৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার বাজেট পেশ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০২৩, ৫:৫৫:২৮ অপরাহ্ন
স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার কৌশল নিয়ে কাজ করছে সরকার: অর্থমন্ত্রী
ডাক ডেস্ক ॥ আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম (বাজেট) অধিবেশন শুরুর পর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর অনুমোদনক্রমে প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন শুরু করেন অর্থমন্ত্রী।
এটি দেশের ৫২তম এবং আওয়ামী লীগ সরকারের ২৪তম বাজেট। আর অর্থমন্ত্রী হিসেবে মুস্তফা কামালের এটি পঞ্চম বাজেট।
এবারের বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৫ দশমিক ২ শতাংশ। গতবছর অর্থমন্ত্রী চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেছিলেন। তবে সংশোধিত হয়ে এই বাজেটের আকার কমে দাঁড়ায় ৬ লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৪ দশমিক ৯ শতাংশ। সংশোধিত বাজেটের তুলনায় প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাড়ছে ১ লাখ ১ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকা, যা প্রাক্কলিত জিডিপির ১০ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড উৎস হতে ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। কর-বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আহরিত হবে আরও ৫০ হাজার কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে অনুদান ব্যতীত মোট ঘাটতি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা, যা জিডিপি ৫ দশমিক ২ শতাংশ। ঘাটতি পূরণে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে। বৈদেশিক উৎস (অনুদানসহ) থেকে আসবে ১ লাখ ৬ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা হতে সংগৃহীত হবে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা।
আগামী অর্থবছরের জন্য সরকার পরিচালন ব্যয়ের প্রাক্কলন করেছে ৪ লাখ ৩৬ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা। এ ছাড়া উন্নয়ন ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৭৭ হাজার ৫৮২ কোটি টাকা।
প্রস্তাবিত বাজেটে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। এ ছাড়া মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে।
‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার কৌশল নিয়ে কাজ করছে সরকার’ : বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার কৌশল প্রণয়নে কাজ করছে।
তিনি বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা মনে রেখে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে আমরা একটি কৌশল প্রণয়নে কাজ করছি।
কামাল জানান, বাজেট বক্তৃতায় মধ্যম মেয়াদী নীতি কৌশল সম্বলিত ‘মিডিয়াম টার্ম ম্যাক্রো ইকোনমিক পলিসি স্টেটমেন্ট (এমটিএমপিএস) রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এই নীতি কৌশল দেশের সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জগুলোকে বিবেচনায় নিয়ে আমাদের মধ্যমমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যগুলোকে বিশদভাবে বর্ণনা করে।
তিনি উল্লেখ করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জ হলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, চলতি হিসাব ভারসাম্য পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং বৈদেশিক বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা।
তিনি আরো বলেন, সামনের দিনগুলোতে এলডিসি থেকে টেকসই উত্তরণ এবং উত্তরণ পরবর্তী বাস্তবতা মোকাবেলার কৌশলগুলো এখনই নির্ধারণ করা দরকার। বিশেষ করে শুল্ক যৌক্তিকীকরণ, রাজস্ব ঘাটতি পূরণের জন্যে দেশীয় সম্পদ সংগ্রহ, ভর্তুকি প্রত্যাহার বা নগদ সহায়তা বা বিকল্প অনুসন্ধান ইত্যাদি এখন থেকেই বিবেচনা করা উচিত।
‘সরকারের লক্ষ্য অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বজায় রাখা’ : বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, চলমান প্রণোদনা প্যাকেজ সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার টেকসই করার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
তিনি বলেন, ‘আমরা মহামারীর প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে উঠেছি। তাই, এই বাজেটে, আমাদের লক্ষ্য হবে-চলমান উদ্দীপনা প্যাকেজগুলো সফলভাবে বাস্তবায়ন করে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বজায় রাখা।’
কামাল তার বক্তৃতায় বলেন, কোভিড-১৯ মহামারী বিশ্বব্যাপী জনগোষ্ঠীর জীবন ও জীবিকাসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে ব্যাহত করেছে।
তিনি আরো বলেন, ‘কোভিডের প্রভাবের কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধিও কমেছে ৩.৪৫ শতাংশ। তবে, এই সময়ের মধ্যে, অন্যান্য বেশিরভাগ দেশেই প্রবৃদ্ধি নেতিবাচক ছিল। আমাদের সরকার কোভিড পরিস্থিতিকে দৃশ্যমান সাফল্যের সাথে মোকাবিলা করেছে।’
এ সময় তিনি বলেন, সরকার প্রবৃদ্ধির চেয়ে জনগণের জীবন-জীবিকা রক্ষা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
কামাল বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি মুদ্রাস্ফীতি, সরকারি ব্যয়, পরিশোধের ভারসাম্য, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হারে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে।
কামাল বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পাশাপাশি অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সরকারের সাফল্য এবং পরবর্তীতে দ্রুত পুনরুদ্ধারের বিষয়টি বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকার বিভিন্ন কৌশল গ্রহণ করেছে যেমন (১) কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য সরকারি ব্যয় বৃদ্ধি করা, (২) ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধা প্রদান। সিস্টেম, (৩) সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বিস্তৃত করা এবং (৪) কাক্সিক্ষত স্তরে মুদ্রাস্ফীতি ধারণ করে সর্বোত্তম অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা।