ব্যাডমিন্টন:পর্ব-৩
জাতীয় র্যাংকিংয়ে অবস্থান হারাচ্ছে সিলেট
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৩, ৪:৩২:৪৯ অপরাহ্ন
নেই স্কুল প্রতিযোগিতা, ক্যাম্প, টুর্নামেন্ট
সিএম ইউনুস:
ব্যাডমিন্টনে জাতীয় র্যাংকিং-এ স্থান পাওয়া মোট শাটলারদের মধ্যে সিলেটেরই থাকতেন প্রায় অর্ধেক। জাতীয় র্যাংকিং এর ১৬ জনের মধ্যে ৭/৮ জন ছিলেন সিলেটের। তবে, জাতীয় ব্যাডমিন্টনে সিলেট এই আধিপত্য হারাতে বসেছে। এখন এই সংখ্যা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৩ জনে। খেলা ও প্রশিক্ষণের অপ্রতুল সুযোগ এবং স্কুল প্রতিযোগিতা, সিনিয়র টুর্নামেন্ট অথবা ব্যাডমিন্টন ক্যাম্পসহ কোন ধরনের কার্যক্রম না থাকায় নতুন খেলোয়াড় তৈরি হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন শাটলদের অনেকে।
সিলেটের শাটলাররা জানান, কিছুদিন পূর্বেও ব্যাডমিন্টনে জাতীয় প্রতিযোগিতায় অধিকাংশ পুরস্কার সিলেটের দখলে ছিল। জাতীয় জুনিয়রে একক ও ডাবলস, সিনিয়রে একক ও ডাবলস্ সবগুলো সিলেটের দখলে ছিল। এখন সিলেটের দখলে রয়েছে শুধুমাত্র একটি ডাবলস্ চ্যাম্পিয়ন।
সাবেক শাটলাররা জানান, একসময় ব্যাডমিন্টনকে মনে করা হতো সিজনাল খেলা। শুধুমাত্র শুকনো মৌসুমে ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত এই খেলা হতো। নব্বইয়ের দশকে কোচ শেখ মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর প্রথম পরিচয় করিয়ে দেন ব্যাডমিন্টন সারা বছর খেলা যায় এবং জাতীয়ভাবে টুর্নামেন্ট হয়। তাঁর নেতৃত্বে তৎকালীন সময়ে তাঁরা যখন মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে ব্যাডমিন্টন খেলার দাবি নিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নিকট গিয়েছিলেন তারা আশ্চর্য হয়ে বলেছিলেন, ‘এখন ব্যাডমিন্টন কিতা’। ধারণাই ছিলো না ব্যাডমিন্টন সব সিজনের খেলা, জাতীয় পর্যায়ে খেলা হয়। তখন মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে অনেক এথলেটিক ইকুইপমেন্ট ছিল। ক্রীড়াসংস্থা শর্ত দেয়, জিমনেসিয়াম থেকে কোন কিছু খোয়া গেলে তাদের দিতে হবে। শর্ত মেনেই মোহাম্মদ আলী জিমিনেসিয়ামে খেলা শুরু করেন তারা। এর দুই বছরের মধ্যে জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে সিলেট পদক আনলে এরপর ধারণা বদলায় বলে জানান তারা। প্রথমদিকে লিয়াকত, মিলাদ, শিব্বির, কাইয়ুম, মুরাদসহ অনেকে লেখতেন।
এরপরে এসেছে তারেক, দুলাল, খালেদ, রেজা, বাবলুসহ অনেকে। এরপর অগ্রগতি হওয়া শুরু হয়েছে। ২০১৩ সালে সিলেটের হয়ে প্রথম বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হন এনাম। পরে দুলাল, খালেদ, সালমান চ্যাম্পিয়ন হন। বর্তমানে ডাবলসে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন সিলেটের মিজান-নাঈম। এছাড়া, জাতীয় র্যাংকিং-এ ৩য় সিলেটের আব্দুল হামিদ লোকমান। সিলেটের গৌরব সিংহ বাংলাদেশ গেইম এবং সামার র্যাংকিং চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ যুব গেইমে সম্প্রতি চ্যাম্পিয়ন সিলেটের সাহেদ-মাসুদ। সাহেদ আহমদ সাউথ এশিয়া রিজিওনাল টুনার্মেন্টে অনূর্ধ্ব-১৭ ইভেন্টে তৃতীয় এবং বাংলাদেশ যুব গেইম ২০২৩ এর এককেও চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। দেশে মেয়েদের ডাবলসে জুনিয়র চ্যাম্পিয়ন হন সিলেটের অরিন ও জাহি। ২০১৬-এ ইন্টারন্যাশনাল টুর্নামেন্টে জুনিয়র ডাবলসে চ্যাম্পিয়ন সিলেটের মেয়ে আমরিনা ইসলাম মৌলি ।
‘ঢাকার অনেকেই সিলেটকে বলতেন,ব্যাডমিন্টনের রাজধানী’। সিলেট তাঁর এই অবস্থান হারাতে বসেছে বলে আক্ষেপ করেন সিলেটের সাবেক ব্যাডমিন্টন শাটলারদের অনেকে। তারা বলেন, সিলেটে দীর্ঘদিন থেকে ব্যাডমিন্টনের স্কুল প্রতিযোগিতা, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট, সিনিয়র প্রতিযোগিতা নেই। ব্যাডমিন্টনের কোন ক্যাম্প হয় না। লীগ প্রতিযোগী তাতো কল্পনাই করা যায় না। ২০১৬ সালে স্কুল প্রতিযোগিতা ও মেয়েদের ব্যাডমিন্টন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর আর কোন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়নি। এর মধ্যে করোনা মহামারি দেখা দেওয়ায় খেলাধুলা বন্ধ থাকে। করোনা পরবর্তী প্রায় ৩ বছর অতিক্রান্ত হতে চললেও কোন প্রতিযোগিতা হচ্ছে না। জাতীয় ব্যাডমিন্টন দলের কোচ শিব্বির আহমদ জানান, ২০১৫-১৬ সালে স্কুল টুর্নামেন্ট; মহিলা ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট হয়েছে, মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে করেছি। ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলাম, এখন এর কিছুই নেই। বছরে স্কুল টুর্নামেন্টও যদি করানো যেতে তাহলে অনেক ছেলে মেয়ে পাওয়া যেতো। তিনি বলেন, ক্যাম্প নেই, স্কুল প্রতিযোগিতা নেই, বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে নেই, স্পন্সর নেই অর্থাৎ খেলোয়াড় তৈরির কোন কার্যক্রম নেই। সংশ্লিষ্ট অনেকে অভিযোগ করেন, জেলা ক্রীড়া সংস্থা ব্যাডমিন্টনের জন্য কোন কর্মসূচি নেয়নি। ৬ থেকে ৭ বছর কোন প্রোগ্রাম-প্রতিযোগিতা ছাড়াই চলছে সিলেটের ব্যাডমিন্টন।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ব্যাডমিন্টন কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম শামীম করোনা মহামারির কারণে ব্যাডমিন্টনে সিলেটে পিছিয়ে যাবার কথা স্বীকার করেন। করোনা, বন্যাসহ বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন কোন টুর্নামেন্ট আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। তবে এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। শিগগিরই স্কুল টুর্নামেন্ট, সিনিয়র ও জুনিয়র টুর্নামেন্ট আয়োজন করা হবে। সিটি নির্বাচনের পরেই এই কার্যক্রম শুরু হবে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম জানান, জেলা ব্যাডমিন্টন কমিটিকে নিয়ে বৈঠক করে টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে বলা হয়েছে। তারা শিগগিরই টুনার্মেন্টে আয়োজন করবেন বলে জানান তিনি।