সংবাদ সম্মেলনে মেয়র প্রার্থী বাবুলের অভিযোগ
সরকার দলীয় প্রার্থী আমাকে চাপে রাখতে নানা অপকৌশল হাতে নিয়েছেন
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৩, ৫:৩১:৪৮ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ঃ সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীকের প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল অভিযোগ করেছেন, “আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে না দাঁড়ানো এবং মাহমুদুল হাসান ভোট থেকে সরে যাওয়ায়- এখন আমাকে চাপে রাখতে সরকার দলীয় মেয়র প্রার্থী নানা অপকৌশল হাতে নিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া ভিডিও ছড়ানোর পাশাপাশি কর্মসূচি পালনে বাধা, ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা এবং হুমকি-ধমকি অব্যাহত রয়েছে। এক কথায় সিলেটে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশ নেই।”
গতকাল বুধবার বিকেল চারটায় নগরীর কুমারপাড়াস্থ নির্বাচনী কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেন তিনি। তবে, সবকিছু উপেক্ষা করে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন জাপা মনোনীত এই প্রার্থী।
লিখিত বক্তব্যে বাবুল বলেন- “জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবারের সিসিক নির্বাচনে আমার হাতে লাঙল প্রতীক তুলে দেন। এরপর থেকে আমি ভোটের মাঠে আছি। কিন্তু আপনারা দেখতে পাচ্ছেন নির্বাচনের মাঠে কী ঘটতে চলেছে। এতে আমি শঙ্কিত।”
তিনি অভিযোগ করেন, “নানাভাবে তাকে চাপের মুখে রাখা হচ্ছে। সিলেটের মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের চোখরাঙানো হচ্ছে। দিন যতই যাচ্ছে, পরিস্থিতি ও পরিবেশ আরো ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
যে কোনো পরিস্থিতিতে ভোটের মাঠ ছেড়ে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে নজরুল ইসলাম বাবুল বলেন, ‘সিলেটে লাঙলের জোয়ার উঠেছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকা সত্ত্বেও জনতার জোয়ারে এবার সিসিক নির্বাচনে লাঙলের জয় হবে, ইনশাআল্লাহ।”
তিনি বলেন, “আমাকে ও আমার পরিবারকে হেনস্থা করতে ইতোমধ্যে তৈরি করা একটি ভুয়া ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের বিষয়টি অনুধাবন করে প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের কর্মী সমর্থকরা সিলেটে এ নগ্ন খেলায় মেতে উঠেছে। নগরবাসী বিষয়টি বুঝতে পেরে আরো দুর্বার গতিতে লাঙলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আমার বিচার দেয়ার জায়গা নেই। সিসিক এর রিটার্নিং অফিসার ও তার অফিসের দ্বারস্থ হয়ে একাধিক অভিযোগ দিলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। বরং, উল্টো মাঠে থাকা প্রশাসন আমাদের উপরই কড়াকড়ি আরোপ করছে।”
নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করে তিনি বলেন, “প্রতিপক্ষের প্রার্থী ভোররাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। তবুও নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা সব দেখে না দেখার ভান করছে।”
বরিশালের ঘটনার পর প্রার্থী সম্পর্কে সিইসির বক্তব্যে নিজে আতঙ্কিত বলে জানান জাপার এই প্রার্থী। তিনি বলেন, “সিইসি যেভাবে নিরপেক্ষ মাঠ প্রস্তুত রাখার কথা, সেখানে তিনি সরকার দলীয় প্রার্থীর পক্ষেই সাফাই গাইছেন। এতে আমি আতঙ্কিত।” “নগরবাসী জেগে উঠলে সব ষড়যন্ত্র, চক্রান্ত ছিন্ন করে সিলেটে লাঙলের জয় হবে” বলে মনে করেন তিনি।
বাবুল আরও বলেন, “গত মঙ্গলবার আমি সশরীরে হাজির হয়ে নির্বাচন কমিশনে আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নানা বিষয় উপস্থাপন করেছি। কিন্তু এখনো কমিশনের ঘুম ভাঙছে না।”
অভিযোগের মধ্যে রয়েছে-সিসিক নির্বাচনে কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। সরকারদলীয় প্রার্থী ক্রমাগত নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গ করে ভোররাত পর্যন্ত নির্বাচনী সভা, পথসভা, গণসংযোগ, মিছিল, মিটিং অব্যাহত রেখেছেন। নির্বাচন কমিশন প্রচারণার যে নিয়ম বেধে দিয়েছেন, তার কোনো তোয়াক্কা করা হচ্ছে না। লাঙল প্রতীকের ব্যানার, পোস্টার ও নির্বাচনী সরঞ্জামাদি ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে। আড়াল থেকে হুমকি দেয়া হচ্ছে নির্বাচনী মাঠে থাকা জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীদের। কর্মসূচিতে নানাভাবে বাধা দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গৃহবন্দি করে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু সিলেটের নির্বাচনী কর্মকর্তা আমাদের দাবি আমলে না নিয়ে আমাদের উপর বেশি পরিমাণ কড়াকড়ি করছেন।”
বাবুল বলেন, “ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কোটি কোটি টাকা খরচ করছেন। হলফনামায় দেয়া তার তথ্যের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই।” গতকাল বুধবার দেশের শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমসহ সব মাধ্যমে এসেছে- আওয়ামী লীগ প্রার্থী হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন। এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ নির্বাচন কমিশনে দাখিল করেছেন সিলেট নগরীর নরসিংটিলা এলাকার বাসিন্দা এ কে এম আবু হুরায়রা (সাজু)। অথচ, কমিশন এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তিনি নির্বাচিত হলে সুশীল সমাজের লোকদের নিয়ে নগর উন্নয়নে নাগরিক কমিটি গঠন করে কাজ করবেন।”
তবে জীবন গেলেও ভোটের মাঠ ছাড়বেন না উল্লেখ করে বাবুল বলেন, “চলমান সিটি নির্বাচন নিরপেক্ষ হলে দেশ বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। নতুবা সিলেটের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে থাকবে।”