সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের ট্রেন চলাচল ১৫ ঘণ্টা পর স্বাভাবিক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৩, ৪:০১:৩৫ অপরাহ্ন

লাউয়াছড়ায় উদয়ন এক্সপ্রেস লাইনচ্যুত ॥ তদন্ত কমিটি গঠন
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা : মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ট্রেন লাইনচ্যুত হবার প্রায় ১৫ ঘণ্টা পর সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে ট্রেন চলাচলা স্বাভাবিক হয় বলে জানিয়েছেন ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার কবির আহমেদ।
গতকাল শনিবার ভোর ৫টায় লাউয়াছড়ার আমতলি এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে সিলেট অভিমুখী আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেস (৭২৩)-এর ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। ঝড়ে রেল লাইনে উপড়ে পড়া গাছের সাথে ধাক্কা লেগে ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়। ফলে সিলেটের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ প্রায় ১৫ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। এ কারণে ট্রেনে থাকা যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। ট্রেন লাইনচ্যুতির ফলে চারটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত না হলেও কিছু যাত্রী স্থানীয় হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনটি উদ্ধারে সকাল সাড়ে ৯টায় কুলাউড়া ও আখাউড়া স্টেশন থেকে ২টি রিলিফ ট্রেন ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। তবে, দুপুরে তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করার পরপরই ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনের ইঞ্জিন ও বগি উদ্ধার কাজ শুরু করা হয়।
আন্তঃনগর উদয়ন এক্সপ্রেসের সহকারী পরিচালক মো. সোহেল রানা জানান, ঝড়ে রেললাইনের ওপর বিশালাকৃতির একটি চাপরাশি গাছ পড়ে ছিল। ট্রেনটি সেই গাছে ধাক্কা দিলে এর ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি লাইনচ্যুত হয়। অবশ্য, এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
ট্রেনের নিরাপত্তায় থাকা রেলওয়ে পুলিশের এএসআই ফখরুল ইসলাম জানান, গতকাল শনিবার ভোর ৫টার দিকে হঠাৎ করে শব্দ করে ট্রেনটি ঝাকুনি খায়। ফলে ইঞ্জিনসহ ৩টি বগি গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে লাইনচ্যুত হয়। তাৎক্ষণিক দ্রুত গতিতে দুর্ঘটনাকবলিত থাকা যাত্রীদের উদ্ধার করা হয় বলে জানান তিনি। ইঞ্জিনের পেছনের খাবার গাড়ি ও ১টি বগির যাত্রীরা শায়েস্তাগঞ্জ ও শ্রীমঙ্গল স্টেশনে নেমে যাওয়ায় এতে হতাহতের কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান এ পুলিশ কর্মকর্তা।
ট্রেনে থাকা যাত্রী রাহাত আহমেদ ও সিরাজ মিয়া জানান, ভোরের দিকে ট্রেনটি বড় আকারে ঝাঁকুনি খাবার সময় ট্রেনের যাত্রীরা তাদের আসনে ঝিমুচ্ছিলেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে যাত্রীরা চিৎকার ও হুড়োহুড়ি করতে থাকেন। ফলে কয়েকজন যাত্রী সামান্য আঘাত পান । তবে বড় কোন ক্ষতি হয়নি।
দুর্ঘটনার কারণে ট্রেন চলাচল বিলম্বিত হওয়ায় যাত্রীরা স্ব উদ্যোগে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য শ্রীমঙ্গল ও ভানুগাছ যান। কিন্তু, পাহাড়ী এলাকার কারণে যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। বিশেষ করে শিশু ও মহিলা যাত্রীদের কষ্টের সীমা ছিল না।
সিলেট থেকে ট্রেন যাত্রীকে নিতে আসা ব্যবসায়ী সারোয়ার আলম জানান, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেনে আমার পিতা-মাতা ছিলেন। ফোনে খবর পেয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসি। সুস্থ অবস্থায় তাদেরকে বাড়ি নিতে পেরে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন এ ব্যবসায়ী।
ভানুগাছ রেলওয়ে স্টেশন মাষ্টার কবির আহমদ জানান, ইঞ্জিন ও বগিগুলো সরিয়ে লাইন মেরামত করতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লেগেছে। সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সিলেটের সাথে সারাদেশের রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছে। সিলেটগামী আন্তনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেন শায়েস্তাগঞ্জ থেকে ছেড়ে এসেছে।
এর আগে ৭৭৪ নম্বর ঢাকাগামী কালনী এক্সপ্রেস, ৭১৮ নম্বর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ও ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা সিলেটগামী ৭১৭ নম্বর জয়ন্তিকা ও ৭৭৩ নম্বর কালনী এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। শ্রীমঙ্গল স্টেশনে আটকা পড়া পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনের সিলেট যাত্রা বাতিল করা হয়। তবে বিকেলে শ্রীমঙ্গল স্টেশন থেকে পারাবত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় বলে তিনি জানান।
এদিকে, শমশেরনগরের সহকারী স্টেশন মাস্টার উত্তম দেব জানান, লাউয়াচড়ায় রেল দুর্ঘটনার ফলে সকালের ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনি এক্সপ্রেস ট্রেনের এই স্টেশনের যাত্রীদের টিকিটের টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে।
৫ সদস্যদের তদন্ত কমিটি গঠন: বাংলাদেশ রেলওয়ে দুর্ঘটনা তদন্তে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে । রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা খায়রুল কবিরকে আহবায়ক করে গঠিত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (লোক), বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী (ক্যারেজ ও ওয়াগন), বিভাগীয় প্রকৌশলী (২) ঢাকা, বিভাগীয় সংকেত ও টেলি যোগাযোগ প্রকৌশলী। কমিটির সদস্যরা বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (ঢাকা) শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে গতকাল শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।