দোয়ারাবাজারে ব্রিজ না থাকায় বিপাকে শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামবাসী
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৫ মে ২০২৩, ৪:৩৮:৪০ অপরাহ্ন
তাজুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে : সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ব্রিজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীসহ ১০ গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। দীর্ঘ ৫২ বছর ধরে বাঁশের সাঁকোই তাদের একমাত্র ভরসা। দীর্ঘ এ সময়ে পদার্পণ ঘটলো কত সরকারের, কিন্তু কথা রাখেনি কেউই। শুধু লালফিতায় বন্দিই রইল তাদের সেই আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতি। পক্ষান্তরে দুর্ভোগ সয়ে সয়ে বছরের পর বছর নড়বড়ে বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁকি নিয়েই পারাপার হচ্ছেন ভুক্তভোগী এলাকাবাসী ।
অপরদিকে, ব্রিজ না থাকায় রাস্তাসহ কোনো উন্নয়নও হয়নি ওই এলাকার। এভাবেই আক্ষেপের সুরে কথাগুলো বলেন ৮০ বছর বয়সী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান। তিনি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা। স্থানীয় খাসিয়ামারা নদীর উপ-শাখার ওই সাঁকোর পাড়েই তার বাড়ি। মূলত ওই সাঁকো পার হয়েই যেতে হয় জেলা ও উপজেলা সদরসহ স্থানীয় হাট-বাজারগুলোতে।
সরেজমিন দেখা যায়, শিমুলতলা গ্রাম ও সমুজ আলী স্কুল এন্ড কলেজের মধ্যবর্তী খাসিয়ামারা নদীর উপ-শাখা ওই খালের উপরে দৃশ্যমান রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ বিশাল এক বাঁশের সাঁকো। সাঁকোর পশ্চিম পাড়ে রয়েছে টিলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সমুজ আলী স্কুল এন্ড কলেজ। শেষমেষ বাধ্য হয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতে হচ্ছে জটিল রোগী ও শিক্ষার্থীসহ সব বয়সী মানুষকে।
এদিকে, জরুরি ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলাদের হাসপাতালে নিতে বিকল্প উপায়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে প্রধান সড়কে উঠতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে এখানে একটি পাকা ব্রিজের দাবি জানিয়ে আসলেও কার্যত কোনো ফল হয়নি। শুধু আশ্বাস আর প্রতিশ্রুতিতেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়। একাধিকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলেও কার্যত কোনো ফল হচ্ছে না। বর্ষায় ভারি বর্ষণে বাঁশের সাঁকো পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রতিবছর এলাকাবাসীর চাঁদায় ও বাঁশ সংগ্রহ করে দেয়া হয় বাঁশের সাঁকো।
কলেজ শিক্ষার্থী শাহ্ তারেক মাহমুদ জানায়, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক আমাদের শিমুলতলা গ্রামের বাসিন্দা। ওই গ্রামে রয়েছেন আরও দুই বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাই আমি শিমুলতলা ও সমুজ আলী স্কুল এন্ড কলেজের মধ্যবর্তী খালের উপর জরুরি ভিত্তিতে একটি ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
টিলাগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম বলেন, এই বাঁশের সাকো পারাপার হয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন বিদ্যালয়ে আসে। আর ওই সাঁকো পারাপারে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটছে। বিশেষত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য ওই বাঁশের সাঁকো বিরাট ঝুঁকিপূর্ণ। আমরা এখানে একটি ব্রিজ নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশীদ বলেন, সম্প্রতি উন্নয়ন বিষয়ক এক আলোচনা সভায় ওই স্থানে একটি ব্রিজ স্থাপনের বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আমাদের এমপি মহোদয় খুবই আন্তরিক। অতি দ্রুতই সাঁকোর স্থলে ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমরা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
নবাগত দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফ মুর্শেদ মিশু বলেন, ওই স্থানে সেতু নির্মাণের বিষয়টি প্রথম জানলাম। সরেজমিন গিয়ে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।