সিলেটে উপেক্ষিত সড়ক পরিবহন আইন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ জুন ২০২৩, ৬:২৮:১৮ অপরাহ্ন
মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম :
সিলেটে উপেক্ষিত সড়ক পরিবহন আইন। আইনটির যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ায় বুধবার ভোরে সিলেট-ঢাকা সড়কে অতিদরিদ্র ১৪ নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে মর্মে সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনের ৪৯(১)(ঝ) ধারায় উল্লেখ আছে-‘মোটরযানের বডির সামনে, পিছনে, উভয় পার্শ্বে, বডির বাহিরে বা ছাদে কোন প্রকার যাত্রী বা ছাদে কোন প্রকার যাত্রী বা পণ্য বা মালামাল বহন করা যাইবে না।’ কিন্তু, মামলা-জরিমানা করেও এ ধরনের যানবাহনে যাত্রী পরিবহন বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। তারা এ ব্যাপারে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) মো: মাসুদ রানাও পিকআপ ভ্যানে কিংবা ট্রাকে যাত্রী পরিবহন নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন। বুধবারের দুর্ঘটনার পর থেকে এ বিষয়ে অভিযান শুরু করেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, রাস্তায় যাতে যাত্রী নিয়ে এ ধরনের যানবাহন চলাচল করতে না পারে-সে বিষয়ে এসএমপি’র ট্র্রাফিক বিভাগকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশ সিলেট রিজিওনের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, আমরা হাইওয়েতে এ ধরনের পরিবহনের যাত্রী কোনভাবে অ্যালাউ করি না। শায়েস্তাগঞ্জে সাম্প্রতিক ভ্রাম্যমাণ ডিউটির অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে এ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, একটি ভ্যান এ ধরনের যাত্রী পরিবহন করছিল। শায়েস্তাগঞ্জ গোল চত্বরে ওই গাড়িটি নিজে আটক করে ড্রাইভারকে চাবি দিতে বলেছিলেন তিনি। কিন্তু, চালক চাবি না দিয়ে চলে যায়। পরে ওসিকে ডেকে গাড়িটি আটক করে মামলা দেয়া হয়। একই ধরনের জিনিস ঘটে ঈদের পরের দিন কিংবা বিভিন্ন উৎসবে বলে মন্তব্য তার। বাচ্চারা এ ধরনের পরিবহনে উঠে নাচানাচি করে, অনেকক্ষেত্রে ঘটে দুর্ঘটনাও-এ বিষয়েও সচেতনতার তাগিদ তার।
গাড়ির ছাদে কিংবা ভ্যানে যাত্রী পরিবহন ছাড়াও সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে দুর্ঘটনার আরো কয়েকটি কারণের কথা তিনি উল্লেখ করেছেন। মহাসড়কের সিলেট থেকে শেরপুর পর্যন্ত ১৮টি বাঁক রয়েছে। এ বাঁকও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। রোড সাইনও দেয়া হয়েছে দুই বছর আগে। এ সাইনগুলোরও আপডেট নেই।
বুধবারের দুর্ঘটনার আলোকপাত করে তিনি বলেন, ‘শহর থেকে যারা যাত্রীগুলো নিলো-এরা তো রেগুলার কাস্টমার না। যারা তাদেরকে হায়ার করে নিয়ে যাচ্ছে-তারাও এ দুর্ঘটনার জন্য সমান অপরাধী বলে মনে করেন তিনি। কারণ, নিহতরা গরীব মানুষ হতে পারে, তাই বলে তাদেরকে এভাবে না নিয়ে অন্যভাবেও নিতে পারতো। মাইক্রোবাসে কিংবা লোকাল বাসে করেও নিয়ে যেতে পারতো। তা না করে এতোগুলো মানুষের জীবনহানি করলো-এর দায়ভার তাদের ওপরও বর্তায়।
তার মতে, আমরা তো এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি, কিন্তু, জনসচেতনতা একটি বড় জিনিস। মহাসড়কে অনেকে সকালের দিকে মাছ কিংবা গরু নিয়ে যায়। দেখা যায়, ১/২টা গরুর সাথে ৫টা লোক উঠেছে। প্রতিনিয়ত এদেরকে ধরে ধরে নামিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু, মামলাও দিচ্ছি। তারপরেও মানুষকে সচেতন করা যাচ্ছে না।
৯২(১) ধারায় গত মে মাসে ৪৭টি মামলা হয়েছে। এছাড়া, গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩,১২৫টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের মামলাও রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। সড়ক পরিবহন আইনের ধারা ৯২-এ বলা আছে, ‘যদি কোন ব্যক্তি ধারা ৪৯ এর উপধারা (১)এ উল্লিখিত সাধারণ নির্দেশাবলির প্রথম অংশের কোন বিধান লঙ্ঘন করেন, তাহা হইলে উক্ত লঙ্ঘন হইবে একটি অপরাধ, এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক তিন মাসের কারাদন্ড, বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হইবেন এবং চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসেবে দোষ সূচক (এক) পয়েন্ট কর্তন হইবে।’
দক্ষিণ সুরমা থানার ওসি (তদন্ত) আবুল হোসেন গতরাত ১টায় এ প্রতিবেদককে জানান, এ ঘটনায় দিরাইয়ের ভাটিপাড়ার ইজাজুল বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় দুই চালককে দায়ী করা হয়েছে। মামলার আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় পুলিশ ড্রাইভারসহ কাউকে ছাড় দেবে না। প্রয়োজনে ওসমানীনগরের বাড়ির মালিকেরও এর সাথে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কিনা তা খুঁজে দেখা হবে।
সিলেট ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক মনিরুজ্জামানের মতে, চালকের শারীরিক দুর্বলতা ও ঝিমুনি ভাবের (ঘুম ঘুম ভাবের) কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে তারা ধারণা করছেন। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাকটি রাস্তায় উল্টে গেলে অধিকাংশ শ্রমিকই এর নিচে চাপা পড়েন। যে কারণে অনেকের শরীর থেতলে যায়।