এই মিছিল থামবে কবে
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১০ জুন ২০২৩, ৩:০৯:৩৯ অপরাহ্ন
জীবন হলো পেন্সিলে আঁকা এক ছবির নাম, যার কোন অংশ রাবার দিয়ে মুছে ফেলা যায় না। -জন ডব্লু গার্ডনার
জনপদে কোলাহল শুরু হয় নি। ভোরের সূর্য উদিত হলেও অনেকেরই ঘুম ভাঙ্গে নি। এমনি সময় বিকট শব্দে জেগে ওঠেছেন তারা। কানে ভেসে এসেছে আর্ত চিৎকার। ছুটে চলেছেন সেদিকে। সেখানে তাদের প্রত্যক্ষ করতে হলো হৃদয় বিদারক দৃশ্য। স্মরণকালের একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা।গত বুধবার ভোরে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার নাজিরবাজারের কুতুবপুর নামক স্থানে ট্রাক-পিকআপ ভয়াবহ সংঘর্ষে ঝরে গেলো কমপক্ষে ১৬ টি প্রাণ।
জানা গেছে, সিলেট নগরির আম্বরখানা থেকে পিকআপে করে প্রায় ৩০ জন নারী-পুরুষ নির্মাণ শ্রমিক জেলার ওসমানীনগর উপজেলার গোয়ালাবাজার যাচ্ছিলেন। সকাল সাড়ে ৫টার দিকে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের উল্লিখিত স্থানে পৌঁছুলে মুনশীগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা সিলেটমুখি বালুবাহি ট্রাকের সঙ্গে শ্রমিক বহনকারি পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে দুই বাহনই দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনায় আহত হয়েছেন অনেকেই। হতাহতদের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়েছে বাতাস। নিহতদের বেশিরভাগই নির্মাণ শ্রমিক। সড়কে এই মৃত্যুর মিছিল কবে থামবে কেউ জনে না। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে দুর্ঘটনায় হতাহতের খবর আসছে। সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোন কোন দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সরকার এপর্যন্ত যতো উদ্যোগ নিয়েছে, তার প্রায় সবই ব্যর্থ হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয় নি। গবেষকগণ প্রায়ই দুর্ঘটনার বেশকিছু কারণ উল্লেখ করেন। যেমন-দেশে সড়ক অবকাঠামো ও স্থলভাগের আয়তন অনুপাতে জনসংখ্যার চাপ বেশি,সড়কের তুলনায় মোটরযানের সংখ্যা বৃদ্ধি, একই সড়কে চলছে বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশাসহ নানা রকম মিশ্র যানবাহন, সড়ক ও মহাসড়কগুলো ত্রুটিপূর্ণ, মহাসড়কের অনেক স্থানেই রয়েছে বিপজ্জনক বাঁক। এছাড়া অবকাঠামোগত কারণেও দুর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি ও ঝুঁকি খুব বেশি বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সর্বোপরি, চালকের অসতর্কতা ও বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো হচ্ছে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
সড়কের এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রয়োজন চালক, পথচারি, যাত্রি ও সর্বোপরি সরকারের সর্বাত্মক সচেতনতা। দেশের ছোট বড় সব সড়কপথে সবধরনের যানবাহন যদি সতর্কতার সঙ্গে সরকারের সব ধরনের নির্দেশনা মান্য করে চলাচল করে তবে দুর্ঘটনার হার কমে আসবে নিঃসন্দেহে। কিন্তু সেটা হচ্ছে না। সড়কে যানবাহন চলাচল সংক্রান্ত কোন আইনই মানা হচ্ছেনা। সর্বশেষ প্রণীত সড়ক নিরাপত্তা আইনটিও মানতে চায়না বেশিরভাগ যানবাহন চালক-মালিকেরা। এই আইন না মানার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।