মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ফারুক আহমদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২৩, ২:১২:২৮ অপরাহ্ন

ফখরুল ইসলাম মাসরূর
মানুষ চিরঞ্জীব নয় বলেই মানুষ মরে। আর এটা শুধু প্রকৃতির বাস্তবতা নয়, বরং পবিত্র কোরআনের অমোঘ ঘোষণা, ‘প্রত্যেক প্রাণীকে অবশ্যই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’
পৃথিবীতে কত রথী-মহারথীর আগমন ঘটেছে। দাপিয়ে বেড়িয়েছেন গোটা পৃথিবী। কিন্তু বেলা শেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেই হয়েছে। কেউ কালের অতলান্তে বিস্মৃত হয়েছেন। কেউ আবার আপন কর্মে স্বমহীমায় স্মরণীয় ও যুগ-যুগ ধরে মানুষের হৃদয় রাজ্যে অম্লান রয়েছেন।
তাদেরই অন্যতম সিলেট জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামের মরহুম ফারুক আহমদ। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার অবিভক্ত ইসলামপুর ইউনিয়নের দুই দুইবারের নির্বাচিত সাবেক চেয়ারম্যান ছিলেন। একজন আস্থাভাজন, বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল ছাতক-কোম্পানীগঞ্জের প্রায় সর্বত্রই। তিনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। ২৪ মে ২০০০ ইং দিবাগত রাত ১২.১৪ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর।
মরহুম ফারুক আহমদ ১৯৪৬ সালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মরহুম ইদ্রিস আলী মাস্টার। তিনি শিক্ষাবিদ ও সমাজসেবক ছিলেন। মরহুম ফারুক আহমদ ৫ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে ছিলেন দ্বিতীয়। স্বভাবতই তিনি ছিলেন দুঃখী মানুষের একান্ত আপনজন। তিনি ছিলেন খুবই সজ্জন ও হৃদয়বান ব্যক্তিত্বের। যে কেউ তাঁর কাছে আসলে স্নেহ ভালোবাসায় সিক্ত হতো। ভক্তি-শ্রদ্ধায় বরিত হতো। গরিব দুঃখী মানুষের সেবা করার লক্ষ্যে ইসলামপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন প্রদান করলে গণমানুষের প্রাণের ভালোবাসায় সিক্ত হন। নির্বাচিত হন বিপুল ভোটের মাধ্যমে। টানা দু’বার চেয়ারম্যান হয়ে গণমানুষের সেবা ও খেদমত করতে নিজেকে বিলিয়ে দেন অকাতরে। ১৯৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের সময় তিনি স্ব-উদ্যোগে অত্র এলাকায় উদার হস্তে সার্বিক সহায়তা করেন। অধিকন্তু তিনি ছিলেন একজন অনন্য শিক্ষানুরাগী। পাড়ুয়া আনোয়ারা উচ্চবিদ্যালয় এন্ড কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। তিনি উক্ত প্রতিষ্ঠানের সভাপতির পদও অলংকৃত করেছেন সগৌরবে। পাড়ুয়া নোয়াগাঁও ইসলামিয়া দাখিল মাদরাসার সহ সভাপতি হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ইসলামী শিক্ষার প্রচার প্রসারের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে তিনি একখন্ড জমি ওয়াকফ করতঃ প্রতিষ্ঠা করেন ভোলাগঞ্জ মক্তব। আজ সেই মক্তব তিল-তিল করে উন্নত হয়ে রূপান্তরিত হয়েছে ইসলামী শিক্ষার প্রাণকেন্দ্র ভোলাগঞ্জ আরাবিয়া হাফিজিয়া ইসলামিয়া মাদরাসায়। আজ তাঁর আলোয় আলোকিত গোটা এলাকা। অত্র এলাকার উন্নতি অগ্রগতির লক্ষ্যে যখন যেখানে যা প্রয়োজন তা-ই করেছেন একনিষ্ঠভাবে। মরহুম ফারুক আহমদ ব্যক্তিজীবনে ছিলেন একজন সৎ নিষ্ঠা ও আদর্শবান পুরুষ। তাঁর কর্মজীবন ছিল অতীব বর্ণাঢ্য।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর ত্যাগ ও কুরবানী ছিল অপরিসীম। ভোলাগঞ্জ সাব-সেক্টরের সংগ্রাম কমিটির একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক ছিলেন। এই সাব সেক্টরের সদর দপ্তর ছিল তার নিজ বাড়ি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসাবে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট সামরিক ও বেসামরিক অনেকের সাথেই ছিল তাঁর সখ্যতা। ফলে সর্বত্রই তিনি ছিলেন সমধিক পরিচিত। আজও তিনি আমাদের কাছে স্মরণীয়।
আল্লাহ্ পাক তাঁকে মাফ করে জান্নাত নসীব করুন। আমীন।
লেখক : শিক্ষক, ভোলাগঞ্জ মাদরাসা।