ব্যাডমিন্টন: পর্ব-৪
শাটলার তৈরির ফ্যাক্টরি মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে খেলা বন্ধ
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৪ জুন ২০২৩, ৮:১৭:৫৬ অপরাহ্ন
সিএম ইউনুস:
সিলেটের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তৈরির ‘ফ্যাক্টরি’ হিসেবে খ্যাত ইনডোর স্টেডিয়াম মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে দীর্ঘদিন থেকে খেলা বন্ধ রয়েছে। জিমনেসিয়াম মাঠে মেলা, প্রদর্শনী, সভা-সিম্পোজিয়াম সবই হয়; শুধু খেলা হয় না বলে অভিযোগ করেন ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার ও কোচদের অনেকে। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার (ডিএসএ) নিকট বার বার অনুরোধ করে বিষয়টির কোন সুরাহা হচ্ছে না। তবে বিদ্যুৎ নিয়ে সমস্যা ও একটি দুর্ঘটনার কারণে খেলার জন্য মাঠ দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ডিএসএ’র সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম। শিগগিরই মাঠটি খেলার জন্য খুলে দেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সাবেক ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের অনেকেই জানান, মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়াম সিলেটে ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় তৈরির আতুড় ঘর। এখান থেকেই সব ব্যাডমিন্টন প্লেয়ার তৈরি হয়েছেন এবং সিলেটের একমাত্র ইনডোর মাঠ ছিল। পরে দ্বিতীয় ইনডোর মাঠ নির্মিত হয় নগরীর উপশহর পয়েন্ট সংলগ্ন আবুল মাল আব্দুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্স।
তারা জানান, সিলেটে নিয়মিত ব্যাডমিন্টন খেলা শুরু হয় ইনডোর স্টেডিয়াম মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়াম থেকে। ব্যাডমিন্টন টুনার্মেন্ট, অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ সবকিছুর জন্যই একমাত্র জায়গা ছিল এ জিমনেসিয়াম। আবুল মাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মিত হওয়ার পর দুই জায়গায় প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টি হয়। কিন্তু, প্রায় ২ বছর থেকে মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে খেলা বন্ধ থাকায় শুধুমাত্র আবুল মাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ইনডোর মাঠে ব্যাডমিন্টন অনুশীলনের সুযোগ পাচ্ছেন শাটলাররা। বর্তমানে পূর্বের তুলনায় প্লেয়ার,
প্রশিক্ষণার্থী ও আগ্রহী তরুণ তরুণীর সংখ্যা ব্যাপক বৃদ্ধি পেলেও উল্টো জিমনেসিয়ামে খেলাই বন্ধ হয়ে আছে বলে জানান তারা।
আলাপ করে জানা গেছে, সিলেটে বর্তমানে ব্যাডমিন্টনের প্রশিক্ষণ একাডেমি পরিচালনা করছেন ৪ জন। তাদের মধ্যে রয়েছেন প্রদীপ সিংহ, শিব্বির, এনাম ও মামুন। একটি মাত্র ইনডোর স্টেডিয়াম হওয়ায় ৪ জনের প্রশিক্ষণ পরিচালনায় সিডিউল সমস্যায় পড়তে হয় বলে জানান এক প্রশিক্ষক। প্রত্যেককে সিডিউল অনুযায়ী মাঠ ব্যবহার করতে হয়। অধিকাংশ স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী হওয়ায় তারা বিকেল ছাড়া সময় দিতে পারেন না। ফলে সবাই বিকেলে প্রশিক্ষণ পরিচালনার সুযোগ চান। আবার জাতীয় ও জেলা পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শাটলারদের অনুশীলনের জন্যও মাঠের প্রয়োজন। মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে খেলা বন্ধ থাকায় একটি মাঠেই চলছে সকলের অনুশীলন, প্রশিক্ষণ ও প্রতিযোগিতা। তাছাড়া, আবুল মাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স শহরের এক পাশে হওয়ায় অপর অংশ থেকে অনেকে যেতে চান না বলে জানান এক প্রশিক্ষক।
একজন প্রশিক্ষক জানান, মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামের ব্যাপারে কথা বলেও কোন কাজ হচ্ছে না। ক্রীড়া সংস্থার সাথে কথা বললে বলেন, আবুল মাল কমপ্লেক্স খোলা আছে সেখানে যান। মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামের বিদ্যুৎ বিল নিয়ে সমস্যা থাকায় তারা খেলা বন্ধ রেখেছেন বললেও মাঠে মেলা, প্রদর্শনীর, সভা-সিম্পজিয়াম এর জন্য সবগুলো লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। নতুন মিটারের মাধ্যমে লাইন দিলে নিজেরাই বিল পরিশোধ করবেন বলে জানালেও দিচ্ছি-দিব বলে কালক্ষেপন করা হচ্ছে। বেশি কথা বললে আবুল মাল কমপ্লেক্স্রেও প্রশিক্ষণের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেয়া হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি। এক সাবেক শাটলার জানান, দেশের কোথাও জিমনেসিয়ামে বা ইনডোর স্টেডিয়ামে মেলা, প্রদর্শনী ও অনুষ্ঠান হয় বলে শুনিনি। কিন্তু সিলেটের মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে ধারাবাহিকভাবে এসব আয়োজনের কারণ বোধগম্য নয়।
সিলেট ব্যাডমিন্টন সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য সিরাজুল ইসলাম শামীম বলেন, বিদ্যুৎ সম্পর্কিত একটি ব্যাপারে মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়াম বন্ধ রয়েছে। তবে মাঠটি দ্রুত খেলার জন্য খুলে দিবেন বলে জানান তিনি। এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাহি উদ্দিন আহমদ সেলিম বলেন, আবুল মাল ক্রীড়া কমপ্লেক্সের ইনডোর মাঠ ব্যাডমিন্টনের জন্য সকাল ৭ থেকে রাত পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে। সেখানে তারা সারাদিন প্রশিক্ষণ ও প্রস্তুতি নিতে পারছেন। অন্য কোন ডিসিপ্লিনের খেলোয়াড়রা এভাবে মাঠ ব্যবহার করতে পারছেন না। মোহাম্মদ আলী জিমনেসিয়ামে খেলা বন্ধের ব্যাপারে বলেন, ব্যাডমিন্টন একাডেমিগুলো স্টেডিয়ামের দেয়াল জুড়ে তাদের ব্যানার সেঁটে রাখায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক এসব অপসারণ করতে বলেন। এ কাজের সময় একজন শ্রমিক মারা যান। এ ঘটনার পর থেকে স্টেডিয়ামে খেলা বন্ধ রয়েছে। এছাড়া, বিদ্যুতের একটি সমস্যা আছে। তবে শিগগিরই মাঠ খুলে দেয়া হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান বলেন, বিষয়টি বিস্তারিত তাঁর জানা নেই। তিনি খবর নিতে বলেন এবং এ বিষয়ে ডিএসএ এর সাধারণ সম্পাদকের সাথে কথা বলতে বলেন। ডিএসএ সাধারণ সম্পাদক খুলে দেয়ার আশ্বাসে তিনিও ইতিবাচক মতামত দেন।