ছাতকে নদীভাঙনে ঝুলে আছে গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর পাকা সড়ক
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ মে ২০২৩, ৫:৩৭:১৩ অপরাহ্ন
গোবিন্দগঞ্জ(ছাতক) থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা ঃ ছাতকে নদীভাঙনের কবলে পড়ে বিলীন হতে চলেছে গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়ক। সড়কের অনেক জায়গায় ভাঙনের ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বর্তমানে সড়কের একটি বিশাল অংশের পাকা ঝুলে আছে। যেকোন মুহূর্তে এ সড়কটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়তে পারে। নদীভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভুক্তভোগী এলাকাবাসী একাধিকবার মানববন্ধন ও যথাযথ কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করেছেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও, ছৈলা-আফজালাবাদ এবং দোলারবাজার ইউনিয়নের বুক চিরে বয়ে যাওয়া বটেরখাল নদীরভাঙনে ইতোমধ্যেই বহু বসতবাড়ি, ফসলি জমি, গাছ-পালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। কিন্তু নদীভাঙন রোধে এখনও কোন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। ফলে নদীভাঙনের ভয়াবহতায় শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষ।
নদীর তীর সংলগ্ন একটি পাড়ায় বসবাসকৃত ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন ইতোমধ্যেই বসতভিটা হারিয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছেন। প্রায় অর্ধকিলোমিটার পাকা সড়ক গিলে খেয়েছে খড়¯্রােতা বটেরখাল নদী। ফসলি জমি, অগণিত বাঁশ ঝাড় ও গাছ-গাছড়া ইতোমধ্যেই চলে গেছে নদীগর্ভে। নদীভাঙনের হুমকির মুখে রয়েছে একটি মাদ্রাসা, একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শতাধিক পাকা-আধাপাকা বাড়ি, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
এ ছাড়া আন্তঃ ইউনিয়ন গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কের আরো প্রায় অর্ধ কিলোমিটার সড়ক নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার প্রহর গুনছে। সড়কটি নদীভাঙনের শিকার হলে অন্তত ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষকে যাতায়াতের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে।
স্থানীয়রা জানান, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জ ডিগ্রি কলেজের সম্মুুখ হতে বিনোদনগর পর্যন্ত পাকা সড়ক দিয়ে এলাকার ৭৫টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াত। এ সড়ক অন্যান্য সড়কের সাথে সংযুক্ত হয়ে উপজেলা সদর, জেলা ও বিভাগের সাথে সহজ সড়ক যোগাযোগ সৃষ্টি করেছে। অপর দিকে, গোবিন্দগঞ্জ বাজার ও সড়কের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে বটেরখাল নামক নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি শান্ত থাকলেও বর্ষায় ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। খর¯্রােতা বটেরখাল নদীর ভাঙনের মুখে পড়েছে গোবিন্দগঞ্জ বাজারসহ গোবিন্দনগর গ্রাম। গোবিন্দগঞ্জ বাজার থেকে গোবিন্দনগর মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা পড়ে ভয়াবহ ভাঙনের মুখে। হাফিজ আব্দুল গণি তালুকদার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও এলাকার বাসিন্দা জগদীশ চন্দ্র দত্ত জানান, জনস্বার্থে দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কটি সংস্কারের প্রয়োজন। সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী ও এলাকার হাজারো মানুষ নিয়মিত যাতায়াত করছে এ সড়ক দিয়ে। বর্তমানে নদীভাঙনের মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর মাদ্রাসা, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ গোবিন্দনগর গ্রাম। বটেরখাল নদীর ভয়াবহ ভাঙনের হাত থেকে মাদ্রাসা, স্কুল, গোবিন্দগঞ্জ বাজার, গোবিন্দনগর গ্রাম রক্ষার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। গোবিন্দনগর গ্রামের মুজিবুর রহমান জানান, বর্তমানে যেখানে এখন নদী দেখা যাচ্ছে। এখানে ছিল এলাকার মানুষের ফসলি জমি, বসতঘর ও গাছ-গাছড়া। ভাঙন রোধ না করলে গোটা এলাকা এক সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। গোবিন্দনগর মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মাওলানা আবু সালেহ জানান, নদীভাঙনের হুমকির মুখে পড়েছে গোবিন্দনগর মাদ্রাসা। মাদ্রাসার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া গোবিন্দগঞ্জ-বিনোদনগর সড়কটি বিভিন্ন অংশে নিচের মাটি সরে গেছে। বিপজ্জনক অবস্থায় এ সড়ক দিয়ে এখন যান চলাচল বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সড়কটি রক্ষা করা হলেই মাদ্রাসা, স্কুলসহ গোটা এলাকা রক্ষা হবে। ছাতক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল জানান, বটেরখাল নদীর ভাঙনে ভিটে-মাটি হারা ঋষি সম্প্রদায়ের লোকজন মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রায় অর্ধ কিমি পাকা সড়ক চলে গেছে নদীগর্ভে এবং আরো প্রায় অর্ধ কিমি সড়ক বিলীন হওয়ার উপক্রম। নদীভাঙন রোধ করা না হলে এ এলাকার ভয়াবহ ক্ষতি সাধন হতে পারে।