বিশ্ব দুগ্ধ দিবস আজ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০১ জুন ২০২৩, ৫:৫১:৩৯ অপরাহ্ন

সবার সাথে তাল মিলিয়ে যে কথা বলে সে ব্যক্তিত্বহীন। -মার্ক টোয়াইন
আজ বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো দিবসটি পালিাত হচ্ছে আমাদের দেশেও। বৈশ্বিক খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্ব তুলে ধরার লক্ষে দিবসটি পালিত হয়। জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ঘোষিত এই দিবস ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর পয়লা জুন পালিত হয়। মূলত ডেইরি খাতের কার্যক্রম বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করাই দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য। দুধ প্রতিটি ব্যক্তির জন্য স্বাস্থ্যকর, সুষম ডায়েটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। আর বিশ্ব দুগ্ধ দিবস এই বার্তাটি ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য উপযুক্ত দিন।
সাধারণত এই দিবসের প্রাক্কালে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে দুধের প্রয়োজনীয়তা অনুধাবন করার বিষয়ে তাগিদ দেয়া হয়। এই দিনে দুধ এবং দুধজাত বিভিন্ন খাবার গ্রহণের যে সুবিধা রয়েছে, সেটাই প্রচার করা হয়। বলা হয়, দুগ্ধজাত পণ্যগুলো কেবল স্বাস্থ্যের জন্যই উপকারি নয়, এটি বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষকে অর্থনৈতিক, পুষ্টি ও সামাজিক সুবিধা প্রদান করছে। এই প্রক্ষাপটে দেখা উচিত আমাদের দেশে দুধ ও দুগ্ধশিল্পের বর্তমান অবস্থা কী। বাংলাদেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুগ্ধ সামগ্রির চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু উৎপাদন বাড়ছে না। পরিসংখ্যানের তথ্য হচ্ছে, দেশে দুধের চাহিদা প্রায় ১৫৫ লাখ টন। আর অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন উৎস থেকে দুধ উৎপাদন হয় মাত্র ১২০ লাখ টন। ফলে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ লাখ টন। এই ঘাটতি পূরণের জন্য প্রতি বছর প্রায় এক হাজার পাঁচশ’ কোটি টাকার গুঁড়ো দুধ আমদানি করতে হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে পরিমাণ টাকা প্রতিবছর গুঁড়োদুধ আমদানিতে ব্যয় হয় তা যদি স্থানীয় দুগ্ধ উন্নয়নে ঋণ বা প্রণোদনা হিসেবে দেয়া যেতো তাহলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হতো। কিন্তু সরকার সেদিকে যাচ্ছেনা মূলত আমদানিকারকদের স্বর্থের কথা ভেবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন মানুষের প্রতিদিন দুই শ’৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা প্রয়োজন। অথচ বাংলাদেশের মানুষের প্রাপ্তি দৈনিক গড়ে মাত্র ৪০ মিলিলিটার দুধ। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মতে, দৈনিক দুধের চাহিদা ১৪ দশমিক ৪৮ মিলিয়ন টন এবং একই সময়ে উৎপাদন হয় মাত্র ছয় দশমিক ৯৭ মিলিয়ন টন। যার ফলে ঘাটতি দাঁড়ায় সাত দশমিক ৫১ মিলিয়ন টন। এই বিশাল ঘাটতি পূরণের জন্য আমদানি বাণিজ্যই একমাত্র অবলম্বন। অথচ আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধের গুণগত বা পুষ্টিগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
‘দুধে ভাতে বাঙ্গালি’-কথাটি চিরায়ত বাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গে মিশে আছে। অতীতে গ্রাম বাংলার প্রতিটি পরিবারেই গাভি লালন পালনের প্রচলন ছিলো। নিজেদের উৎপাদিত দুধেই পরিবারের চাহিদা মেটানো হতো। কিন্তু ক্রমান্বয়ে সেই দিন হারিয়ে যাচ্ছে। আমদানিকৃত গুঁড়ো দুধ ঢুকে গেছে প্রতিটি পরিবারে। এখনও বাংলার ঘরে ঘরে গোবাদিপশু লালন পালনের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব। পরিবেশ, পুষ্টি, আর্থ-সামাজিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি দুগ্ধ খাতে টেকসই হওয়া এবং দুগ্ধের স্বল্প-কার্বন ভবিষ্যত তৈরিতে সহায়তা করে বিশ্বের কাছে দুগ্ধ খামারকে নতুন করে পরিচয় করানোই হোক আজকের বিশ্ব দুগ্ধ দিবসের অঙ্গীকার।