেলের মধ্যে দ্বিমত, ভিন্নমত ও মতবিরোধ দেখা দেয়। জেনারেল বুরহানের নেতৃত্বাধীন সুদানী আর্মস ফোর্সের সাথে জেনারেল হেমেদিতের একলাখ সদস্যের আধাসামরিক বাহিনীর একীভূতকরণের দাবি ওঠায় একীকরণ পরবর্তী কমান্ডার স্ট্রাকচার কাঠামো কী হবে এবং সেই কাঠামোতে দুই জেনারেলের সম্পর্ক ও পদবি কী হবে, তা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ভিন্নমত সৃষ্টি হয়। একীভূত সামরিক বাহিনীর নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব কার হাতে থাকবে তা নিয়েও এসএএফ এবং আরএসএফ’-এর মধ্যে বিতর্ক ও মতানৈক্য শুরু হয়। আরএসএফ তাদের কমান্ডার জেনারেল হেমেদিতকে রাষ্ট্রের বেসামরিক প্রধান করার দাবি তোলে, যা জেনারেল বুরহানের সেনাবাহিনী প্রত্যাখ্যান করে। এতে বিরোধ তীব্রতর হয় এবং বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ ও গণতন্ত্রে উত্তরণের পরিকল্পনা ভেস্তে যায় এবং ১৫ এপ্রিল থেকে দুই জেনারেলের অর্থাৎ এসএএফ ও আরএসএফ বাহিনীর মধ্যে সশস্ত্র লড়াই শুরু হয় সুদানী রাষ্ট্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ ও দখল প্রতিষ্ঠার জন্য।
উল্লেখ যে,দারফুরের বিদ্রোহ দমনের জন্য সাবেক প্রেসিডেন্ট বশির একটি মিলিশিয়া বাহিনী তথা “জানজাওয়েদ” গঠন করেছিলেন। পরবর্তীতে এটিকে আধাসামরিক বাহিনীতে রূপান্তরিত করে ওই বাহিনী প্রধানকে জেনারেল পদবি দিয়েছিলেন জেনারেল বশির। তার উদ্দেশ্য ছিলো নিয়মিত সেনাবাহিনীর প্যারালাল আধাসামরিক বাহিনী তৈরি করে উভয় বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রয়োজনে আধাসামরিক বাহিনীকে নিয়মিত সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, যাতে জেনারেল বশির নিজের ক্ষমতা নিরংকুশ করতে পারেন।
ইতিমধ্যেই দুই জেনারেলের ক্ষমতার লড়াই হিসেবে চিহ্নিত হওয়া সুদানের সামরিক বাহিনী ও দেশের আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ, যা ক্ষমতা ও সম্পদের জন্য লড়াই,-সেটি গৃহযুদ্ধের আকারে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে। এসএএফ বা সুদানী আর্মস ফোর্সেসের প্রধান ও দেশটির প্রকৃত শাসক জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল বুরহান এবং জানজেওয়েদ নামে পরিচিত র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নামক আধাসামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো, যিনি “হেমেদতি” নামে সমধিক পরিচিত,- এই দুই জেনারেল হলেন সুদানের বর্তমানে চলমান গৃহযুদ্ধের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ও গৃহযুদ্ধের কেন্দ্রীয় চরিত্র, যারা একসাথে স্বৈরশাসক জেনারেল বশিরকে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন এবং একসাথে সুদানের রাষ্ট্র বিনির্মাণ, রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর, বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা ও জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে আসছিলেন, কিন্তু এখন তাদের ক্ষমতার লালসা এবং আধিপত্য কায়েমের লড়াই সুদানকে ছিন্নভিন্ন করে চলেছে। এখন দুই জেনারেলের ওপর সুদানের ভবিষ্যত নির্ভর করছে। কেননা দুই জেনারেল দেশটির রাষ্ট্রক্ষমতায় একক আধিপত্য স্হাপনের জন্য এবং দেশটির ভবিষ্যত নির্ধারণের জন্য সশস্ত্র লড়াইয়ে লিপ্ত রয়েছেন। দুই জেনারেল এখন নিজেদের অঢেল সম্পদ রক্ষার জন্যও লড়াই করছেন। এক তথ্য থেকে দেখা যায়, দেশের সামরিক বাহিনী অর্থনীতির বড় অংশই নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সেনাবাহিনী এখন দেশের সোনার খনি ও চোরাচালানের পথের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করছে। এটি পোর্ট সুদান থেকে খার্তুম পর্যন্ত রাস্তাসহ প্রধান পরিবহণ লাইন দখলে নেওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। অন্যদিকে হেমেদতি -দারফুরের উটপাল,বিশাল গবাদিপশু ও সোনার খনির ওপর নিয়ন্ত্রণ করছে। ব্রিটিশ থিঙ্ক ট্যাঙ্ক চ্যাথাম হাউসের হর্ণ অফ আফ্রিকা গবেষক আহমেদ সোলিমান বলেছেন, “এটি সুদানের দুটি সবচেয়ে শক্তিশালী সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা।”
সৌদি আরব থেকে লোহিত সাগর জুড়ে বিস্তৃত সুদানের সাথে মিসর, লিবিয়া, চাদ, মধ্যআফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, দক্ষিণ সুদান, ইথিওপিয়া এবং ইরিত্রিয়ার স্হল সীমান্ত রয়েছে এবং অবিলম্বে সংঘাত বন্ধ না হলে সংঘাত বিস্তৃত অঞ্চলে এবং বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে বিশ্লেষক শ্রীনিবাসন, জাতিসংঘের মহাসচিব সহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। শ্রীনিবাসন মনে করেন, সুদানের চলমান সংঘাত একটি ভূকৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা, সেইঅর্থে, এই সংঘাতটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সম্পদ, নিরাপত্তা, প্রভাব নিয়ে জটিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে সামনে নিয়ে আসছে, যা এই অঞ্চলকে প্রভাবিত করবে।
মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে সতর্ক করে দেন যে, শিগগিরই সংকটের সমাধান না হলে এই সংঘাতের একটি “বিপর্যয়কর দাবানল” তৈরি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে, যা এই অঞ্চলে এবং এর বাইরেও গ্রাস করতে পারে।
“সুদানে যা ঘটবে তা সুদানে থাকবে না”-বলেছেন আন্তর্জাতিক ক্রাইসিস গ্রুপের অ্যালান বসওয়েল। ” যত বেশি সময়ধরে যুদ্ধ চলবে, আমরা বড়ধরণের বাহ্যিক হস্তক্ষেপ দেখতে পাব”- বলেছেন বসওয়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সুদান বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স ডি ওয়াল এক নিবন্ধে লিখেছেন, সংঘাতকে গৃহযুদ্ধের “প্রথম রাউন্ড” হিসেবে দেখা উচিত।” “যদি না এটি দ্রুত শেষ করা হয়, তবে আঞ্চলিক এবং কিছু আন্তর্জাতিক অভিনেতা তাদের স্বার্থ অনুসরণ করে-অর্থ, অস্ত্র সরবরাহ এবং সম্ভবত তাদের নিজস্ব সৈন্য বা প্রক্সি ব্যবহার করে সংঘাত একটি বহুস্তরের খেলায় পরিণত করবে”,-বলেছেন ডি ওয়াল। দুই জেনারেলের অনুগত বাহিনীর মধ্যে সুদানের গৃহযুদ্ধ সেই জাতিকে পতনের ঝুঁকিতে ফেলেছে, -এর পরিণতি তার সীমানা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন ডি ওয়াল।
সুদানের দুই জেনারেলের মধ্যে সংঘটিত সংঘাত কেন সুদানের বাইরের দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে আলোচনা করার ক্ষেত্রে সুদানের ভৌগোলিক অবস্থান এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে যুদ্ধরত জেনারেল বুরহান ও জেনারেল হেমেদিতের বহি:সম্পর্কের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হয়। সুদানের জেনারেল বুরহানের সঙ্গে মিশরের একটি দীর্ঘস্হায়ী ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং অন্যদিকে, জেনারেল হেমেদিতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে লিবিয়া, বিশেষকরে, ফিল্ড মার্শাল হাফতারের সাথে এবং হাফতারের মাধ্যমে আবার সংযুক্ত আরব আমিরাত ও অন্যান্যদের সঙ্গে সম্পর্ক আছে জেনারেল হেমেদিতের। লিবিয়ান ন্যাশনাল আর্মির কমান্ডার এপ্রিলে শুরু হওয়া সুদানের সংঘাতে আরএসএফ-কে সহায়তা করেছিলেন বলে একটি প্রচারণা আছে, যদিও হাফতার এটি অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, লিবিয়ার যুদ্ধবাজ নেতা হাফতারকে ২০১৪ সাল থেকে একচেটিয়া সামরিক ও রাজনৈতিক সমর্থন দিয়ে চলেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই সম্পর্কগুলো বিশ্লেষণ করলে সুদানী গৃহযুদ্ধে প্রতিবেশী দেশগুলোর ভূমিকা কী হতে পারে তা বোঝতে বিশেষ অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।
এদিকে রাশিয়ান ভাড়াটে বাহিনী ওয়াগনার গ্রুপ সুদানে বিভিন্ন বানিজ্যিক এবং সামরিক অভিযানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। আর সুদানের প্রতি মস্কোর আগ্রহ দীর্ঘদিনের। ২০১৭ সালের দিকে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বশিরের সাথে মস্কোর বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিলো, যেখানে লোহিত সাগরের বন্দর সুদানে ৩০০ সৈন্য ও চারটি জাহাজ হোস্ট করতে সক্ষম একটি রাশিয়ান নৌঘাঁটি স্হাপনের বিষয় যুক্ত ছিলো এবং সেটি নির্মাণ করার পরিকল্পনা করেছে রাশিয়া। নৌঘাঁটি স্হাপনের এই বিষয়টি নিয়ে আপত্তি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা বিশ্বের এবং একারণে পশ্চিমা শক্তিগুলো ও রাশিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতায় সুদানের সংঘাতে জড়িত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে। অর্থাৎ সুদানে বিভিন্ন স্বার্থের দেশগুলোর ভূকৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা রয়েছে, সুদানের অব্যাহত সংঘাত দেশটির অনেক প্রতিবেশীর অর্থনৈতিক, বানিজ্যিক, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করেছে, সেটি বেশ স্পষ্ট এবং একারণে সুদানের গৃহযুদ্ধ যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই বিদেশি শক্তিগুলো এই গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
“যদি সংঘাত চলতেই থাকে, তাহলে আমরা পুরো প্রজন্মকে আঘাতের ঝুঁকিতে ফেলবো” এবং এটি মৌলবাদের দিকে নিয়ে যেতে পারে,”- বলেছেন ব্রিটেনের বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মেডারউইচ।
এই সংঘাত সুদান রাষ্ট্রকে জাতিগতভাবে বিভক্ত করতে পারে, যদি না সংঘাত থামানো যায়।কারণ সুদানের রাজনীতি সব সময়ই খার্তুম ও নীলনদের আশপাশের জাতিগোষ্ঠী ভিত্তিক। জেনারেল হেমেদতি প্রান্তিক অঞ্চল দারফুর থেকে এসেছেন। খার্তুমের অভিজাত গোষ্ঠী ওই প্রান্তিক অংশগুলোর নেতা হেমেদতি ও তার সৈন্যদের সম্পর্কে নিন্দনীয় ভাষা প্রয়োগ করে বলে থাকেন, “তারা রাষ্ট্র শাসনের অযোগ্য।” কাজেই চলমান সংকটের সমাধান না হলে সুদান বিভক্ত হয়ে যেতে পারে। কারণ উভয় জেনারেল-ই জাতিগত বিভাজন সৃষ্টি করে চলেছেন।
রাজনৈতিক ও সামরিক ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ এবং নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সুদানের এই গৃহযুদ্ধ, -দুই ব্যক্তির উচ্চাকাঙ্খা পূরণের জন্য সুদানের জনগণকে ভারী মূল্য দিতে হচ্ছে, এটি একটি ট্র্যাজেডি।
সূত্র : দ্য কনভারসেশন, দ্য গার্ডিয়ান, বিবিসি নিউজ, অ্যাসোসিয়েট প্রেস, সিএনবিসি নিউজ, ভয়েস অব আমেরিকা নিউজ, আল-জাজিরা।
লেখক : আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক।