ভারতে ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় নিহত বেড়ে ২৮৮
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ জুন ২০২৩, ৪:৫০:৫৪ অপরাহ্ন
ডাক ডেস্ক : ভারতের উড়িষ্যায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮ জনে দাঁড়িয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মরদেহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়া দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৯০০ জন। এর মধ্যে দুই বাংলাদেশিও রয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এরই মধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি হাসপাতালে আহতদের সাথেও দেখা করেছেন। ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব এ বি এম সরওয়ার-ই-আলম সরকার এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বালাসোরের বাহানাগা বাজার স্টেশনে প্রায় একই সময়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে তিনটি ট্রেন। এর মধ্যে ছিল দুইটি যাত্রীবাহী ট্রেন এবং একটি মালবাহি ট্রেন।
হাওড়া থেকে চেন্নাই যাচ্ছিল করমন্ডল এক্সপ্রেস অন্যদিকে হাওড়ায় ফিরছিল যশবন্তপুর-হামসফর এক্সপ্রেস ট্রেন। দুর্ঘটনায় করমন্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন মালবাহী গাড়ির উপরে উঠে যায়, দুমড়ে মুচড়ে যায় একাধিক বগি। যশবন্তপুর-হামসফর এক্সপ্রেসের কয়েকটি বগিও লাইনচ্যুত হয়। জায়গাটি নির্জন হওয়ায় উদ্ধারকারীরা এসে উদ্ধারকাজ শুরু করতে সামান্য বিলম্ব হয়। ঘটনার ১৪ ঘণ্টা পরে গতকাল শনিবারও উদ্ধার কাজ চলছিল। দুর্ঘটনাস্থলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মানুষের হাত, পা, মাথাসহ নানা অঙ্গ প্রত্যঙ্গে পচন ধরতে শুরু করেছে। আহতদের অ্যাম্বুলেন্স ও হেলিকপ্টারে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন হাসপাতালে।
দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীবাহী দুই ট্রেনের বগিগুলোতে প্রথম দফায় উদ্ধার অভিযান চালানোর পর সেগুলোতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের মতো খোঁজ চালানো হচ্ছে। কেননা করম-ল এক্সপ্রেসের একটি বগি থেকে দ্বিতীয় দফা তল্লাশিতে আরও দুইটি মরদেহ পাওয়া যায়। পরে স্থানীয়দের দাবির মুখে তৃতীয় দফা উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
উদ্ধার অভিযানে অংশ নিয়েছে ১ হাজার ২০০ মানুষ। পাশাপাশি ২০০টি অ্যাম্বুলেন্স, ৫০টি বাস এবং ৪৫টি মোবাইল হেলথ ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করছে। ট্রাক্টরসহ সব ধরনের যানবাহনে মৃতদেহ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
লাইনচ্যুত বগিগুলোর ভেতর থেকে মৃতদেহ বের করে আনতে ‘গ্যাস কাটার’ ব্যবহার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা কর্নেল এসকে দত্ত জানান, সেনাবাহিনী রাত থেকে উদ্ধারকাজে রয়েছে এবং কলকাতা থেকে আরও সেনা সদস্য ডাকা হয়েছে।
এই দুর্ঘটনায় একদিনের শোক ঘোষণা করেছেন উড়িষ্যার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। এসময় কোনো উৎসব হবে না। বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডাও বিজেপির সমস্ত কর্মসূচি বাতিল করেছেন।
ভারতের রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের মনোযোগ ত্রাণ ও উদ্ধার অভিযানে। কিছু মৃতদেহ এখনও অনেক ট্রেনের বগিতে আটকে আছে যা বের করার চেষ্টা চলছে।’
এদিকে, বিকেল ৪টা নাগাদ বালাসোরের দুর্ঘটনাস্থল বাহানাগা ঘুরে দেখেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ঘটনাস্থল থেকেই তিনি কথা বলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ক্যাবিনেট সচিবের সাথে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ মিনিট ছিলেন তিনি। কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রক নিহতদের পরিবারকে এককালীন ১০ লক্ষ টাকা অনুদান দেয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আহতদের পরিবার পাবে পঞ্চাশ হাজার টাকা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘটনার পরই টুইট করে জানিয়েছিলেন যে, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারকে দু’লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে।
এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় তৃণমূল এর একটি প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছেন। পাঠিয়েছেন দশ চিকিৎসক এর একটি দল, বেশ কিছু অ্যাম্বুলেন্স ও শববাহী গাড়ি। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পটনায়কও শুক্রবার রাতেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। এ ঘটনার পর মোট একান্ন জোড়া ট্রেন বাতিল হয়েছে। আহতদের মধ্যে দু’জন বাংলাদেশিও আছেন যারা চিকিৎসার জন্য চেন্নাই যাচ্ছিলেন। তাদের বালাশোর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত দুই বাংলাদেশির একজন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। বালাশোরের তিনটি হাসপাতালের চিকিৎসক, সেবিকাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনটিতে আরও বাংলাদেশি যাত্রী থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি এই ট্রেনে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাতায়াত করেন। দুর্ঘটনায় কোনো বাংলাদেশি থাকলে তাদের তথ্য জানতে হটলাইন (+৯১৯০৩৮৩৫৩৫৩৩ হোয়াটসঅ্যাপ) নম্বর দিয়েছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন।
উপ-হাইকমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সাধারণ বাংলাদেশিরা চিকিৎসার জন্য ওই ট্রেনটিতে যাতায়াত করেন। তাই দুর্ঘটনার পর ভারতের রেল কর্তৃপক্ষ ও ওড়িশা রাজ্য সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশন।