স্পেশাল ইকোনোমিক প্রসঙ্গ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুন ২০২৩, ২:২১:০৭ অপরাহ্ন

ড. ফজলে এলাহী মোহাম্মদ ফয়সাল
যে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। আমাদের পাশর্^বর্তী দেশ মালেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম প্রভূতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পেছনে দেশীয় উদ্যোগণের বিনিয়োগ, বৈদেশিক বিনিয়োগ এবং প্রবাসীগনের বিনিয়োগের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধিরও জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বৈদেশিক বিনিয়োগকারীগণের সাথে কানেকটিভিটি বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ, স্পেশাল ইকোনোমিক জোন, এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন ইত্যাদি বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম। কোন পণ্যের চাহিদা অনুধাবন করে বৈদিশিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ঠ করানোর মাধ্যমে দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী করে তোলা এবং বাস্তবিক পক্ষে বিনিয়োগ করানো-এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। দেশে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ লাখ ¯œাতক অথবা ¯œাতকোত্তর উর্ত্তীণ শিক্ষিত বেকার রয়েছেন। বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা এবং বৃদ্ধি করা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক জোন কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন কর্তৃপক্ষ-এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে মোট ৮টি ই.পি.জেড রয়েছে এবং এ সকল ই.পি.জেড গুলোতে মোট ইন্ডাস্ট্রি সমূহের ৫৮ শতাংশ বিদেশ নাগরিকগণের মালিকানাধীন। এ সকল ই.পি.জেড সমূহের আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, রপ্তানী বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে বিরাট অবদান রয়েছে। বাংলাদেশে মোট ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। এর অংশ হিসেবে ১১টি অর্থনৈতিক অঞ্চল ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল। বেজা এপ্রিল ২০২২ সাল পর্যন্ত সরকারি ৫৪টি, বেসরকারি ২৩টি এবং চীন, জাপান ও ভারতের জন্য চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন দিয়েছে। ভারতের স্পেশাল ইকোনোমিক জোনের জন্য প্রস্তাবিত স্থান হচ্ছে চট্রগ্রাম এবং মংলা। চীনের জন্য প্রস্তাবিত স্থান হলো চট্টগ্রাম এবং জাপানের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজারে ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। তাছাড়াও কোরিয়ান ইকোনোমিক জোনের বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। স্পেশাল ইকোনোকিত জোনে চীনের দুটি পাওয়ার সেক্টর কোম্পানীর মাধ্যমে প্রায় ২৮ হাজার ৩ শত কোটি টাকা মূল্যের বিনিয়োগর প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এছাড়াও দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর প্রভূতি দেশ সমূহ বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলোতে প্রচুর পরিমান অর্থ বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিষয়গুলো অবশ্যই ইতিবাচক বিয়ষ। বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ ইকোনোমিক জোন হলো বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনোমিক জোন। একটি জাপানি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৯ সালে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দেশের প্রথম ই.পি.জেড হলো চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন।
২০১৪ সালে শুরু হয় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার মূল কাজ। উদ্দেশ্য ছিলো ৭৫ হাজার একর জমিতে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরী করা। এর পরবর্তীতে লক্ষ্যমাত্রা ১ লক্ষ একর জমি নির্ধারণ করা হয়। ইকোনোমিক জোনগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ১ কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং প্রায় ৪ লক্ষ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানী করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলো দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বিরাট অবদান রাখবে বলে আশা করা যাচ্ছে। মীরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের মাধ্যমে আগামী ১৫ বছরে প্রায় ১৫ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান এবং ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা মূল্যের পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানী করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে ভূটান, উজবেকিস্তান ও দক্ষিণ কোরিয়াকে অর্থনৈতিক জোন প্রতিষ্ঠা করার আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশে এনার্জি সেক্টও, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল, ঔষধ তৈরী প্রভূতি খাতে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ভূটানের জন্য কুড়িগ্রামে অর্থনৈতিক জোন দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এবং ভূটানকে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার এবং সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলো কার্যকর করার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির সরবরাহ বৃদ্ধি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশের উপরাঞ্চলসহ মাগুরা, শরিয়তপুর প্রভৃতি অঞ্চলগুলোতে যদি বিনিয়োগের গোত্রগুলো পর্যালোচনা করে ইন্ডাষ্ট্রিয়ান পার্ক অথবা স্পেশাল ইকোনোমিক জোন প্রতিষ্ঠা করা যায় এবং উক্ত ইন্ডাষ্ট্রিয়াল পার্ক অথবা স্পেশাল ইকোনোমিক জোন গুলোতে দেশী অথবা বৈদশিক অথবা প্রবাসীগণের বিনিয়োগের মাধ্যমে উপযুক্ত শিল্পকারখানা গড়ে তুলে যদি উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব হয় তবে নি:সন্দেহে জেলাগুলোর নিতান্ত দরিদ্র জনগণের অর্থ-সামাজিক উন্নয়নের এবং অকাঠামোগত উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যদিও এখন অনেকাংশে অবস্থার উন্নতি হয়েছে তথাপি কিছু কিছু জেলার বেশীর ভাগ জনগোষ্ঠী দারিদ্রসীমার নীচে এখনও অবস্থান করছে। ইন্ডাষ্ট্রিল পার্ক প্রতিষ্ঠা এবং এর মাধ্যমে বেকার জনগণের কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারলে তবে সেটি পারে দারিদ্র দূরীকরনের একটি কার্যকর উপায়।
অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, সিলেট।