৬ মেয়র প্রার্থীর হলফনামার তথ্য
অঢেল সম্পদ ও বিপুল আয়ে এক নম্বর বাবুল
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০২৩, ৮:৩৪:৫৮ অপরাহ্ন
৬ জনের অভিন্ন পেশা ব্যবসা সর্বোচ্চ ৫ মামলার আসামি রিমন
জাকের পার্টির জহির চাঁদপুরের স্থায়ী বাসিন্দা
কাউসার চৌধুরী
আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দি¦তাকারী প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুল বিপুল আয় ও অঢেল সম্পদের তথ্য উল্লেখ করেছেন। তার আয় ও সম্পদের তুলনায় বাদ বাকি পাঁচ প্রার্থীর কেউই ধারে কাছেও নেই। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর চেয়ে বাবুলের আয় দ্বিগুণ তিনগুণের হিসেবে নয়, ২২ দশমিক ৮৭ ভাগ বেশি।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামার তথ্যে দেখা গেছে, মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়া ৬ প্রার্থীর সকলেই পেশায় ব্যবসায়ী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমনের বিরুদ্ধে রয়েছে সর্বোচ্চ ৫ মামলা। জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলাম নগরের লালদীঘির পাড়ে বসবাস করলেও তার স্থায়ী ঠিকানা চাঁদপুরের কচুয়ায়। নির্বাচন কমিশনে প্রার্থীদের দেয়া হলফনামা পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
হলফনামার তথ্য নিশ্চিত করেছেন সিসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ফয়সাল কাদের। তিনি সিলেটের ডাককে বলেন, হলফনামায় প্রার্থীরা নিজের আয়, সম্পদ বিবরণীসহ প্রয়োজনীয় তথ্য মনোনয়নপত্রের সাথে নির্বাচন কমিশনে জমা দেন। হলফনামায় কোনো তথ্য গোপন করলে বা মিথ্যা তথ্য দিলে আইন অনুযায়ী ওই প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হবে। তিনি জানান, হলফনামা নিয়ে আজও কোনো অভিযোগ আসেনি।
প্রার্থীদের হলফনামার বিষয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন’র সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী সিলেটের ডাককে বলেন, প্রার্থীরা হলফনামায় যে সকল তথ্য দেন তা কতটুকু সত্য এ বিষয়ে আর কেউ খোঁজ নেন না। হলফনামার তথ্যের সত্যতা যাচাই করা প্রয়োজন। এটি করা গেলে হলফনামার তথ্য কতটুকু সঠিক তা বেরিয়ে আসতো। হলফনামায় শুধু দেশের ব্যবসা-আয় উল্লেখ করা হলেও বিদেশের ব্যাপারে কোনো তথ্য দিতে হয় না। সিলেট প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানকার অনেক প্রার্থীর বিদেশে নাগরিকত্বও থাকে। তাই হলফনামায় আরও কিছু বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। যেমন বিদেশি নাগরিকত্ব আছে কি না, থাকলে সেখানকার সম্পদ ও আয়ের বিস্তারিত বিবরণ। এ সীমাবদ্ধতা দূর করা প্রয়োজন। বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের গুরুত্ব সহকারে দেখার সময় এসেছে বলে তার মন্তব্য।
হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বিএ (অনার্স) পাশ। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী। তিনি বছরে সর্বমোট ২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৪ টাকা আয় করেন। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা ও কৃষিখাত থেকে বছরে ১ লাখ টাকা আয় করেন।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে আছে নগদ ৪১ লাখ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে ২টি টিভি, ১টি ফ্রিজ ও ২টি এসি। আসবাবপত্র রয়েছে ২ সেট সোফা, ৪টি খাট, ১টি টেবিল, ১০টি চেয়ার ও ২টি আলমিরা। স্ত্রীর নামে রয়েছে ৪৭ ভরি স্বর্ণ। স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ৩ বিঘা কৃষি জমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, একটি দালান ও একটি বাড়ি বা এপার্টমেন্ট আছে। তার নামে কোনো মামলা নেই। তার কোনো দায়-দেনাও নেই। তিনি নগরের পাঠানটুলা এলাকার (মোহনা-এ-৫৬/৯) নওশা মিয়া চৌধুরীর পুত্র।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল) পেশায় ব্যবসায়ী। তিনি স্বশিক্ষিত। তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ ৬৭ লাখ ৪৯ হাজার ৫৬৯ টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ২১ লাখ ৩৭ হাজার ৭০ টাকা, কোম্পানি হতে প্রাপ্ত পরিচালক ভাতা ৪০ লাখ, ব্যাংক ইন্টারেস্ট হতে ৪ লাখ ৬৯ হাজার ৮৪৯ টাকা ও অংশীধারী ফার্ম থেকে ১ লাখ ৪২ হাজার ৬৫০ টাকা আয় করেন।
অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে আছে, নগদ ৫২ লাখ ৮৯ হাজার ১১০ টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ৫৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকারও বেশি। ১৫ লাখ টাকার কোম্পানি শেয়ার ও ১ কোটি ১২ লাখ ৪৭ হাজার ২৬৪ টাকার সঞ্চয়পত্র। নিজের নামে বিএমডব্লিউ গাড়ি ১টি, টয়োটা প্রাডো ১টি, ৪টি কার্গো ভ্যান, ৮টি কাভার্ড ভ্যান ও ১টি মোটর সাইকেল। ৩ লাখ ২০ হাজার টাকার স্বর্ণ এবং ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র। স্ত্রীর নামে আছে নগদ ১১ লাখ ১২ হাজার টাকা ও ৫ লাখ টাকার কোম্পানি শেয়ার, ৩ লাখ টাকার স্বর্ণ ও ২ লাখ টাকার আসবাবপত্র।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে, ১২৮ দশমিক ২৮ শতক অকৃষি জমি। এর মধ্যে আছে বাগবাড়ী মৌজায় ৫ দশমিক ৫ শতক, খাদিমপাড়ার আটগাঁও মৌজায় ৩০ শতক, আখালিয়া মৌজায় ৭ দশমিক ৫ শতক, বাগবাড়ী মৌজায় ৫ দশমিক ৫ শতক, বড়শালা মৌজায় ৬ দশমিক ২৮ শতক, বড়শালা মৌজায় ১২ শতক, আখালিয়া মৌজায় ৭ দশমিক ৫ শতক ও বড়শালা মৌজায় ৫৪ শতক অকৃষি জমি। নগরের কাজিরবাজারের সিলভ্যালী টাওয়ারে রয়েছে ২ হাজার ৩৪০ স্কয়ার ফিটের একটি ফ্ল্যাট। বাগবাড়ী এলাকায় ২০০ স্কয়ার ফিটের বিল্ডিং, আখালিয়ায় ১১০০ স্কয়ার ফিটের টিনশেট বাড়ি, টুকেরবাজারে ৭ দশমিক ৫ শতক জমির উপর ১২০০ স্কয়ার ফিটের আধাপাকা টিনশেট বাড়ি ও বড়শালা মৌজায় ৫৪ শতক জমির উপর ১ হাজার ৮০০ স্কয়ার ফিটের বিল্ডিং রয়েছে।
ফিজা এন্ড কোং (প্রাঃ) লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নজরুল ইসলাম সর্বমোট ৪ মামলার আসামি ছিলেন। এর মধ্যে ৩ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি মামলা বর্তমানে তদন্তাধীন আছে। আইডিএলসি সিলেট শাখায় ১ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৫২৩ টাকা ও ফিজা এন্ড কোং (প্রাঃ) লিমিটেডে ৪ কোটি ১৫ লাখ ৮৩ হাজার ৪৭৪ টাকাসহ তার মোট ৫ কোটি ২৯ লাখ ৪৩ হাজার ৯৯৭ টাকার ঋণ আছে। তিনি নগরের ৫১, সাগরদিঘীর পাড়ের আফতাব মিয়ার পুত্র।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান এলএলবি পাস। তবে তিনি ট্রাভেলস ব্যবসায়ী। তার বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এর মধ্যে ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা ও বাড়ি ভাড়া থেকে বছরে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে আছে নগদ ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা রয়েছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা, ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের মোটর সাইকেল, ৩০ হাজার টাকার কম্পিউটার ও ২০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। স্ত্রীর নামে আছে ২০ ভরি স্বর্ণ। তার স্থাবর সম্পদ বলতে যৌথ মালিকানায় একটি বাণিজ্যিক দোকান রয়েছে। তিনি ১ মামলার আসামি ছিলেন। তবে মামলা থেকে বেকসুর খালাস পান। তার কোনো দায়-দেনা নেই। তিনি নগরের সোনারপাড়ার (নবারুন-৫৯) মনসুর আহমদের পুত্র।
জাকের পার্টির প্রার্থী মো. জহিরুল ইসলামের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণি। পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী জহিরের বার্ষিক আয় ২০ লাখ টাকা। নির্ভরশীলদের বার্ষিক আয় ৭ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে নিজের নামে নগদ ২০ লাখ টাকা, ব্যাংকে জমা ১০ লাখ টাকা, ৪ ভরি স্বর্ণ, ৪ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫ লাখ টাকার আসবাবপত্র। স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ২টি বাড়ি আছে। তবে বাড়ি দুটি কোথায় তা উল্লেখ করেননি। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তার কোনো ঋণও নেই। তার বর্তমান ঠিকানা হিসেবে লালদিঘীরপাড় ব্র্যাক ব্যাংকের (৪র্থ তলা) উল্লেখ করেন। হলফনামায় স্থায়ী ঠিকানা লিখেছেন চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার আশরাফপুর গ্রামে। তার পিতার নাম মো. আদম আলী।
স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মো. আব্দুল হানিফ কুটু পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তিনি এইচএসসি পাশ। তিনি ব্যবসা থেকে বছরে ২ লাখ ৯০ হাজার টাকা আয় করেন। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে রয়েছে, ব্যাংকে জমা ১৭ লাখ ৭০ হাজার, একটি যানবাহন (ঢাকা মেট্রো চ-১৬-০৮৮১), ২ লাখ টাকার স্বর্ণ, ৫০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র। স্ত্রীর নামে আছে ব্যাংকে জমা ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ২ লাখ টাকা মূল্যের স্বর্ণ রয়েছে। তার কোনো স্থাবর সম্পদ নেই, নেই কোনো দায়-দেনাও। তার বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেই। তিনি নগরের টিলাগড়ের টিকরীপাড়ার (জমিদারবাড়ির) মটু মিয়ার পুত্র।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন স্বশিক্ষিত। তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। তবে ব্যবসা থেকে তার কোনো আয় নেই। কৃষিখাত থেকে তার বার্ষিক আয় ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে আছে নিজের নামে নগদ ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ১৬ হাজার টাকা, ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিক সামগ্রী। স্থাবর সম্পদ হিসেবে নিজের নামে ৬০ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ শতক কৃষি জমি আছে। তিনি সর্বমোট ৫ মামলার আসামি ছিলেন। এক মামলা থেকে খালাস পেলেও ৪ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। তার কোনো দায়-দেনা নেই। তিনি নগরের কদমতলী এলাকার সামালহাসানের মো. আলা উদ্দিনের পুত্র।