শাহজালালের ওফাত দিবস
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুন ২০২৩, ৬:১২:৩৫ অপরাহ্ন
মাতৃভূমিকে যে ভালোবাসতে পারেনা, তার পক্ষে অন্যকিছুকে ভালোবাসা সম্ভব নয়। -বায়রন।
ওলিকুল শিরোমণি মুজররদে ইয়ামনী হজরত শাহজালাল (রহ.) এর ৭০৪তম ওফাত দিবস আজ। অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার-অবিচল ভাবমূর্তি নিয়ে এই অঞ্চলে আগমন ঘটে হজরত শাহজালাল (রহ.) এর। মানুষকে শান্তির-সুন্দর পথ প্রদর্শন করে ১৩৪১ খৃস্টাব্দে (১৯ জিলক্বদ) ৬০ বছর বয়সে তিনি পরলোক গমন করেন। তার জন্ম হয় ১২৭১ খৃস্টাব্দে আরবের ইয়ামন প্রদেশের কুনিয়া বা কানিয়া নামক স্থানে।
হজরত শাহজালাল (রহ.) এর ওফাতের পর থেকে প্রতি বছরই সিলেটে তাঁর মাজার প্রাঙ্গণে দুদিনব্যাপি নানা কর্মসূচি পালিত হয়ে আসছে। দেশ বিদেশের বিপুল সংখ্যক ভক্ত এতে অংশ নেন।সততা, ন্যায় ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সুদূর ইয়েমেন থেকে সিলেটে এসেছিলেন হজরত শাহজালাল (রহ.) আজ থেকে আটশ বছর আগে। তাঁর মিশন ছিলো অন্যায়, অত্যাচার ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে। এই অঞ্চলে তখন চলছিলো হিন্দু রাজা গৌড়গোবিন্দের দুঃশাসন। তার অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করতে করতে এই অঞ্চলের মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গিয়েছিলো। তখন তারা খুঁজতে থাকে মুক্তির উপায়। এই অবস্থায়ই তাদের সামনে এলেন হজরত শাহজালাল (রহ.)। তিনি রাজা গৌড়গোবিন্দকে পরাজিত করে ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার শুরু করেন। তাঁর পুরো নাম জালাল উদ্দিন। তবে তিনি শায়খ জালাল বা শাহজালাল নামে সকলের কাছে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি যে কেবল সিলেট অঞ্চলেই ইসলামের সুমহান বাণী প্রচার করে মানুষকে শান্তির পথ প্রদর্শন করেন তা নয়, তিনি ছিলেন পুরো মুসলিম বাংলায় ইসলাম প্রচারের পথিকৃত। এক কথায় বলা যায়, হজরত শাহজালাল (রহ.) ছিলেন এদেশে মুসলিম জাতিসত্ত্বার আদি রূপকার। ঐতিহাসিকদের মতে, পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর উম্মতদের মধ্য থেকে যুগে যুগে মানুষদের সঠিক পথে পথ প্রদর্শন করার জন্য ওলি বা মুজাদ্দেদ প্রেরণ করেন। যেহেতু শেষ নবীর পরে কোন নবীর আগমনের সম্ভাবনা নেই, তাই ওলি বা মুজাদ্দেদরাই আল্লাহর মনোনীত ইসলামের বাণী যুগে যুগে প্রচার করে যাবেন। এরা হচ্ছেন ওলি, সুফী, সাধক, দরবেশ। এরাই বিপথগামীকে নিয়ে আসবেন সুপথে, সত্য ধর্মে। হজরত শাহজালাল (রহ.) ছিলেন এমনি একজন সাধক পুরুষ। ইসলামের সংকটময় মুহূর্তে তিনি পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আরবের মক্কা শরীফের প্রখ্যাত কুরাইশ বংশের অন্যতম কৃতি পুরুষ হজরত মুহাইন ইয়ামনের ঘরে ৫৯৮ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন হজরত শাহজালাল (রহ.)। জন্মের পূর্বে পিতা এবং জন্মের পর মাতা হারান তিনি। এতিম শিশু হজরত শাহজালাল (রহ.) লালিত পালিত হন তাঁর মামার কাছে। আর তাঁর মামাই হচ্ছেন ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা গুরু।
হজরত শাহজালাল (রহ.) ও তাঁর সফরসঙ্গী তিনশ’ ৬০ আউলিয়া নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এই অঞ্চলে প্রচার করেছেন শান্তির ধর্ম ইসলামের সুমহান বাণী। গুণীজনরা বলেন, ওলি আউলিয়াদের নিকটবর্তী না হলে আল্লাহর পরিচয় পাওয়া যায় না। এই অঞ্চলের মানুষ হজরত শাহজালাল (রহ.) ও তিনশ’ ৬০ আউলিয়াসহ অন্যান্য ওলি আউলিয়াদের কাছে চিরঋণী এই জন্য যে, তাঁদের একাত্মতা আর অফুরন্ত পরিশ্রমের ফলে এখানে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠা পেয়েছে শান্তির ধর্ম ইসলাম। অথচ এই শান্তির ধর্ম ইসলামের নামেই বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি বিঘিœত হওয়ার মতো ন্যাক্কারজনক, মানবসভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ ঘৃণিত কর্মকান্ড ঘটে চলেছে। বাদ যাচ্ছে না ইসলাম প্রচারক হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজারসহ বিভিন্ন ওলি আউলিয়ার মাজার। ওলি আউলিয়াদের মাজারগুলোতেও চলছে ইসলাম বিরোধি নানা কর্মকান্ড। যে সুমহান বাণী নিয়ে হজরত শাহজালাল (রহ.) এসেছিলেন এই অঞ্চলে, তাঁর সেই বাণীকে সমুন্নত রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের। শুধু তাই নয়, দেশের আনাচে কানাচে অবস্থিত কমপক্ষে ২০ হাজার ওলি আউলিয়ার মাজারের মর্যাদাও রক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সচেতন হতে হবে সরকারকেও।