প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্রের মহড়া কাউন্সিলর আফতাবকে ইসিতে তলব
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৩, ৫:১১:০৩ অপরাহ্ন

সাঈদ আব্দুল্লার বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা ॥ ১৮ মামলার আসামী অস্ত্রধারী তুহিন এখনো অধরা
স্টাফ রিপোর্টার : আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামীকাল বুধবার বিকেল ৩টায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে তাকে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছে। গতকাল সোমবার সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী মো. মিজানুর রহমান এ তথ্য জানান। অন্যদিকে, আফতাব হোসেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। ওই মামলায় আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গত রোববার রাতে মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) ও স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনে মামলা হয়েছে। তবে সেই অস্ত্রধারী আবুল কালাম আজাদ তুহিন এখনো গ্রেফতার হয়নি।
নির্বাচন কমিশনের জনসংযোগ শাখার পরিচালক মো. শরিফুল আলম জানান, সিসিক নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খানের (ঘুড়ি প্রতীক) বিরুদ্ধে অপর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বাড়ির সামনে সশস্ত্র মহড়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ ও ছবি বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। তাছাড়া, ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিল প্রার্থী সায়ীদ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ (লাটিম প্রতীক) এ বিষয়ে কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জনসংযোগ পরিচালক আরও জানান, অভিযোগের ভিত্তিতে রিটার্নিং অফিসার তদন্ত করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন। তদন্তে ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া গেছে।
মো. শরিফুল আলম বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬ এর বিধি ৩০ লঙ্ঘনের দায়ে, বিধি ৩১ ও ৩২ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল অথবা তার বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, সে বিষয়ে লিখিত বক্তব্যসহ নির্বাচন কমিশনে আগামী ১৪ জুন বিকেল ৩টায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য নির্বাচন কমিশন নির্দেশনা প্রদান করেছে।
পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ গত শুক্রবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন। তিনি তাতে উল্লেখ করেন, গত মঙ্গলবার বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে ১০-১২টি মোটরসাইকেলে ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তার বাসার ফটকের সামনে আসেন। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক তাক করে তাকে (আবদুল্লাহ) ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেন। পাশাপাশি ঘর-বাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানায় মামলা হয়। মামলার প্রধান আসামী করা হয় কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানকে।
অপরদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আবদুল্লাহকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন আফতাব অনুসারী সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক মো. শাহানুর আলম। মামলায় আরও ৭০-৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। গত রোববার রাতে মহানগর পুলিশের বিমানবন্দর থানায় আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) ও স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
নৌকার মেয়র প্রার্থীর কর্মীকে মারধরের অভিযোগ এনে সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের অর্থ সম্পাদক মো. শাহানুর আলম বাদী হয়ে সাঈদসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (মিডিয়া) সুদীপ দাস মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এছাড়া,এই মামলায় দু’জনকে আটকও করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে- বনকলাপাড়া (দিঘীরপাড়) এলাকার মৃত তখলিছুর রহমানের ছেলে সাঈদ আব্দুল্লাহ (৩৬), পশ্চিম পীর মহল্লার ঐক্যতান ২২০ নং বাসার আব্দুল খালিকের ছেলে আবুল কালাম মাস্টার (৪৫), বনকলাপাড়া নূরানী ১০৪/৩ নং বাসার কাজী মিজান (২৯), পশ্চিম পীরমহল্লা ৩৬ নং বাসার সন্দু মিয়ার ছেলে জুনেদ আহমদ (৩৫), অগ্রণী আ/এ এলাকার গেসু মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া (২৬), বনকলাপাড়া এলাকার শাহীন (৩০), একই এলাকার ৮২ নং গলির মুমিন মিয়ার ছেলে রাজন আহমদ, কানাইঘাটের ভাল্লুকমারা গ্রামের মৃত তাহের আলীর ছেলে আলাউদ্দিন (৩৭), বনকলাপাড়া এলাকার নূরানী ৪৭ নং বাসার ছবের মিয়া (৩৪), একই এলাকার নূরানী ৬৮/১ নং বাসার মনির উদ্দিনের ছেলে এমাদ উদ্দিন সুয়েব (৩৩), বাগেরহাটের বড় বাদুড়া গ্রামের মৃত নুরুল ইসলামের ছেলে মতিউর রহমান মৃধা (৪২), বনকলাপাড়া এলাকার নূরানী ৮৩/২৫ নং বাসার মীর হোসেন ভূইয়ার ছেলে আমিন মিয়া (৩২), একই এলাকার নূরানি ৪০ নং বাসার আল আমিন (২৮)।
মামলায় শাহানুর আলম উল্লেখ করেন, আসন্ন নির্বাচনে তিনি নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থীর পক্ষে গঠিত গৌছ উলুম জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসা, পশ্চিম পীরমহল্লা ভোট কেন্দ্র কমিটির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে রয়েছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পাশাপাশি তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আফতাবের প্রচারে সম্পৃক্ত রয়েছেন। গত ৬ জুন রাত ৮টায় প্রচার কার্যক্রম শেষে তিনি কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মো. আবদুল্লাহর নেতৃত্বে ৩৫-৪০টি মোটরসাইকেল তাকে ধাওয়া দেয় এবং হামলা চালিয়ে আহত করে।
অপরদিকে. কাউন্সিলর আফতাবের পক্ষে প্রতিপক্ষের বাসার দিকে আগ্নেয়াস্ত্র উচিয়ে হুমকি দিয়ে ভাইরাল হওয়া আবুল কালাম আজাদ তুহিন বর্তমানে ‘আত্মগোপনে’ রয়েছেন। কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানও এলাকায় নেই। পুলিশ বলছে,৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ তুহিনকে ‘খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না’। র্যাবও খুঁজছে তাকে।
এদিকে, সেই অস্ত্র মহড়ার ভিডিও ফুটেজ ফেইসবুকে ভাইরাল হয় গত বৃহস্পতিবার। ফুটেজে দেখা যায়, বহরের একটি মোটরসাইকেলে ছিলেন কাউন্সিলর আফতাব। এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে সিলেট জুড়ে। একসময় পরিচয় শনাক্ত হয় আফতাবের অনুসারী সেই অস্ত্রধারীর। তার নাম আবুল কালাম আজাদ ওরফে তুহিন। তিনি মহানগরের লন্ডনী রোডে দীর্ঘদিন ধরে পরিবারের সাথে বসবাস করে আসছেন। তার স্থায়ী ঠিকানা নোয়াখালীর সেনবাগে। বাবার নাম নুরে আলম। বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা-ের কারণে তুুহিনের বিরুদ্ধে ১৮টি মামলা চলমান। সর্বশেষ তুহিন ২০২১ সালে অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছিলো র্যাবের হাতে। তার বিরুদ্ধে ২০১০ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মাদক, অস্ত্র, ছিনতাই , সন্ত্রাসী কার্যকলাপ ও প্রতারণার অভিযোগে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় ১৮টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ বার।
উল্লেখ্য, আগামী ২১শে জুন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিলেট সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আফতাব হোসেন খাঁন ঘুড়ি প্রতীক, সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ লাটিম প্রতীক ও মো. জাহিদ খান সায়েক ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।