নির্বাচন করবেন না মেয়র আরিফ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২১ মে ২০২৩, ৪:৪৪:৪৪ অপরাহ্ন
নাগরিক সমাবেশে ঘোষণা ॥ আরিফ কখনো উকিল আব্দুস সাত্তার হবে না ॥ আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা
স্টাফ রিপোর্টার : সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি এই নির্বাচনকে ‘প্রহসনে’র নির্বাচন উল্লেখ করে বলেন, এই মুহূর্তে সিলেট তথা সারাদেশেই নির্বাচনী কোন পরিবেশ নেই। আপত্তি সত্ত্বেও সিলেটে ইভিএমে ভোটগ্রহণের আয়োজন করা হয়েছে। অথচ সিলেটের মানুষ ইভিএমের সাথে একেবারেই অপরিচিত। এখানে ইভিএম নিয়ে আসাই ‘ভোট ডাকাতি’র ইঙ্গিত। বর্তমান নির্বাচন কমিশনও সুষ্ঠু ভোট চায় না। তারা ‘ডিজিটাল ভোট ডাকাতি’ চায়। তিনি নগরবাসীকে ভোট বর্জনের আহবান জানিয়ে নিজেও প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন।
গতকাল শনিবার ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রি মাঠে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি। এর আগে হযরত শাহজালাল (রহ:) এর মাজার ও নিজের বাবার কবর জিয়ারত করেন আরিফুল হক চৌধুরী। আরিফুল হক চৌধুরী তার বাসা থেকে পায়ে হেঁটে রওয়ানা দেন। প্রথমে কয়েকজন কর্মী সমর্থক থাকলেও দরগাহে শাহজালাল (রহঃ) এর মাজার পৌঁছা পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক কর্মী সমর্থক তার সঙ্গী হন। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রেজিস্ট্রি মাঠে নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখেন তিনি।
মাঠভর্তি দর্শকের উপস্থিতিতে সমাবেশে একক বক্তব্যে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘যারা মনে মনে আমাকে উকিল আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন উকিল আব্দুস সাত্তার) বানানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আজ হতাশ হয়েছেন। আরিফুল হক কখনো উকিল আব্দুস সাত্তার হবে না। আমি আপনাদের আরিফ, আমি বিএনপির আরিফ। আমার নেত্রী খালেদা জিয়া, নেতা তারেক রহমান, আমার মা ও মরহুম গাছবাড়ি হুজুরের পরামর্শ-নির্দেশে আমি আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি না। তাদের আদেশই আমার কাছে শিরোধার্য।
নাগরিক সভায় মেয়র আরো বলেন, বিএনপি আমার অস্থিমজ্জায়। ছাত্রজীবনে জিয়াউর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে বিএনপির সাথে যুক্ত হয়েছিলাম। আজীবন বিএনপিই হবে আমার শেষ ঠিকানা। এক পর্যায়ে আবেগাপ্লুত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে মেয়র আরিফ বলেন, গত কয়েকদিন ধরে নগরের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ আমার বাসায় গিয়ে আমাকে প্রার্থী হওয়ার অনুরোধ করছেন। তাদের ‘এতিম অবস্থায়’ ফেলে না যাওয়ার অনুরোধ করছেন। আমি তাদের সকলের কাছে, এই নগরবাসীর কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন। তবে মেয়র না থাকলেও এই নগরবাসীর যে কোন প্রয়োজনে, সকল ভালো কাজে এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রামে আমি সবসময়ই থাকবো।
প্রার্থী না হওয়ার প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে মেয়র আরো বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনেও নানা ভয়, প্রতিবন্ধকতা ও কারচুপি উপেক্ষা করে এই নগরবাসী আমাকে বিজয়ী করে এনেছেন। তারা ফলাফল ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত ভোটকেন্দ্র ছাড়েননি। কিন্তু এবার প্রেক্ষাপট ভিন্ন। এবার আপনারা চাইলেও আমাকে বিজয়ী করতে পারবেন না। কারণ এবারের ভোট হবে ইভিএমে। এবার আপনারা এক জায়গায় ভোট দেবেন, কিন্তু তা অন্য বাক্সে জমা হবে।
নগরবাসীকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন আসলে নির্বাচন নয়, এটি প্রহসন। তাই আমার দলীয় নেতাকর্মীসহ সকল নাগরিককে এই নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানাই। দয়া করে আপনারা কেউ ভোটকেন্দ্রে যাবেন না। তিনি বলেন, আমি বিএনপির সিদ্ধান্তের সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমি প্রহসনের নির্বাচনে প্রার্থী হবো না।’
বর্তমান মেয়র আরিফুল হক এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হবেন কিনা-এ নিয়ে তফসিল ঘোষণার পর থেকেই শুরু হয়েছিলো জল্পনা কল্পনা। আরিফের বিভিন্ন কর্মকান্ডে নির্বাচন নিয়ে তার আগ্রহও প্রকাশ পায়। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে ছিলো। এ অবস্থায় দল আর নির্বাচন-এই দুটির মধ্যেই একটিকে বেছে নিতে হতো মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। এছাড়া গত ১ মে শ্রমিক দলের সমাবেশে ২০ মে প্রার্থীতা নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মেয়র। তাই গতকাল শনিবারের এই সমাবেশ ঘিরে আগ্রহ ছিলো সবার।
শুক্রবার রেজিস্ট্রি মাঠে নাগরিক সমাবেশ আয়োজনে পুলিশ বাধা দিলে আরিফুল হক চৌধুরী প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান ধর্মঘটে গিয়েছিলেন। পরে পুলিশের পক্ষ থেকে নাগরিক সমাবেশের অনুমতি দিলে তিনি মাঠে মঞ্চ তৈরির ব্যবস্থা করেন। গতকাল শনিবার দুপুরের পর থেকেই সমাবেশস্থল রেজিস্ট্রি মাঠে জড়ো হতে শুরু করেন নানা শ্রেণির মানুষ। মিছিল নিয়েও আসেন অনেকে। বিএনপির কেন্দ্রীয় অনেক নেতাও এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে সমাবেশে নির্বাচন না করার ঘোষণা শেষে মঞ্চ থেকে নেমে আসলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৩ মে এই নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। মনোনয়নপত্র বাছাই ২৫ মে ও প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১ জুন। আগামী ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ভোট হবে।