ঘুষের বিনিময়ে সেবা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৩, ১:৪৭:৫৫ অপরাহ্ন

সে ব্যক্তি মুমিন নয়, যে নিজে তৃপ্তি সহকারে আহার করে, অথচ তার প্রতিবেশি অনাহারে থাকে। -আল হাদিস
ঠেকানো যাচ্ছে না ঘুষ-দুর্নীতি। বরং বেড়ে চলেছে।প্রায় সব সরকারি অফিসেই অনেকটা রাখঢাক ছাড়াই ঘুষের আদান প্রদান চলছে। ঘুষ দেয়া বা নেয়া যেন বর্তমান সমাজে এক অনিবার্য বিধান হয়ে দাঁড়িয়েছে । ঘুষের শক্তি অনেক।একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে বলা হয়, সরকারি সেবা গ্রহণকারিদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মানুষকেই ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হচ্ছে। ভারতে এই হার ৩৯ শতাংশ; এশিয়ার মধ্যে যা সর্বোচ্চ। ঘুষ লেনদেন তালিকায় এশিয়ায় সবচেয়ে নিচে রয়েছে জাপান ও মালদ্বীপ। দু’টি দেশে মাত্র দুই শতাংশ মানুষ ঘুষ দিয়ে কাজ আদায় করে।
সরকারি অফিসে সেবা প্রাপ্তি নাগরিক অধিকার। এ অধিকার অনেকটাই হরণ করেছে ঘুষ-দুর্নীতি। পরিসংখ্যানের তথ্য হচ্ছে ,দেশে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘুষ লেনদেন হয়। আমাদের দেশে লোকে ঘুষ দেয়, যাতে সুবিধেমতো আইন ভাঙতে পারে। আর সহজে মানুষ ঘুষ দিতে পারে তাই দেশে আইনও ভঙ্গ হয় বেশি। আবার ন্যায্য সেবা পেতে জনগণকে ঘুষ দিতে হয়। জনগণকে সেবা পেতে হয় যদি ঘুষের বিনিময়ে, এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে। জরিপে দেখা গেছে, প্রতি চারজনে তিনজন মনে করে দুর্নীতি এ দেশে প্রধান সমস্যা।আর পৃথকভাবে বললে বাংলাদেশের ৭২ শতাংশ মানুষই মনে করে দুর্নীতিই দেশের প্রধান সমস্যা। তার মানে ২৪ শতাংশ মানুষকে সরকারি অফিসে দিতে হয় ঘুষ, আর ৭২ শতাংশ মানুষ মনে করে সরকারের দুর্নীতিই দেশের প্রধান সমস্যা। এই তথ্যকে যদি সঠিক বলে ধরে নেয়া যায়, তবে তো সেটা একটা ভয়ংকর বিষয়। কিন্তু বাস্তবতা আরও বেশি নির্মম। জরিপে যে তথ্যই বেরিয়ে আসুক, বাস্তবে তার চেয়ে বেশি আগ্রাসী রূপ নিয়েছে ঘুষ-দুর্নীতির চেহারা।সরকারি অফিসে ঘুষ দিয়ে কাজ করাতে হয় শতকরা ২৪ জন নয়, তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে। আর সেই সঠিক তথ্যটি জরিপে বেরিয়ে আসবে না; কারণ যারা ঘুষ প্রদান করে তারা সবাই তা স্বীকার করে না। অনেকে মনে করে- ঘুষ দিয়ে যদি নীরবে নিভৃতে কাজটি আদায় করা যায়, তবে সেটা কাউকে জানিয়ে কী লাভ? আমাদের ভাগ্যের লিখন যে, এভাবেই দিনের পর দিন জরিপে বেরিয়ে আসবে ঘুষ-দুর্নীতি বৃদ্ধির খতিয়ান আর সরকারি অফিস আদালতের দুর্নীতিবাজ কর্মচারির পকেট ভারি হতে থাকবে ঘুষের টাকায়।
সরকারি চাকরিজীবিদের মধ্যে ঘুষ দুর্নীতির মাত্রার উর্ধ্বগতি থামানো যাচ্ছে না। সরকার বেতন ভাতা বৃদ্ধি করেছে সরকারি কর্মচারিদের ঘুষ দুর্নীতি বন্ধের আশায়। কিন্তু যাদের রক্তে মিশে গেছে ঘুষ আর সরকারি অর্থ সম্পদ চুরির নেশা, তারা তো এই ‘সামান্য’ বেতন ভাতা বৃদ্ধিতেই হুট করে সেই পথ ছেড়ে আসবে না। কারণ তাদের চাই কাড়ি কাড়ি টাকা। তবে তাদের এই ঘুষ আর সরকারি সম্পদ ভক্ষণ করার জন্য হাঙ্গর-কুমিরের মতো হা করে থাকা মুখও বন্ধ করা সম্ভব। তবে তার জন্য দরকার কঠোর পদক্ষেপ।