জলবায়ু পরিবর্তনে মৃত্যু
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৩, ৩:৩৫:৩৩ অপরাহ্ন

যে দৃষ্টির সঙ্গে মনের যোগাযোগ নেই সে তো দেখা নয়, তাকানো। -যাযাবর
জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্বব্যাপি অতি আলোচিত বিষয়। গত কয়েক দশক ধরে ব্যাপারটি প্রকট আকার ধারণ করেছে। আর দিনে দিনে এর বিরূপ ক্ষতিকারক প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মানবজাতি। সম্প্রতি একটি জরিপের তথ্য হচ্ছে-জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে গত ৫০ বছরে বিশ্বে অন্তত ২০ লাখ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এ সময়ে চার লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলারের সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে। জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডব্লিউএমও) এই জরিপ পরিচালনা করে।
পরিবর্তিত জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে সারা বিশ্বে নানা ধরণের বিপর্যয় ঘটছে। কৃষিতে বিপর্যয় ঘটছে, বিপর্যস্ত হচ্ছে জীববৈচিত্র্য। জরিপের তথ্য হচ্ছে- ১৯৭০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ৫১ বছরে ১১ হাজার ৭৭৮টি প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘটনা ঘটেছে। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে নানা ধরণের দুর্যোগ।আর দুর্যোগের কারণে মৃত্যুর ৯০ শতাংশই উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঘটেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে অরক্ষিত জনগোষ্ঠিগুলোই চরম আবহাওয়ার কারণে বেশি ক্ষয়ক্ষতির স্বীকার হয়েছে। আর অপর একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা গেছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতির বিচারে শীর্ষ ১০টি ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে প্রথমেই অবস্থান করছে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ততার বিচারে বিশ্বব্যাপি গবেষকগণ বাংলাদেশকে ‘পোস্টার চাইল্ড’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। ইতোপূর্বে বিজ্ঞানিগণ সতর্ক করেছিলেন যে, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ জলবায়ু পরিবর্তনের নির্মম শিকার হবে। দফায় দফায় বন্যা, ঘূর্ণিঝড় ,অতিবৃষ্টি, নজিরবিহীন জোয়ারে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঘটনাই তাদের কথার সত্যতা প্রমাণ করে। মোটকথা, বাংলাদেশে একাধারে সমুদ্রস্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা সমস্যা, হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর দিক পরিবর্তন, বন্যা ইত্যাদি সবগুলো দিক দিয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাত্রাও অনেক অনেক বেশি। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে এই সবগুলো মানদন্ডই কার্যকর নয়। তাই এই চারটি মানদন্ডেই বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় শীর্ষে।
জলবায়ু পরিবর্তন একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক নিয়ম। এবং এটা অবধারিত। তাই এব্যাপারে মানুষের কিছুই করার নেই। -এটাই হয়তো বদ্ধমূল ধারণা সবার। কিন্তু এর পাশাপাশি আরেকটি কথাও বলছেন বিশেষজ্ঞগণ। তাদের মতে, একথা অনস্বীকার্য যে, বিশ্বব্যাপি জলবায়ুর পরিবর্তন শুধুমাত্র প্রাকৃতিক কারণেই নয়, এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণও রয়েছে। সুতরাং এই মানবসৃষ্ট কারণগুলো যাতে দমিয়ে রাখা যায়, সেদিকেই নজর দিতে হবে। সেইসঙ্গে পরিবর্তিত জলবায়ুর সঙ্গে কৃষিউৎপাদনসহ সার্বিক জীবনযাত্রাকে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।