সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন
ছাতকে মাদ্রাসা শিক্ষককে ধর্ষণ মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুন ২০২৩, ৪:২৪:৩০ অপরাহ্ন

ডাক ডেস্ক : সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় নিজে বাঁচতে মাদ্রাসা শিক্ষককে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে এক ধর্ষকের বিরুদ্ধে। অবশ্য, ডিএনএ পরীক্ষায় প্রকৃত ধর্ষক চিহ্নিত হয়েছে। গত শনিবার সিলেট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে হয়রানির শিকার মাদরাসা শিক্ষকের বড় ভাই ছাতক উপজেলার খুরমা ইউনিয়নের জাতুয়া গ্রামের মৃত ক্বারি আফতাব উদ্দিনের ছেলে মুহাম্মদ আব্দুস সালাম এ তথ্য জানান। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, ২০২১ সালের ২৫ জানুয়ারি তার ভাই মাওলানা সোলেমান সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ছাতক থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন উপজেলার কালারুকা ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের মৃত সাজিদুর রহমানের ছেলে মামুন মিয়া। মামুন তাদের সম্পর্কে তালতো ভাই। মামলায় ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসা ছোটবোনকে ধর্ষণ এবং এর ফলে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ার অভিযোগ তোলা হয়। এ মামলার পর ২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি সোলেমানকে গ্রেফতার করে পুলিশ। স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমে সোলেমানকে নিয়ে বেশকিছু সংবাদও প্রচার হয়। মুহাম্মদ আব্দুস সালাম অভিযোগ করেন, তার ভাইকে গ্রেফতার করে সারারাত অমানবিক নির্যাতনের পর আদালতে উপস্থাপন করে পুলিশ।
ভিকটিমের ভাই মামুন জেল হাজতে থাকাবস্থায় সোলেমানের সঙ্গে দেখা করে মামলাটি আপস হয়েছে মর্মে জানায় এবং কোর্টে আসার পর আপসনামায় স্বাক্ষর করতে বলে। পরবর্তীতে আদালতের হাজতখানায় তার কাছ থেকে কয়েকটি কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। কিন্তু, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জেলে থাকাবস্থায় বিয়ের আয়োজন করে জামিনের ব্যবস্থা করেন মামলাকারী নিজেই। আব্দুস সালাম তার ভাইকে গ্রেফতার করে প্রাণনাশের ভয়ভীতি দেখানো এবং তদন্ত কর্মকর্তা সম্পূর্ণ প্রভাবিত হয়ে মামলাটি তদন্ত করেন বলে অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ২০২১ সালের ১০ আগস্ট ভিকটিমের গর্ভজাত সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়। এরপর বিচারকের কাছে আমরা ডিএনএ টেস্টের জন্য অনুরোধ করি।
একই বছরের ১৪ অক্টোবর বিজ্ঞ আদালত শিশুটির পিতৃপরিচয় নিশ্চিত হওয়ার জন্য ভিকটিম, নবজাতক শিশু, তার ভাই সোলেমান এবং ভিকটিমের চাচাতো বোনের স্বামী আনকার মিয়ার ডিএনএ টেস্ট করতে ঢাকার সিআইডিকে নির্দেশ দেন।’ ডিএনএ টেস্টে শিশুটির সঙ্গে আনকার মিয়ার পুরোপুরি মিল পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। আব্দুস সালাম বলেন, ‘২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি ফরেনসিক রিপোর্ট তৈরি হয়। তাতে বলা হয়- ‘ডিএনএ পরীক্ষায় নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয় যে, সোলেমান আলী ওরফে সোলেমান সিদ্দিকী ভিকটিমের গর্ভজাত নবজাতক পুত্র সন্তানের জৈবিক পিতা নন। ডিএনএ পরীক্ষায় সুদৃঢ়ভাবে প্রমাণিত হয় যে, আনকার মিয়া ভিকটিমের গর্ভজাত নবজাতক পুত্র সন্তানের জৈবিক পিতা।’ আনকার মিয়া নিজেকে বাঁচাতে মামলার বাদীর ভাই মামুন, তাদের চাচী অর্থাৎ আনকারের শাশুড়ি সুফিয়া বেগমসহ অন্যরা মিলে পরিকল্পিতভাবে সোলেমানের বিরুদ্ধে অপবাদ দিয়ে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, তাদের এই চক্রান্তে তার নিরীহ ভাইয়ের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে, ডিএনএ প্রতিবেদন পাওয়ার পর আদালত মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য সুনামগঞ্জ জেলার গোয়েন্দা শাখার অফিসার ইনচার্জকে দায়িত্ব দেন। পরে, গোয়েন্দা শাখার উপপরিদর্শক পংকজ দাশ অধিকতর তদন্ত করে সম্পূরক চার্জশিট প্রদান করেন এবং অভিযোগ থেকে তার ভাই সোলেমান সিদ্দিকীকে খালাস দিয়ে আনকার আলীকে মামলায় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেন।’
‘কিন্তু ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদন প্রকাশ্যে আসার পর মামলার বাদী, ভিকটিমের ভাই মামুন তার দুলাভাইকে বাঁচাতে ২০২২ সালের ২৬ এপ্রিল উচ্চ আদালতে গিয়ে মামলাটি স্থগিত রাখার জন্য একটি স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন। যে কারণে প্রকৃত দোষী বের হওয়া সত্ত্বেও মামলাটি ঝুলে রয়েছে। আর আমার ভাই সোলেমান অপরাধের বোঝা নিয়ে এখনও দিনাতিপাত করছে।’