ব্যাডমিন্টনে দেশের বাইরে স্বর্ণ জয়ে শিব্বির আহমদ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১১ জুন ২০২৩, ৪:৫৯:৪৩ অপরাহ্ন

সিলেটের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা ব্যাডমিন্টন। ক্রিকেটের পরেই ফুটবল থেকেও জনপ্রিয় এখন ব্যাডমিন্টন। খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্টে জাতীয়ভাবে সিলেটের সবচেয়ে ভালো অর্জন ব্যাডমিন্টনে। ব্যাডমিন্টনে সিলেটের অনেকেই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। বর্তমান জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জুটি সিলেটের। বাংলাদেশে যুব গেইম-এ ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন সিলেট। জাতীয় দলের কোচের দায়িত্বে পালন করেন সিলেটের কোচ। ব্যাডমিন্টনে সিলেটের অর্জন, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ প্রথম পর্ব।
সিএম ইউনুস
সাউথ এশিয়ান রিজিওনাল জুনিয়র ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশীপ টুনার্মেন্টে অনূর্ধ্ব-১৫ বিভাগের স্বর্ণ জয় করে বাংলাদেশের মোস্তাকিম-গালিব জুটি। ভারতের গোহাটিতে গত অক্টোবরে সাউথ এশিয়ান ব্যাটমিন্টন টুর্নামেন্ট ডাবলসে ভারতকে হারিয়ে প্রথম কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে চ্যাম্পিয়ান হয় বাংলাদেশ। কোচ হিসেবে বাংলাদেশের স্বর্ণ জয়ী দলের নেতৃত্ব দেন দেশের অন্যতম ব্যাডমিন্টন কোচ সিলেটের শিব্বির আহমদ। কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচে বাংলাদেশের জুনিয়র দলের এটাই প্রথম স্বর্ণ জয় বলে জানান কোচ শিব্বির আহমদ।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের দক্ষিণ সুরমার নবগঠিত ২৮ নং ওয়ার্ডের সুনামপুর এলাকার বাসিন্দা শিব্বির আহমদ ২০০৯ সাল থেকে ব্যাডমিন্টন কোচ হিসেবে কাজ করে আসছেন। দেশের লেভেল-১ সম্পন্ন স্বল্প সংখ্যক প্রশিক্ষকের মধ্যে তিনি অন্যতম বলে জানা যায়। এর পূর্বে ২০ বছরের অধিক সময় তিনি দেশের অন্যতম সেরা ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবে দাপটের সাথে খেলে গেছেন। তিনি একাধিকবার সিলেট জেলা ও বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। এছাড়া, ন্যাশনাল র্যাংকিং-এ তিনি ছিলেন উপরের দিকে।
জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন ছাড়াও তিনি, বাংলাদেশ ওপেন উপলক্ষে তিন মাসের নার্সিং ক্যাম্পের প্রধান কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশেনের টেলেন্ট হান্ট কর্মসূচিতে ৩টি জেলায় ট্রেনিং এবং বাছাইয়ের নেতৃত্ব দেন। এছাড়া, ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষকদের জন্য শার্টল টাইম কোচেস প্রোগ্রামে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন শিব্বির আহমদ। সম্প্রতি বাংলাদেশ যুব গেইমস-এ ব্যাডমিন্টন ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন সিলেটের সাহেদ-মাসুম জুটির কোচ হিসেবেও ছিলেন তিনি।
২০০৯ সালের শেষের দিকে খেলা ছেড়ে দিয়ে তিনি গড়ে তুলেন সিলেটের প্রথম ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষণ একাডেমি ‘সিলেট ব্যাডমিন্টন একাডেমি’। তার একাডেমি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেকে দেশের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। সালমান খান পরপর দুই বার ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়ান হয়ে র্যাংকিং এ প্রথম ছিলেন। এছাড়াও অনেকেই জাতীয় র্যাংকিং-এ স্থান করে নিয়েছেন। তাঁর একাডেমির ছাত্র বিশে^র অন্য দেশের জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে কাজ করছেন। ‘বন্ধু খালেদ এর উৎসাহে ১৯৮৯ সালে স্বনামধন্য প্রশিক্ষক মরহুম শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নিকট ভর্তি হওয়ার মাধ্যমে নিয়মিত ব্যাডমিন্টনে আবির্ভাব’ বলেন শিব্বির আহমদ। তিনি বলেন, ‘আগের দিনে গ্রামে সন্ধ্যার পর ব্যাডমিন্টন খেলা হতো। সেখানে ভালো খেলার সুনাম ছিল এবং খালেদের সাথে জুটি করে অনেক সময় খেলেছি। খালেদ আমাকে একদিন অফার দেয় কোচ শেখ জাহাঙ্গীরে নিকট সে প্রশিক্ষণের জন্য ভর্তি হচ্ছে। আমিও যেন তার সাথে ভর্তি হই। সে সব খরচ বহন করবে। পরে দুজনে এক সাথে কোচ শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীরের নিকট ভর্তি হই।’
ব্যাডমিন্টনে সিলেটের ব্যাপক সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী ও তরুণ-তরুণী খেলার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। কিন্তু সুযোগ সুবিধা না পাওয়ায় তারা পরে নিরুৎসাহিত হয়। অনেকে কিছুদিন খেলা চালিয়ে গেলেও পরে অসহযোগিতা, অনিশ্চয়তার কারণে খেলা ছেড়ে দিয়ে বিদেশ যাত্রা করে অথবা অন্য পেশায় যুক্ত হয়ে যায়। এমনকি ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড় ও প্রশিক্ষকরাও যথাযথ সম্মান পান না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সিলেটে নতুন খেলোয়াড় তৈরির কোন সুযোগ নেই। ব্যাডমিন্টনের খেলা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইনডোর স্টেডিয়াম মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে দীর্ঘদিন থেকে খেলা বন্ধ রয়েছে। কোন ক্যাম্প নেই, স্কুল প্রতিযোগিতা নেই, নেই সিনিয়র টুনার্মেন্ট। ব্যাডমিন্টনের উন্নয়নে কোন কাজই সিলেটে হচ্ছে না। অথচ সিলেট ব্যাডমিন্টনে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনাময়। ন্যাশনাল র্যাংকিংয়ে সব সময় সিলেটের ৬/৭ জন থাকেন। সম্প্রতি শেখ কামাল অনূর্ধ্ব-১৭ বাংলাদেশ যুব গেইমস-এ ১৪ থেকে ১৫ টি ইভেন্টে জাতীয়ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে একমাত্র ব্যাটমিন্টনে সিলেট স্বর্ণ জয় করে। শাহেদ-মাসুম জুটি সিলেটের জন্য স্বর্ণ নিয়ে আসে। অন্য কোন ইভেন্টেই সিলেট কোন পদক অর্জনে ব্যর্থ হয়। বর্তমানে ব্যাডমিন্টনে ডাবলসে জাতীয় চ্যাম্পিয়ন সিলেটের মিজান-নাঈম। অথচ ব্যাডমিন্টেনের ব্যাপারে কর্তাব্যক্তিরা সম্পূর্র্র্ণ উদাসীন। এতো অর্জনের পরেও ব্যাডমিন্টন নিয়ে কোন আলোচনা নেই। এভাবে চলতে থাকলে সিলেটের ব্যাডমিন্টন অন্ধকারে নিপতিত হওয়া ছাড়া পথ থাকবে না বলে হতাশা ব্যক্ত করেন দেশের অন্যতম ব্যাডমিন্টন কোচ শিব্বির আহমদ। তিনি বলেন, ঢাকায় সংশ্লিষ্টরা সিলেটকে বলতো ব্যাডমিন্টনের রাজধানী। সঠিক পরিকল্পনা ও পৃষ্ঠপোষকতা দিলে সিলেট ব্যাডমিন্টনের রাজধানী হিসেবে ব্রান্ডিং হতে পারে।