ভূমি স্মার্ট কার্ড
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ জুন ২০২৩, ৩:১৮:৩৮ অপরাহ্ন
অসৎ লোক কাউকে সৎ মনে করে না, সকলকেই সে নিজের মতো ভাবে। -হজরত আলী রা.
ভূমি সংক্রান্ত নতুন একটি আইন করতে যাচ্ছে সরকার। ‘ভূমি মালিকানা ও ব্যবহার আইন, ২০২৩’-নামক এই আইনের আওতায় ভূমি মালিকদের ‘ভূমি মালিকানা সনদ (সার্টিফিকেট অব ল্যান্ড ওনারশিপ-সিএলও)’ দেয়া হবে। কিউআরকোড বা ইউনিক নম্বর সংবলিত এই ‘ভূমি স্মার্ট কার্ড’ বা সনদই ভূমির মালিকানা নির্ধারণে চূড়ান্ত দলিল বলে গণ্য হবে। ভূমি উন্নয়ন কর (খাজনা) দিতেও ব্যবহার করতে হবে এই কার্ড।
ভূমি সংক্রান্ত নানা জটিলতা এ দেশে চিরকালীন। জমির মালিকানা পরিবর্তন, বিকিকিনি, রেকর্ড পরিবর্তন, নামজারি, কর পরিশোধ প্রভৃতি ক্ষেত্রে হয়রানি-ভোগান্তি লেগেই আছে। চলছে ঘুষ-দুর্নীতির মহোৎসব। এ নিয়ে হচ্ছে মামলা মোকদ্দমা। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে এই মূহুর্তে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪০ লাখের মতো। আর এসব মামলার বড় অংশ, অর্থাৎ প্রায় ৬০ শতাংশ মামলা জমিজমা সংক্রান্ত নানা বিরোধকে কেন্দ্র করে। আর এসব মামলা অনেক ক্ষেত্রেই চলে বছরের পর বছর ধরে। এই জনভোগান্তি, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধে কোন পদক্ষেপই কাজে আসছে না। এই প্রেক্ষিতে সরকার করতে চাচ্ছে নতুন আইন। আইনে বলা হয়েছে- টানা তিন বছর কেউ খাজনা না দিলে তার জমি বাজেয়াপ্ত ও খাস হয়ে যাবে, জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কারও জমি অবৈধভাবে দখল করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদ- বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ে দ-িত করা হবে। বিশেষ করে, ভূমি স্মার্ট কার্ড ভূমির মালিকানা নির্ধারণে চূড়ান্ত দলিল হিসেবে গণ্য হবে। এই সনদের মাধ্যমে সহজেই ওই জমিসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা যাবে। মালিকানা ও স্বত্ব পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভূমির মালিকানা সনদও নিয়মিত হালনাগাদ করা হবে। এর জন্য সরকারকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিতে হবে জমির মালিককে। আইনে কৃষিজমি অধিগ্রহণে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের জরুরি উন্নয়নমূলক কাজে কৃষিভূমির প্রয়োজন হলে অপেক্ষাকৃত অনুর্বর জমি নির্বাচন করতে হবে। তাছাড়া, অঞ্চলভিত্তিক ডিজিটাল ম্যাপ অনুযায়ী কৃষিজমি সরকারের অনুমতি ছাড়া অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। গ্রামাঞ্চলে বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে ঊর্ধ্বমুখি সম্প্রসারণকে উৎসাহিত করতে হবে।
আমরা চাই, ভূমি সংক্রান্ত নানা ধরণের হয়রানি থেকে মুক্ত হোক সাধারণ মানুষ। এজন্য ভূমি ব্যবস্থাপনায় যে অনিয়ম রয়েছে, সেটা দূর করতে হবে যেভাবেই হোক। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে বসবাস করছি। আমাদের লক্ষ এখন স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। এমনি সন্ধিক্ষণে ভূমি স্মার্ট কার্ড প্রকল্প সত্যি একটি সময়োপযোগি সিদ্ধান্ত বলেই মনে করা হচ্ছে। তবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, ভূমি বিভাগের দুর্নীতিবাজ চক্রের কালো থাবা থেকে এটা মুক্ত থাকবে।