সুনামগঞ্জে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়
তাহিরপুরে স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীর মৃত্যুদন্ড
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৩, ৪:১৭:২৩ অপরাহ্ন
নারী নির্যাতনের দায়ে তিনজনের যাবজ্জীবন ও সশ্রম কারাদন্ড
সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলায় যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতন করে হত্যার মামলায় স্বামী শাহ আলমকে মৃত্যুদ- দিয়েছেন আদালত। গতকাল বুধবার বিকেলে এ রায় ঘোষণা করেন সুনামগঞ্জের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. জাকির হোসেন। একই আদালত একই সময়ে নারী ও শিশু নির্যাতন অপর তিনটি মামলায় আরো তিনজনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেন।
সূত্র জানায়, তাহিরপুর উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামের মো. সামছুদ্দিনের মেয়ে জাহানারা বেগমকে (২৫) ঘটনার ৩ বছর আগে মধ্যনগর থানার খিদিরপুর গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে শাহ আলমের সাথে পারিবারিকরভাবে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কিছুদিন পর স্বামী শাহ আলম স্ত্রী জাহানারাকে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে জাহানারাকে মারপিট করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে শাহ আলম তার বাবাকে নিয়ে স্ত্রী জাহানারার বাবার বাড়িতে গিয়ে আর নির্যাতন করবে না মর্মে অঙ্গীকার করে নিজ বাড়িতে নিয়ে আসে। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও যৌতুক দাবিতে নির্যাতন শুরু করে। গত ২০১৫ সালের ২৬ মার্চ সকাল অনুমান ৯টার দিকে জাহানারা বেগমকে যৌতুক দাবিতে মারপিট শুরু করে। মারপিটের কারণে জাহানারা মারা গেছেন বুঝতে পেরে ঘাতক স্বামী বাড়ি সংলগ্ন করচ গাছে নিয়ে জাহানারার লাশ ঝুলিয়ে রাখে। পরে আশপাশের লোকজন দেখতে পেয়ে লাশ নামিয়ে স্বামী শাহ আলমের ঘরের সামনে নিয়ে রাখে। খবর পেয়ে জাহানারার বাবা সামছুদ্দিন শাহ আলমের বাড়িতে গিয়ে জাহানারার শরীরে জখমের চিহ্ন দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ভিকটিমের সুরতহাল প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে মো. শাহ আলমের বিরুদ্ধে মামলা করেন সামছুদ্দিন। তদন্ত শেষে পুলিশ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আইন, ২০০০ এর ১১(ক) ধারায় আদালতের চার্জশিট দাখিল করে। গতকাল বুধবার বিকেলে সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে সুনামগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারক আসামি শাহ আলমকে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক ছিল। তবে, গত মঙ্গলবার মধ্যনগর থানা পুলিশ আসামি শাহ আলমকে গ্রেফতার করে। তবে, মামলার রায় ঘোষণা পর্যন্ত আদালতে আসামিকে উপস্থাপন করা হয়নি।
এদিকে, ২০১১ সালে ৮ অক্টোবর রাত অনুমান ১১ টার দিকে ছাতক উপজেলার ছৈলা গ্রামের আশিক মিয়ার ছেলে নেছার মিয়া একই গ্রামের ‘এক নারীকে কথা আছে’ বলে বাড়ির পেছনে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে ধর্ষণ করে। পরে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েতে সমাধা না হওয়ায় ওই নারী নেছার মিয়া ও সোহেল মিয়ার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। পরে সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে গতকাল নেছার মিয়াকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড এবং অতিরিক্ত এক লক্ষ টাকা জরিমানা করে জরিমানার টাকা ভিকটিম ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদানের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে সোহেল মিয়াকে বেকসুর খালাস প্রদান করেন। ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ধর্মপাশা উপজেলার নোয়ান্দ গ্রাম ভিকটিম ৬ বছরের শিশুকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিবেশী রহম আলীর ঘরে টিভি দেখতে যায়। এসময় স্ত্রী ও সন্তানরা ঘরে না থাকার সুযোগে রহম আলী জোরপূর্বক শিশুটিকে ধর্ষণ করে। পরে শিশুটি তার মায়ের কাছে ঘটনাটি খুলে বলে। পরে রহম আলীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতের তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। গতকাল বিকেলে আদালতের বিচারক আসামি রহম আলীকে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দেন।
ছাতক উপজেলার লক্ষমসোম গ্রামের সুলেমান মিয়র মেয়ে শামীমা বেগম (২০)কে তৎকালীন দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার রনসী গ্রামের সামছুল ইসলামের ছেলে সুলেমান মিয়া (৩০) এর সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের কিছুদির যেতে না যেতে ২০২১ সালের ৯ মে সকাল ১০ টার দিকে দেড় লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারপিট করে আহত করে। আহত অবস্থায় শামীমা কৈতক হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পুলিশ আদালতের তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করে। গতকাল সাক্ষ্য প্রমাণ পর্যালোচনা করে আদালত আসামি সুলেমান মিয়াকে এক বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেন।