পরিবেশ দিবসের শপথ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৩, ২:১৮:৩৫ অপরাহ্ন
সময় দ্রুত চলে যায়, এর সদ্ব্যবহার যারা করতে পারে, তারাই সফল ও সার্থক বলে পরিচিত হয়। -বেকেন বাওয়ার
বিশ্ব পরিবেশ দিবস আজ। পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে প্রতি বছর দিবসটি পালিত হয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বাড়ছে। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। আর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিতে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা সমুদ্র গর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আজ পালিত হচ্ছে দিবসটি। সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় দিবসটি উপলক্ষে গ্রহণ করেছে বিভিন্ন কর্মসূচি।
পরিবেশ সংরক্ষণ ও বনায়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বিশ্বব্যাপি গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে জাতিসংঘ প্রতি বছর জুন মাসের পাঁচ তারিখ বিশ্বব্যাপী বিশ্বপরিবেশ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সত্যি বলতে কি, গোটা বিশ্বের পরিবেশই এখন হুমকির সম্মুখীন; আর এই অবস্থায় বিশ্ব পরিবেশ দিবসের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে সারা বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে পরিবেশ। পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে দেশে দেশে। এ নিয়ে শংকিত বিশ্ববাসি। কখনও কখনও যুদ্ধ-সন্ত্রাস যতো না আলোচিত হয়, তার চেয়ে বেশি হয় এই পরিবেশ নিয়ে। উন্নত, অনুন্নত, উন্নয়নশীল ও দরিদ্র দেশগুলোতে এই পরিবেশই হচ্ছে সবচেয়ে ‘আতঙ্কের’ বিষয়। পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না কেউই। মানবসভ্যতার অগ্রযাত্রা যতোই দ্রæততর হচ্ছে, বিজ্ঞান যতোই সামনে এগুচ্ছে, ততোই যেন এই পরিবেশ বিপর্যয়ের মাত্রা বেড়ে চলেছে। উন্নত দেশগুলো যদিও এই পরিবেশকে স্বাভাবিক রাখতে নানা প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে, অনুন্নত বা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে তাও সম্ভব হচ্ছে না। এইসব দেশে সীমিত সম্পদ নিয়ে যা-ও মাঝে মধ্যে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, সেটাও বিঘিœত হচ্ছে নানা কারণে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মানুষের অপরিণামদর্শী আচরণ। অনুন্নত দরিদ্র দেশগুলোর সম্পদ যেমন সীমিত, তেমনি সেসব দেশের মানুষও তুলনামূলকভাবে কম শিক্ষিত এবং অসচেতন। ফলে তারা পরিবেশ সুরক্ষার গুরুত্বটুকুই অনেক সময় উপলব্ধি করতে পারে না। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা তথা পরিবেশ বিপর্যয় রোধে এখন বিশ্বব্যাপি নতুন করে আলোচনা, সমালোচনা, গবেষণা হচ্ছে। মূলত তিন ধরনের পরিবেশ নিয়ে গবেষণা হয় সব সময়। যেমন প্রাকৃতিক পরিবেশ, জৈবিক পরিবেশ এবং সামাজিক পরিবেশ। তবে গবেষণা যতোই হোক, বিপর্যয় রোধের ইতিবাচক পদক্ষেপ খুব একটা নেই বললেই চলে। বিশ্বের আবহাওয়া হচ্ছে উত্তপ্ত, বাতাস হচ্ছে দূষিত। কমে যাচ্ছে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ। মানবজাতির মধ্যে নতুন নতুন দুরারোগ্য ব্যাধির জন্ম হচ্ছে। ভূ-পৃষ্ঠের পানি দূষণের মাত্রা বাড়ছে। সেই সঙ্গে ভূ-গর্ভস্থ পানিও দূষিত হচ্ছে। পানি, বাতাস ছাড়াও পরিবেশ দূষণের প্রধানতম কারণ হচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে সৃষ্ট দূষিত বর্জ্য। এই বর্জ্য দূষিত করছে পরিবেশ-বিষাক্ত করছে বাতাস। বিশেষ করে রাসায়নিক দ্রব্যাদি দ্বারা বিষাক্ত শিল্প বর্জ্যরে মাধ্যমে সৃষ্ট সমস্যাগুলোই বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে। অর্থাৎ দাহ্য শিল্প কারখানার সংখ্যা যতো বাড়ছে, ততোই পরিবেশ সমস্যার রূপ ভয়াবহ হচ্ছে।
বৈশ্বিক পরিবেশ যখন নাজুক অবস্থার মধ্যে রয়েছে, ঠিক তখন বাংলাদেশের অবস্থা আরও শোচনীয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনায় তো নয়ই, আমাদের প্রতিবেশি কয়েকটি দেশের সঙ্গেও তুলনা করলে দেখা যাবে পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে আমরা অনেক পিছিয়ে। এখানে মানুষ অকৃপণ হস্তে গাছ কেটে উজাড় করছে, কাটছে পাহাড়। নদীনালা, পুকুর ডোবা ভরে তুলছে বিষাক্ত বর্জ্য দিয়ে। আমাদেরই অদূরদর্শীতার জন্য যানবাহন আর কলকারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া বাতাসকে করছে দূষিত। তাই আমাদের জন্য আজকের বিশ্ব পরিবেশ দিবস অন্য যেকোন দেশের চেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন। অথচ আমাদের দেশে দিবসটি প্রতি বছর পালিত হয় গতানুগতিকভাবে। এইসব অনুষ্ঠানে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা নেই। আসুন, আজ এই পরিবেশ দিবসে আমাদের অবহেলা আর অসচেতনতায় যাতে পরিবেশ বিপর্যস্ত না হয়, সেই শপথই গ্রহণ করি।