বিশ্বনাথে সড়ক বিভাগের ভূমি নিয়ে মাদ্রাসা ও পৌর কর্তৃপক্ষ মুখোমুখি
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ২৮ মে ২০২৩, ৫:৪৩:১১ অপরাহ্ন
এলাকায় টানটান উত্তেজনা
কাউসার চৌধুরী
সিলেটের বিশ্বনাথে সড়ক বিভাগের আড়াই কোটি টাকা মূল্যের ২৩ শতক ভূমি নিয়ে দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা ও পৌর কর্তৃপক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। টানা ৪ দশক থেকে ভূমিটুকু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দখলে থাকলেও হঠাৎ করে পৌর কর্তৃপক্ষের রাস্তা করা নিয়েই এখন দু’পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছে তীব্র বিরোধ। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে একাধিকবার বৈঠক করেও বিষয়টির কোন সুরাহা হয়নি।
সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্বনাথ উপজেলা সদরের জামেয়া ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন জায়গায় একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিশ্বনাথ পৌরসভা। প্রায় ২০০ ফুট দীর্ঘ ও ১০ ফুট প্রস্থের রাস্তাটির নির্মাণে সরেজমিনে যাবার পর বাধার মুখে পড়ে পৌর কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজর আলী ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে দেখা দিয়েছে চরম বিরোধ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিরোধপূর্ণ ভূমির মালিক সরকারের সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ)। দারুল উলুম মাদানিয়া মাদ্রাসা ১৯৮১ সালে সড়ক বিভাগের ওই ২৩ শতক ভূমি অস্থায়ী বন্দোবস্ত নিয়ে ভোগদখল শুরু করে। এভাবে চলার টানা ১৪ বছর পরে মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আশরাফ আলী এ ভূমি স্থায়ীভাবে বন্দোবস্ত নিতে ১৯৯৫ সালের ১০ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবরে একটি আবেদন করেন।
সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মেহেদী হাসান এ বিষয়ে ২০০২ সালে ভূমি সচিবের নিকট একটি প্রতিবেদন দেন। ওই প্রতিবেদনে তিনি মাদ্রাসার অনুকূলে ভূমি বন্দোবস্ত করা যেতে পারে মর্মে মত দেন। এরপর ২০০৩ সালের ২৩ আগস্ট সিলেট সওজ-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে উক্ত ভূমি মাদ্রাসার অনুকূলে স্থায়ী লিজ/বন্দোবস্ত প্রদান করা যেতে পারে বলে মর্মে অনুরূপ মতামত প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে এ কার্যক্রম থমকে যায়।
মাদ্রাসা সূত্র জানিয়েছে, ১৯৮১ সাল থেকে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ উক্ত ভূমি ভোগ দখল করে আসছে। উক্ত ভূমিতে সড়ক বিভাগের নির্মিত গার্ডওয়ালও আছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উক্ত ভূমির উপর দিয়ে একটি রাস্তা নির্মাণের অংশ হিসেবে একদিন রাতে হঠাৎ করে সড়ক বিভাগের গার্ডওয়াল ভাঙা শুরু করা হয়। এ নিয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ফজর আলী ও মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা শিব্বির আহমদের মাঝে কথা-কাটাকাটিও হয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দু’পক্ষ মাদ্রাসায় বৈঠকে বসেন। দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার প্রেক্ষিতে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তি হাজী আরকুম আলী জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে উক্ত ভূমির এক পাশ দিয়ে রাস্তা নির্মাণের জন্যে সিদ্ধান্ত দিলে সকলেই তা মেনে নেন। পরবর্তীতে ফের সেই পুরনো জায়গায় কাজ শুরু করলে আবারও উত্তেজনা দেখা দেয়। এরপর থেকে রাস্তার নির্মাণ কাজও বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে গত ২১ মে বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান বিশ্বনাথ উপজেলার নির্বাহী অফিসারের নিকট একটি পত্র দেন। পত্রে তিনি রাস্তা নির্মাণে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের বাধাদানের বিষয়টি আলোকপাতের পাশাপাশি এ নিয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেন।
বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান বলেন, সরকারি জায়গায় আমরা রাস্তা নির্মাণ করতে চাই। রাস্তা সকলেরই দরকার। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথেও আলোচনা হয়েছে। তারপরও তারা বাধা দিচ্ছেন। বিষয়টি সুরাহা হয়ে যাবে। এটা বড় ধরনের কোনো বিষয় নয় বলেও তার মন্তব্য।
এ বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর ফজর আলী বলেন, পৌরসভা থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। রাস্তার পাকার কাজ এখনো হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে সমঝোতার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মাদানিয়া মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা শিব্বির আহমদ বলেন, ওই জায়গা দিয়ে আমাদের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা যাতায়াত করেন। আমাদেরকে না জানিয়ে গভীর রাতে কাউকে না জানিয়ে রাস্তা নির্মাণের কাজ করায় তারা বাধা দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, জায়গাটি মাদ্রাসা লিজ এনে ভোগদখল করছে। পরবর্তীতে স্থায়ী লিজ আনার আবেদন করা হয়। একপাশে রাস্তা নির্মাণের সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ফের জোরপূর্বক রাস্তা নির্মাণে অপপ্রয়াস চলছে। মাঝখানে রাস্তা নির্মাণের মধ্য দিয়ে মূলত ভূমি দখলেরও চেষ্টা করা হচ্ছে-বলে তার অভিযোগ। কেবল মাদ্রাসা নয়, এভাবে প্রায় সকল বাসা-বাড়ির সামনের সড়কের জমি সংশ্লিষ্টদের দখলে আছে।
বিশ্বনাথ থানার ওসি গাজী আতাউর রহমান বলেন, সড়ক বিভাগের জায়গায় রাস্তা নির্মাণ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিবদমান উত্তেজনা আমরা নিয়ন্ত্রণ করেছি। বিষয়টি বসে সমাধান করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
সওজ, সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় সিলেটের ডাককে বলেন, পৌরসভা যে ওয়াকওয়ে করতে চাইছে- সে বিষয়ে আমাদের কোনো অনুমতি নেয়নি। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষেরও পুরোপুরি অনুমোদন নেই। সওজ-এর পক্ষ থেকে পুরো জায়গা মেপে সীমানা নির্ধারণ করা হবে। বিষয়টি জেলা প্রশাসনের সভায় উত্থাপনের পর সবার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। এক্ষেত্রে কারো সুবিধা আর কারো অসুবিধা হয়-এমন কিছু করা হবে না বলে জানান তিনি।