বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২২ মে ২০২৩, ৪:০৮:৪৬ অপরাহ্ন
সময় দ্রুত চলে যায়, এর সদ্ব্যবহার যারা করতে পারে, তারাই সফল ও সার্থক বলে পরিচিত হয়। -বেকেন বাওয়ার।
আজ বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হচ্ছে। মূলত জাতিসংঘের আহ্বানে দিবসটি পালন করা হয়। এই দিবসটির সূচনা হয় ১৯৯২ সালে। রাষ্ট্র, সরকার ও পৃথিবীর বড় বড় সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে ব্রাজিলের রিও তে শীর্ষ ধরিত্রী সম্মেলনে জীববৈচিত্র্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আর তখন থেকেই প্রতি বছর মে মাসের ২২ তারিখ বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়। মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতি মিলিয়েই আমাদের পৃথিবী। বিশ্ববাসির ব্যবহারের জন্য একটিমাত্র পৃথিবী, আর মানুষ এটিকে এতোটাই নির্দয়ভাবে ব্যবহার করছে যে, বর্তমানে সমস্ত বিশ্ব ব্যবস্থাই হুমকির দরজায় এসে দাঁড়িয়েছে। এই হুমকির অন্যতম কারণ হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হওয়া। জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের নানা আত্মঘাতি কর্মযজ্ঞ চলছে আমাদের দেশে। তাই বিশ্ব জীববৈচিত্র্য দিবস পালন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর সৌন্দর্যের প্রধান অনুসঙ্গই হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। জীববৈচিত্র্যই পৃথিবীর সবুজ জীবের উপযোগিতা বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু বিভিন্ন কারণে জীববৈচিত্র্য চরমভাবে হুমকিতে পড়ে পৃথিবীর বৈচিত্র্যময়তাকেই ধ্বংস করছে। শিল্পের বহুমুখি বিকাশের সাথে সাথে বিভিন্ন দেশে যে হারে জল, বায়ু, মাটি, সবুজ এবং প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ সমূহের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, তা পরিবেশ দূষণের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছে বিশ্বময়। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই করুণ। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি বাংলাদেশে একশ’ আট প্রকারের উদ্ভিদ ও প্রাণি-প্রজাতি বিলুপ্তির পথে। এছাড়া ৩৩ প্রজাতির পাখি, ৩৩ প্রজাতির স্তন্যপায়ি প্রাণি, ২১ প্রজাতির সবুজ গাছ এবং ২১ প্রজাতির মাছ এখন বিপন্ন। এছাড়া, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের ক্ষেত্রে নদীর মুমূর্ষতাও একটি বড় কারণ। এক সময় বাংলাদেশে দেড় হাজারের মতো নদী ছিলো। এর মধ্যে ১৭টি নদী ইতোমধ্যেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। আর একশ’ ৫৮টি নদী এখন রুগ্ন। আটটি নদী বিলুপ্তির পথে। বর্তমানে দেশে মাত্র একশ’ নদী রয়েছে, যেগুলোতে স্বাচ্ছন্দ্যে নৌ চলাচল করতে পারে।
জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের সচেতনতা বাড়াতে হবে। জীববৈচিত্র্য আমাদের অস্তিত্বের সুরক্ষা। এটি অরক্ষিত করে আমরা সুস্থ-স্বাভাবিকভাবে টিকে থাকতে পারি না। এজন্য আমাদের ঐতিহ্যকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। এটা মনে রাখতে হবে যে, এই মাটি, ভূমি, বাতাস, পানি সবকিছুরই অংশীদার শুধু মানুষই নয় অপরাপর সব প্রাণি ও প্রজাতি। ঐতিহ্যের অহংকার জাতিসত্তার গর্ব দেশাত্মবোধের চর্চা আর বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যাওয়ার তাড়নাই আমাদের পরিবেশ ও সর্বপ্রকার বৈচিত্র্য সংরক্ষণে প্রেরণার উৎস হতে পারে। এসবের মধ্য দিয়েই আমাদের বস্তুতান্ত্রিকতা ধারণ করতে হবে, আর সংরক্ষণ করতে হবে জীববৈচিত্র্য।