নজরুল জন্মজয়ন্তী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৩, ২:৪৭:০১ অপরাহ্ন

অসহায়কে অবজ্ঞা করা উচিত নয়, কারণ মানুষ মাত্রেই জীবনের কোন না কোন সময় অসহায়তার শিকার হবে। -গোল্ড স্মিথ
আজ ১১ই জ্যৈষ্ঠ। সাম্য, দ্রোহ ও প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৪ তম জন্মজয়ন্তী। কবি নজরুল ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়েছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণার উৎস।সর্বোপরি তিনি আামাদের জাতীয় কবি। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১৯৭৬ সালের শোকের মাসেই কবি নজরুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে।
আমাদের রণসঙ্গীতের রচয়িতা বিপ্লবের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ১৩০৬ বাংলার আজকের এই দিনে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম ‘দুখু মিয়া’। পিতার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও মাতা জাহেদা খাতুন। বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও তিনি ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। একাধারে প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল। তাঁর কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে ছিলো হাতিয়ার। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা অফুরান শক্তি জুগিয়েছে মুক্তিকামি বাঙালিকে। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ। স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে সপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। তিনি রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন। দার্শনিক চিন্তাশীল, সমাজ সচেতন, রাজনীতিক, বিদ্রোহী কবি নজরুল দুঃখকে আলিঙ্গন করেই সাহিত্যকর্মে তাঁর বহুমাত্রিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন। যা আমাদেরকে আজও আলোর পথ দেখাচ্ছে।
এই কথাটি নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই যে, বাংলা-ভাষাভাষী যে কোন ধর্মের মানুষ বিশ্বের যে কোন প্রান্তেই অবস্থান করে না কেন তাঁদের মনের মধ্যে কবি কাজী নজরুল ইসলাম থাকবেন সদা জাগ্রত। আসল কথা হচ্ছে, বিংশ শতাব্দির বাঙালির মননে কাজী নজরুল ইসলামের মর্যাদা ও গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁর সৃষ্টিকর্ম, মানবিকতা, ঔপনিবেশিক শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে দ্রোহ, ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরুদ্ধতাবোধ এবং নারী-পুরুষের সমতার বন্দনা বিগত সময়ে যেমন, আগামিতেও তেমনি মানুষের চলার পথের পাথেয় হয়ে থাকবে।