বৃক্ষমেলা নয়, উদ্ভিদ মেলা
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৩, ২:৪৯:২০ অপরাহ্ন
প্রফেসর মো. আজিজুর রহমান লসকর
বর্ষার বৃষ্টি¯œাত বৃত্তিকায় সারাদেশ জোড়ে মানুষ নানা প্রকারের উদ্ভিদের চারা রোপণে ব্যস্ত হয়ে উঠেন। তখন রাজধানীসহ বাংলাদেশের সব শহরে বিভিন্ন প্রকারের উদ্ভিদের চারা নিয়ে মেলার আয়োজন করা হয়, যা ‘বৃক্ষমেলা’ নামে পরিচিত।
পৃথিবীতে প্রায় চার লক্ষ প্রজাতি নিয়ে উদ্ভিদ জগৎ। দৈহিক গঠন, জীবনকাল, আবাসস্থল ইত্যাদি বিবেচনায় উদ্ভিদগুলোকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এখানে আমরা কেবল দৈহিক গঠন বিবেচনায় উদ্ভিদের শ্রেণি বিভাগ নিয়ে আলোচনা করব। দৈহিক গঠন বৈচিত্র্যে উদ্ভিদ চার প্রকার হয়- (১) বৃক্ষ (ঞৎবব), (২) গুল্ম (ঝযৎঁন), (৩) উপগুল্ম (টহফবৎ ংযৎঁন) ও (৪) বিরূৎ (ঐবৎন)।
এদের মধ্যে বৃক্ষ, গুল্ম ও উপগুল্মের দেহ কাষ্ঠল। তাছাড়া বৃক্ষ, গুল্ম ও উপগুল্মের জীবনকাল দীর্ঘ, সাধারণত কয়েক বছর। এগুলোর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে, বৃক্ষের আকার বিরাট এবং সাধারণত দেহে প্রধান অক্ষ সুস্পষ্ট। আম, জাম, কাঁঠাল, মেহগণি, সেগুন ইত্যাদি হচ্ছে বৃক্ষ। গুল্মের আকার বৃক্ষের চেয়ে ছোট এবং দেহে গোড়া থেকে একাধিক শাখা থাকতে পারে; কিন্তু প্রধান অক্ষ স্পষ্ট নয়। নানা জাতের লেবু, পেয়ারা, আতা, শরিফা, জবা, চা ইত্যাদি গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। উপগুল্মের আকার গুল্মের চেয়ে ছোট। গোলাপ, বেলি, টগর, রঙ্গন, গন্ধরাজ, মুসায়েন্ডা ইত্যাদি উপগুল্ম। পক্ষান্তরে বিরূৎ হচ্ছে নরম কান্ড বিশিষ্ট ছোট উদ্ভিদ, এদের দেহ কাষ্ঠল নয়। বিরূতের জীবনকাল এক ঋতু, কয়েক মাস বা এক বছর। সবরকমের ঘাস, ধান, গম, সরিষা, মূলা, কপি, মরিচ, লাউ, কুমড়া, গাঁদা, ডালিয়া, কসমস, লিলি, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ ইত্যাদি বিরূৎ জাতীয় উদ্ভিদ।
প্রতি বছর নানা প্রজাতির বৃক্ষ, গুল্ম, উপগুল্ম ও বিরূৎ জাতীয় উদ্ভিদের চারা নিয়ে বাংলাদেশের সর্বত্র মেলার আয়োজন করা হয় এবং নাম দেয়া হয় ‘বৃক্ষমেলা’। যেহেতু এ মেলা কেবল বৃক্ষ নিয়ে নয়, বরং সকল শ্রেণির উদ্ভিদ নিয়ে, তাই এ মেলাকে ‘বৃক্ষমেলা’ না বলে ‘উদ্ভিদ মেলা’ বলাই যুক্তিসঙ্গত। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা আবশ্যক।
লেখক : প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগ, এমসি কলেজ, সিলেট।