সিসিক নির্বাচন ২০২৩
মেয়র পদে ১১ ও কাউন্সিলর পদে ৩শ’ ৭৬ জনের মনোনয়ন দাখিল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৪ মে ২০২৩, ৫:৩৪:২৩ অপরাহ্ন
নেতা-কর্মীদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন আনোয়ারুজ্জামান
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোট ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার শেষ দিন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহকারী সকল প্রার্থী মনোনয়পত্র জমা দেন। সাধারণ ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৩শ’ ৭৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। প্রার্থীদের পদচারণায় মুখর ছিলো রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। মেয়র পদে বিএনপির প্রার্থী না থাকায় অনেকটা উত্তাপহীন ছিলো পরিবেশ। আওয়ামী লীগ কর্মীরা ছিলেন উৎফুল্ল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কর্মী-সমর্থক নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি পরিকল্পিত নগরী গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়ের মিডিয়া সেল (সিটি নির্বাচন) কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন জানান, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় মঙ্গলবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়ন জমা দেন। এর মধ্যে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী হলেন- মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল), হাফিজ মাওলানা মাহমুদুুল হাসান (হাতপাখা) ও মো. জহিরুল আলম (পদ্মফুল)। আর স্বতন্ত্র হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা।
মেয়র পদে ১১ প্রার্থীর মধ্যে তিন জন প্রার্থী সোমবার মনোনয়নপত্র জমা দেন। গতকাল মঙ্গলবার বাকি ৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন।
মঙ্গলবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে আসেন। এ সময় দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতা-কর্মীকে সেখানে উপস্থিত দেখা গেছে। পরে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান। এ সময় তাঁর সঙ্গে নেতা-কর্মীরা সেখানে যান। এই নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে তিনি মনোনয়নপত্র জমা দেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সুজাত আলী রফিক, মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বিজিত চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রণজিত সরকার, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ, মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান, সাধারণ সম্পাদক মুশফিক জায়গিরদার, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাসসহ র্শীষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বের হয়ে সংবাদকর্মীদের মুখোমুখি হন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন, কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি। তিনি সিলেট জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ও এক কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়েছিলেন। অন্য যাঁরা ছিলেন তাঁরা কাউন্সিলর প্রার্থীসহ তাঁদের সমর্থক।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদির বলেন, ‘আমরা প্রার্থীকে পাঁচজনের বেশি মানুষ নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা না দিতে বলে আসছি। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিতে যখন এসেছিলেন, সে সময় কাউন্সিলর প্রার্থী ও সমর্থকেরাও উপস্থিত হয়েছিলেন।’
এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ লীগ নেতা মো. আবদুল হানিফ কুটু মনোনয়নপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, তাঁকে বলা হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় যেন পাঁচজনের বেশি লোক না থাকেন। তিনি নিয়ম মেনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। দুপুরে মনোনয়নপত্র জমা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। সর্বশেষ বিকেল ৪টার ঠিক আগ মুহূর্তে শাহাজাহান মাস্টার নামের এক প্রার্থী মেয়র পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, মেয়র পদে ১১জন প্রার্থী ছাড়া সাধারণ ওয়ার্ডে ২শ ৮৭ জন এবং সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৮৯ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন।
কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সংরক্ষিত (মহিলা) ১নং ওয়ার্ডে ২ জন, ২নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ৩ নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৪নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ৫নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ৬নং ওয়ার্ডে ২ জন, ৭ নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ৮নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ৯ নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ১০নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ১১নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ১২নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ১৩নং ওয়ার্ডে ১৩ জন ও ১৪নং ওয়ার্ডে ৬ জন।
অপরদিকে সাধারণ ওয়ার্ডে ১নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ২নং ওয়ার্ডে ২ জন, ৩নং ওয়ার্ডে ৪জন, ৪নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ৫নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৬নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ৭নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ৮নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ৯নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ১০নং ওয়ার্ডে ৬ জন, ১১নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ১২নং ওয়ার্ডে ২ জন , ১৩নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ১৪নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ১৫নং ওয়ার্ডে ৬ জন, ১৬ নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ১৭নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ১৮নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ১৯ নং ওয়ার্ডে ২জন, ২০ নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ২১নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ২২নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ২৩নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ২৪নং ওয়ার্ডে ৬ জন, ২৫নং ওয়ার্ডে ৫ জন, ২৬ নং ওয়ার্ডে ৪ জন, ২৭নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ২৮নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ২৯নং ওয়ার্ডে ১০ জন, ৩০নং ওয়ার্ডে ১৯ জন, ৩১নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ৩২নং ওয়ার্ডে ১০ জন, ৩৩নং ওয়ার্ডে ১৭ জন, ৩৪নং ওয়ার্ডে ১৭ জন, ৩৫নং ওয়ার্ডে ৩ জন, ৩৬নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৩৭নং ওয়ার্ডে ১৩ জন, ৩৮নং ওয়ার্ডে ৯ জন, ৩৯নং ওয়ার্ডে ৭ জন, ৪০নং ওয়ার্ডে ৮ জন, ৪১নং ওয়ার্ডে ১১ জন এবং ৪২নং ওয়ার্ডে ১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ২১ জুন সিলেট সিটির ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ মে মনোনয়ন ফরম বাছাই ও ১ জুন প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ। ২ জুন প্রতীক বরাদ্দ শেষে আনুষ্ঠানিক প্রচারণায় নামতে পারবেন প্রার্থীরা। সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। ৫৯ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই মহানগরীর ওয়ার্ড সংখ্যা ৪২টি। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬৩ ও নারী ২ লাখ ৩২ হাজার ৮৪২ জন। মোট কেন্দ্র ১৯০টি এবং ভোটকক্ষ ১হাজার ৩৬৪টি।
অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে নগরবাসীকে
দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে : আনোয়ারুজ্জামান
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে তিনি নগরীর মেন্দিবাগস্থ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান এবং রিটার্নিং অফিসারের কাছে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন। এরআগে তিনি বাসা থেকে বের হওয়ার সময় নেতাকর্মীদের নিয়ে মোনাজাত করেন। পরে গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, সেবার ব্রত নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের মেয়র পদে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমি মানুষের জন্য রাজনীতি করি, মানবসেবার জন্য রাজনীতি করি। আমি বিশ্বাস করি, সিলেটের সর্বস্তরের মানুষ আমাকে ভোট দিয়ে সবার জন্য কাজ করার সুযোগ করে দেবেন।
আনোয়ারুজ্জামান আরো বলেন, গত ১০ বছরের অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে সিলেটের অনেক ক্ষতি হয়েছে। নগরবাসীকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। মেয়র হিসাবে নির্বাচিত করলে অবশ্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব দুর্ভোগ লাঘব করা হবে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে ড্রেনেজ সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি সুরমা নদী ড্রেজিংয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হবে ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, নগরভবন সাধারণ মানুষের জন্য আরও বেশি নাগরিকবান্ধব হিসাবে যাতে কাজ করে, যে কেউ যাতে তার সমস্যা নিয়ে সহজেই নগরভবনে যেতে পারেন এবং তাদের সমস্যার কথা বলতে পারেন তা নিশ্চিত করা হবে।