সিলেটে সড়কে প্রাণহানি থামছে না
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ জুন ২০২৩, ৫:২৪:৫০ অপরাহ্ন
একদিনে আরো ৪ জনের মৃত্যু ॥ আহত ১২
স্টাফ রিপোর্টার : সিলেটে সড়কে প্রাণহানি থামছে না। ওসমানীনগরে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ জনের প্রাণহানির রেশ কাটতে না কাটতেই সিলেটে সড়কে প্রাণ গেল আরো ৪ জনের। আহত হয়েছেন অন্তত ১২ জন। গতকাল সোমবার পৃথক তিনটি সড়ক দুর্ঘটনায় এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ওসমানীনগরে দুই ট্রাকের সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই ৩ জন নিহত হন। সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে ট্রাকচাপায় প্রাণ হারিয়েছেন মোটরসাইকেল চালক। এছাড়া, কানাইঘাট উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে ১২ জন আহত হন। তাদের মধ্যে গুরুতর আহত দু’জন রয়েছেন।
সিলেটে সড়কে প্রাণহানি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তামাবিল হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবুল কাশেম বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ওভারস্পিডে যাতে কেউ গাড়ি না চালায়, সে ব্যাপারে তাদের মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি সচেতনতামূলক বিভিন্ন কর্মসূচিও চালানো হচ্ছে।
ওসমানীনগর থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ওসমানীনগরে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে ৩ জন নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন একজন। নিহত ও আহত উভয়ই দুই ট্রাকের চালক এবং হেলপার বলে নিশ্চিত করেছে হাইওয়ে পুলিশ। গতকাল সোমবার ভোর ৫টার দিকে উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নের মহাসড়কের সোয়ারগাঁও নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, গতকাল ভোর ৫টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাড়কের সোয়ারগাঁও নামক স্থানে মেরামতের জন্য দাঁড়ানো একটি ট্রাকের পেছনে ঢাকাগামী একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। এসময় চাকা মেরামত করতে থাকা ট্রাকের চালক (৫০) ও হেলপার (৩৮) এবং ধাক্কা প্রদানকারী ট্রাকের হেলপার (৪০) ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ধাক্কা দেওয়া ট্রাক চালকের পা দুটি থেতলে যায়। তামাবিল হাইওয়ে পুলিশের ওসি আবুল কাশেম হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বিয়ানীবাজার থেকে সংবাদদাতা জানান, বিয়ানীবাজারের আলীনগর ইউনিয়নে সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার বেলা ৩টায় বিয়ানীবাজার-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের টিকরপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেলে পেছন দিক থেকে ট্রাক ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহত মাইদুল ইসলাম (২৭) সিলেটের মেটাল প্লাস নামে একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি গাইবান্দা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নওশের আলীর পুত্র। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশের একটি দল দুর্ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। এ সময় পুলিশ ট্রাক ও মোটরসাইকেল জব্দ করে। তবে, ট্রাক চালক ও তার সহকারী পালিয়ে যায়। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন নিহত মাইদুল ইসলামের সহকর্মীরা। তারা নিহতের পরিচয় নিশ্চিত করেন। মেটাল প্লাসের সিলেট জোনের ম্যানেজার সেলিম হোসেন জানান, গতকালও প্রতিদিনের মতো অফিসের কাজে বিয়ানীবাজার উপজেলায় এসেছিলেন মাইদুল। কাজ শেষে বেলা ৩টায় মোটরসাইকেল নিয়ে টিকরপাড়া এলাকায় পৌঁছালে একটি ট্রাক (ঢাকা মেট্রো-ট-২৪-১৭৫৬) পেছন থেকে তাকে ধাক্কা দেয়। এতে মোটরসাইকেল থেকে তিনি ছিটকে পড়েন এবং তার পুরো মাথা থেতলে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ মো. তাজুল ইসলাম জানান, ঘাতক ট্রাক এবং মোটরসাইকেল উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। দুর্ঘটনার পরপরই ট্রাক চালক পালিয়ে গেছে। তাকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কানাইঘাট থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, কানাইঘাট উপজেলায় যাত্রীবাহী একটি বাস খাদে পড়ে ১২ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছেন দুইজন। গতকাল সোমবার বেলা ১টার দিকে সিলেট-জকিগঞ্জ সড়কে উপজেলার সাতবাঁক ইউনিয়নের জুলাইর ব্রিজ নামক স্থানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জকিগঞ্জ থেকে সিলেটের দিকে আসছিল যাত্রীবাহী একটি বাস (সিলেট-জ ১১-০২৪০)। এসময় অন্য বাসকে অতিক্রম করতে গিয়ে বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এত ১২ জন আহত হয়। পরে স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধার করে কানাইঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও গুরুতর আহতদের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। কানাইঘাট থানার সেকেন্ড অফিসার সুহেল মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গুরুতর আহত দুজন ছাড়া বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন বলেও জানান তিনি। প্রসঙ্গত গত ৭ জুন ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দক্ষিণ সরমার নাজির বাজারের কুতুবপুরে ট্রাক-পিকআপের সংঘর্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। নিহত শ্রমিকরা নগরীর আম্বরখানা এলাকা থেকে ঢালাই কাজের জন্য ওসমানীনগর উপজেলার তাজপুর যাচ্ছিলেন।