ভয়ঙ্কর মাদক আইস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ মে ২০২৩, ১:৫১:২৬ অপরাহ্ন

ঝরণা বেগম
আমাদের মতো দরিদ্র দেশে নতুন উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভয়ঙ্কর মাদক আইস। ইয়াবার চেয়েও ক্ষতিকর এই মাদক ক্রিস্টাল ম্যাথ নামেও পরিচিত। দেশে আইসের চাহিদা তৈরি হওয়ায় চোরাই পথে বিপুল পরিমাণে এই মাদক দেশে আসছে। মিয়ানমার থেকে চোরাই পথে এই মাদক ইয়াবা ব্যবসায়ী লোকজনরাই নিয়ে আসছেন।
দেশে ৩৬ কেজি আইস এ বছরের প্রথম ৪ মাসে উদ্ধার হয়েছে। তথ্যটি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের। ২০১৯ সালের প্রথম দিকেও আমাদের দেশে অপ্রচলিত মাদক ছিল আইস। এখন দেখা যাচ্ছে, ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোর মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা এক সময়ের অপ্রচলিত মাদক আইসের প্রতি ঝুঁকছে। আর এ কারণে, এখন আইস নিয়ে আসতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করছেন। তাদের ধারণা ইয়াবার চেয়েও আইস বিক্রিতে লাভ বেশি।
বাংলাদেশের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ফরেনসিক ল্যাবের প্রধান রাসায়নিক পরীক্ষক দুলাল কৃষ্ণ সাহা প্রথম আলোকে বলেন, দেশে আইসের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ হচ্ছে, ইয়াবাতে ম্যাথ অ্যামফিটামিন (এক ধরনের রাসায়নিক উপাদান) থাকে দশ থেকে পনেরো শতাংশ। আর আইসে থাকে ৯৬ শতাংশ। আইসের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাওয়ার কারণ মূলত এই মাদক অন্যান্য মাদকের চেয়ে একটু স্মার্ট। কারণ, এটা সামান্য পরিমাণে সেবন করলে সাময়িকভাবে সেবনকারীর মধ্যে শারীরিক ও মানসিক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। আর এ জন্য মাদকসেবীরা বর্তমানে আইসকে প্রথম পছন্দের তালিকায় রাখে। ঢাকা অঞ্চলের উপপরিচালক পর্যায়ের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, এক গ্রাম আইস ঢাকায় বিক্রি হয় দশ থেকে বারো হাজার টাকায়। তাদের কাছে আইস বেশ জনপ্রিয়, যারা উচ্চবিত্ত পরিবারগুলোর মাদকসেবী। ভয়ঙ্কর এই মাদক আইস মূলত মিয়ানমার থেকে আসছে। ইয়াবার চালান যে পথে ঢুকছে, সেই পথে ঢুকছে আইসও।
নৌপথ ও দুর্গম পাহাড়ের কমপক্ষে ১৫ রুট দিয়ে দেশে আইস আসছে। আসলে দীর্ঘদিন ধরে যারা ইয়াবার চালান নিয়ে আসছে, তাদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে আইসের চালানেও। আর এসব মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোরও। কক্সবাজার ও টেকনাফে কর্মরত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে আইসের চালান নিয়ে আসছে নবী হোসেন নামের একজন রোহিঙ্গা এবং তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠা একটি চক্র। ২০২২ সালের মার্চ মাসে নবী হোসেনকে জীবিত অথবা মৃত ধরিয়ে দিতে বিজিবির পক্ষ থেকে ১০ লক্ষ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়।
আইসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে চিকিৎসরা বলছেন, ক্রিস্টাল বা স্বচ্ছ কাচের মতো দেখতে এই মাদক সেবনে নিদ্রাহীনতা, স্মৃতিবিভ্রম, মস্তিষ্কবিকৃতিসহ নানা সমস্যা দেখা দেয়। এটি দীর্ঘদিন সেবনে ওজন কমে যাওয়া, কিডনি ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা, বিষণœতা, স্ট্রোকসহ নানা রকম শারীরিক ও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়।
২০১৮ সালের ৪ মে মাদকের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনিগুলো সর্বাত্মক অভিযান শুরু করে ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানে। এর এক বছরের মধ্যে ‘বন্দুক যুদ্ধে’ নিহত হন ৩৫৮ জন মাদক ব্যবসায়ী। এদের মধ্যে পুলিশের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে ১৬৯ জন, র্যাবের সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে ১০৬ জন এবং বিজিবির সঙ্গে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন ১২ জন। বাকি ৭১ মাদক ব্যবসায়ী নিজেদের মধ্যে বন্দুক যুদ্ধে নিহত হন বলে তখন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছিল। এই অভিযানে কক্সবাজার জেলাতেই শুধু নিহত হন ৯৫ জন।
আমরা করবো জয়। আমরা করবো জয় একদিন! ও হো বুকের গভীরে আমরা জেনেছি, আমরা করবো জয় একদিন! মাদকের বিরুদ্ধে এটা হোক নতুন স্লোগান। আর মুক্ত হোক আমাদের তরুণ-তরুণীরা মাদকের অভিশাপ থেকে। অন্ধকারে জ্বলে উঠুক নতুন আশার আলো। মাদক অথবা মাদক জাতীয় দ্রব্যসেবী ভাই অথবা বোন অথবা বন্ধুদের বলছি- ডাকে পাখি, খুলো আঁখি/ দেখো সোনালী আকাশ!/ বহে ভোরেরও বাতাস!/ হ্যাঁ, বন্ধুরা ভোরের বাতাসে একটু সোনালী আকাশটা একবার দেখো না প্লিজ।
লেখক : আইনজীবী।