লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৩, ৭:৪১:২৬ অপরাহ্ন
ঝরণা বেগম
এমনিতেই দাবদাহ। তার মধ্যে অতিরিক্ত লোডশেডিং জনজীবনকে বিপর্যস্ত অবস্থায় নিয়ে গেছে। অনেক পরিবারে বৃদ্ধ, অসুস্থ সদস্য আছেন তাদের অবস্থা করুণ! বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম এর বিখ্যাত গানের কলি এই মুহূর্তে মনে পড়ছে,
গাড়ি চলে না। চলে না। চলে না রে গাড়ি চলে না।/ চড়িয়া মানব গাড়ি যাইতেছিলাম/ বন্ধুর বাড়ি মধ্য পথে ঠেকলো গাড়ি উপায় বুদ্ধি মিলে না।/ গাড়ি চলে না।/ ইঞ্জিনে ময়লা জমেছে।/ পার্সগুলো ক্ষয় হয়েছে।/ ডায়নমা বিকল হয়েছে/ হেড লাইট দুইটা জ্বলে না।/ গাড়ি চলে না। চলে না…
প্রথম আলোর এক খবর থেকে জানা যায়, দেশে জুন বা চলতি মাসের দুই তারিখ সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয় রাত ৯ টায়-১৪ হাজার ৩৭৭ মেগাওয়াট। এই সময় লোডশেডিং হয় মাত্র ৩৭৫ মেগাওয়াট। তারপর উৎপাদন কমতে থাকে, আর লোডশেডিং বাড়তে থাকে। গভীর রাতে উৎপাদন হয় এগারো থেকে সাড়ে এগারো হাজার মেগাওয়াট। গত শনিবার দুপুর বারোটায় সর্বোচ্চ লোডশেডিং হয়েছে- ২ হাজার ২৪৭ মেগাওয়াট।
এদিকে দেশের সরকারি অনেক সূত্রের দাবি মতে, দেশে বর্তমানে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা তেইশ হাজার ৩৭০ মেগাওয়াট। তবে প্রতিদিন জ্বালানির অভাবে সাড়ে চার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে আড়াই হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা বন্ধ রাখতে হয় সব সময়। বাদ বাকি ষোলো হাজার মেগাওয়াট থেকে উৎপাদন করা হচ্ছে বারো থেকে প্রায় চৌদ্দ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ।
আমাদের দেশের ডিজিটাল সরকার প্রায় শতভাগ জনগণের ঘরে বা বাসায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছে। তবে বিদ্যুতের প্রাথমিক উৎস গ্যাস, কয়লা এবং তেলের সংস্থান করতে পারেনি। একটা সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কম ছিল। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে জ্বালানির মূল্য বেড়ে যায়। বিশেষ করে তেল। তবে বর্তমানে তেলের দাম কিছুটা কমেছে শোনা যাচ্ছে। কমলে তো হবে না, ডলার সংকটের কারণে কয়লা আমদানি করতে না পারায় দুই দফায় বন্ধ রাখতে হয় রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে। প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে এক হাজার তিনশত বিশ মেগাওয়াটের পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রও।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও স্বীকার করেছেন, লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ার কথা। তাঁর এই স্বীকারোক্তিকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা বলবো, এক-দুই ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সহ্য করা যায় তবে ঘণ্টার পর ঘন্টা বিদ্যুৎহীন থাকা যায় না। তাই দয়া করে প্রচন্ড এই দাবদাহের সময় জনজীবনকে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন। আমরা সাধারণ জনগণ আর রাতের বেলা অন্ধকার চাই না। আমরা চাই আলো।
লেখক : আইনজীবী।