উচ্চমূল্যস্ফীতির দেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৮ মে ২০২৩, ২:১৩:৪৭ অপরাহ্ন
আলোতে একাকি হাঁটার চেয়ে বন্ধুকে নিয়ে অন্ধকারে হাঁটা উত্তম। -হেলেন কিলার
খাদ্য উচ্চমূল্যস্ফীতির শীর্ষ দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ। বছর জুড়েই উচ্চমূল্যস্ফীতি রয়েছে দেশে। বিগত এক বছরের ব্যবধানে খাদ্যপণ্যের দাম গড়ে ৩৩ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক বিশ্লেষণে একথা বলা হয়েছে। তারা বলছে, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দরিদ্র্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে খাদ্যের জন্য দরিদ্র্য মানুষের ব্যয় বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির রীতিমতো প্রতিযোগিতা চলছে বিভিন্ন দেশে। কথাটি সারা বিশ্বের জন্য প্রযোজ্য।
বিশ্বের অন্তত ৫৮টি দেশের ২৫ কোটি ৮০ লাখ মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির শিকার। বিশেষ করে আফ্রিকা, উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলো, দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলো বেশি ভুগছে। অর্থাৎ বিশ্বের নিম্ন, মধ্য বা উচ্চ আয়ের প্রায় সব দেশেই উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশেও রয়েছে চরম মূল্যস্ফীতি। সরকারি হিসাবে গত এপ্রিলে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ, মার্চে যা ছিলো ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২২ সালের মে মাসেও দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ছিলো ৮ দশমিক ৩ শতাংশ। শুধু তাই নয়, আগামি কয়েক বছর বাংলাদেশের অর্থনীতি প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘ। তারা বলেছে, চলতি অর্থবছরসহ আগামি অর্থবছরে দেশের প্রবৃদ্ধির হার কমবে। একই সঙ্গে বাড়বে মূল্যস্ফীতির চাপ। তাদের মতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে দেশের গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়াতে পারে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ এই অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির চেয়ে মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকবে। সত্যি বলতে কি, ২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির মূল শঙ্কার জায়গা ছিলো মূল্যস্ফীতি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোসহ বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতির সূচক রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। মূল্যস্ফীতির যখন এই অবস্থা, তখন মানুষের আয়ও বাড়ছেনা; অনেক ক্ষেত্রে আয় কমছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, মানুষের জীবনযাত্রার খরচ বাড়লেও সেই তুলনায় মজুরি বাড়েনি। গত ডিসেম্বর মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিলো ৭ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থাৎ জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে প্রায় পৌনে ৯ শতাংশ। মানুষ এখন খরচের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আয় করতে পারছেন না। কমছে তাদের ক্রয়ক্ষমতা।
এতোসব দুঃসংবাদের মধ্যেও কিঞ্চিৎ আশার বাণী দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞগণ। সেটা হলো বিশ্ববাজারে খাদ্যের দাম কমতির দিকে। ভুট্টা এবং গমের দাম যথাক্রমে ১৪ ও ১১ শতাংশ কমেছে। তবে চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমাদের নিজস্ব সম্পদ বৃদ্ধির দিকেই ঝুঁকতে হবে। বিশেষ করে, খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোই হচ্ছে এখন সবচেয়ে জরুরি। সেই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে অনিয়ম দুর্নীতি, সরকারি সম্পদ লুটপাটের মহোৎসব।