সিলেট থেকে মরিশাস জাতীয় দলের কোচ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১২ জুন ২০২৩, ৮:২৭:৫১ অপরাহ্ন
সিএম ইউনুস :
{সিলেটের দ্বিতীয় জনপ্রিয় খেলা ব্যাডমিন্টন। ক্রিকেটের পরেই ফুটবল থেকেও জনিপ্রয় এখন ব্যাডমিন্টন। খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্টে জাতীয় ভাবে সিলেটের সবচেয়ে ভালো অর্জন ব্যাডমিন্টনে। ব্যাডমিন্টনে সিলেটের অনেকেই জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। বর্তমান জাতীয় চ্যাম্পিয়ন জুটি সিলেটের। বাংলাদেশে যুব গেইম-এ ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন সিলেট। জাতীয় দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন সিলেটের কোচ। ব্যাডমিন্টনে সিলেটের অর্জন, সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে আমাদের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের আজ পর্ব-২}
ভারত, মালয়েশিয়াসহ বিশে^র ৪টি দেশের স্বনামখ্যাত ৪ জন আবেদন করেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে অন্য দেশে বা ক্লাবে কোচ হিসেবে বেশ সফলতা দেখিয়েছেন। কোচ নিয়োগে ভাইভা, কোচ এর পরিকল্পনা ও কৌশল এবং অর্জন বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করা হয়। সকল প্রক্রিয়া ও পরীক্ষা শেষে সবাইকে পেছনে ফেলে ভারত মহাসগরীয় দেশ মরিশাস এর জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের প্রধান কোচ এর দায়িত্ব গ্রহণ করেন সিলেটের ময়নুল ইসলাম মুন্না। তাঁর নেতৃত্বে ইতিমধ্যে মরিশাস অল আফ্রিকা জুনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপ টুনার্মেন্ট চ্যাম্পিয়ন ও সিনিয়রে রানার্সআপ হয়েছে। ১ বছরের মধ্যে মরিশাস এর সফল কোচদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন সিলেটের ময়নুল ইসলাম মুন্না।
মুন্না মরিশাস এর জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে যোগ দেয়ার পূর্বে মালয়েশিয়া ও ভারতের কেরালায় প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। মালয়েশিয়ার পেতালিকজায়ার নিউ ভিশন ব্যাডমিন্টন একাডেমির এসিসটেন্ট কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। সেখানে একাডেমির প্রধান কোচ ছিলেন স্বনামধন্য প্রশিক্ষক ইউগেনদেন কৃষ্ণা। ২০১৫ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় কাজ করার পর ভারতের কেরালায় ‘ইসা এমবিবিএস’ নামের একটি একাডেমিতে প্রধান কোচ হিসেবে যোগদান করেন ময়নুল ইসলাম মুন্না। ২০২০ এর ফেব্রুয়ারিতে দেশে এলে করোনা মহামারীর কারণে আর ফিরে যাওয়া হয়নি। ২০২২ এর প্রথম দিকে মরিশাস এর নতুন কোচ নিয়োগের ঘোষণা আসে। মালয়েশিয়ায় তাঁর সিনিয়র ইউগেনদেন কৃষ্ণার পরামর্শে আবেদন করলে মরিশাস ক্রীড়া মন্ত্রনালয়ের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে প্রধান কোচ নির্বাচিত হন ময়নুল ইসলাম মুন্না।
দক্ষিণ সুরমার বরইকান্দি কাজীরখলা ১নং রোডের বাসিন্দা মো. কামাল মিয়ার ছেলে ময়নুল ইসলাম মুন্না ৪ ভাইয়ের মধ্যে সবার বড়। সিলেটের স্বনামধন্য ব্যাডমিন্টন প্রশিক্ষক শিব্বির আহমদের মাধ্যমে নিয়মিত ব্যাডমিন্টনে তাঁর যাত্রা শুরু ২০০৮ সালে। স্থানীয় মাঠে খেলতেন, তখন তার খেলা দেখে তাকে প্রেকট্রিসের সুযোগ দেন এবং তাঁর পিতার সাথে কথা বলে প্রশিক্ষণের দায়িত্ব গ্রহণ করেন শিব্বির আহমদ। এক বছরের মধ্যেই তিনি জাতীয় পর্যায়ে খেলায় অংশগ্রহণ করেন। কোচ শিব্বির আহমদ সহায়তা না করলে এই অবস্থায় আসতে পারতেন না বলে জানান ময়নুল ইসলাম মুন্না। প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার পূর্বে দেশের একজন প্রথম সারির শাটলার হিসেবে খেলেছেন মুন্না। ন্যাশনাল ব্যাডমিন্টনের টিম গঠনে বাছাই প্রতিযোগিতায় তিনি রানার্সআপ ছিলেন। মালয়েশিয়া, ভারতসহ দেশবিদেশের বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করেছেন তিনি।
২০২২ এর মার্চে দায়িত্ব গ্রহণের পর ডিসেম্বরে মরিশাস প্রথম বারের মতো অল আফ্রিকা জুনিয়র চ্যাম্পিয়ানশীপ টুনার্মেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়। দুই মাস পরে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে অল আফ্রিকান নেশন সিনিয়র চ্যাম্পিয়নশীপ টুনার্মেন্টের (মিক্স গ্রুপে) রনার্সআপ হয় মরিশাস। গত ৪ বছর মরিশাসের কোন অর্জনই ছিলো না বলে জানান মুন্না। অল আফ্রিকা চ্যাম্পিয়নশীপ টুনার্মেন্টে চ্যাম্পিয়ান হওয়ায় তারা আগামী সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে ওয়ার্ড জুনিয়র ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ানশীপে সরাসরি অংশগ্রহণ করবেন। এরপূর্বে আগামী আগস্টে তারা ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য আইওআইজি (ইন্ডিয়ান ওশান আইসল্যান্ড গেইম) টুনার্মেন্টে সবগুলো স্বর্ণ জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছেন বলে জানান তিনি।
‘
ছোট একটি দেশ মরিশাস, সকালে বের হলে দুপুরের মধ্যে সমস্ত দেশ ঘুরে আসা যায়। অথচ আমাদের দেশ তাদের তুলনায় অনেক বড় এবং বিপুল জনসংখ্যা। তবে অর্জন সেই তুলনায় নেই। তাদের সাথে আমাদের পার্থক্যটা হলো পরিকল্পনায়। আমাদের খেলোয়াড় আছে, কিন্তু কোন পরিকল্পনা নেই।’- বাংলাদেশ ও মরিশাস এর পার্থক্যটা এভাবেই তুলে ধরেন মুন্না। তিনি জানান ‘তাদের আছে ক্রীড়া পরিকল্পনা। প্রতিবছর কখন কোন প্রতিযোগিতা হবে, লীগ, ক্যাম্প কতগুলো হবে সবগুলো বিষয়ে বছরের প্রথমেই পরিকল্পনা নেয়া হয়। এখানে এসে তাকেও প্রথমেই সারাবছরের একটি পরিকল্পনা তুলে ধরতে হয়েছে। আছে সাটলারদের পৃষ্টপোষকতা। দলে স্থান পাওয়া প্রত্যেকের জন্য ভাতার সুবিধা। অল আফ্রিকা নেশন কাপে তারা ফাইলানে উঠার পর প্রশিক্ষণ চলাকালে ক্রীড়া মন্ত্রী নিজে প্রেকট্রিস মাঠে আসেন। একা বসে কিছুক্ষণ প্রেকট্রিস দেখে চলে যান।
সিলেট সম্পর্কে বলেন, ব্যাডমিন্টন-এ সিলেটের ব্যাপক সম্ভবনা আছে। তবে সঠিক পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অভাবে ব্যাডমিন্টন-এ পিছিয়ে যাচ্ছে সিলেট। একসময় জাতীয় র্যাংকিং-এ সিলেটের অনেকেই ছিলেন, এখন হাতে গোনা কয়েক জন আছেন। স্কুল টুর্নামেন্ট, লীগ ও ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হলে নতুন নতুন শাটলার বের হয়ে আসবেন। ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা বছরে অন্তত ২/৩টি টুর্নামেন্ট করতে পারলে ব্যাপক সুফল আসবে। তিনি বলেন, শুধু সিলেট শহর নয়, সিলেটের গ্রামেগঞ্জে টুর্নামেন্টে খেলেছি। সেখানে দেখেছি অনেক ভালো ভালো শাটলার আছেন। তিনি বলেন, আমাদের শাটলারদের সব খরচ নিজে বহন করতে হয়। ফলে খেলায় মনোযোগ দেয়ার পাশাপাশি তাকে আর্থিক বিষয়টি দেখতে হয়। সিলেটের সেরা ৩ থেকে ৪ জনকেও যদি সম্মানীর ব্যবস্থা করা যায় তবে সিলেট থেকে বের হয়ে আসবে বিশ^মানের শাটলার।