পানি নিষ্কাশনের রাস্তা কাটা নিয়ে সোনাতলা রণক্ষেত্র
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৩, ৬:০৫:৩১ অপরাহ্ন
আহত অর্ধশতাধিক ॥ গভীর রাত অবধি উত্তেজনা
স্টাফ রিপোর্টার : সড়কের পানি নিষ্কাশনের জন্য একটি রাস্তা কাটাকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরীর মইয়ারচর ও পার্শ্ববর্তী সোনাতলা এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অর্ধ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। তাদের সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। অন্যদিকে, দু’পক্ষের সংঘর্ষে দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কুমারগাঁও-বাদাঘাট সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিলো। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরে এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও পুলিশের চেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাত ও বুধবার সকালের বৃষ্টিতে কুমারগাঁও-বাদাঘাট সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। ওই সড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে। সড়ক খুঁড়ে মাটি রাস্তার পাশে রাখায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সেই পানি অনেকের বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। গতকাল বুধবার সকাল ১১টার দিকে আটকে থাকা পানি নিষ্কাশনের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের বর্ধিত ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের মইয়ারচর, নয়া খুররমখলা, নাজিরেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দারা কুমারগাঁও-বাদাঘাট সড়ক অবরোধ করেন। তারা সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
খবর পেয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ঘটনাস্থলে গিয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে ফোন করে দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেন। দুপুর ২টার দিকে পানি নিষ্কাশনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের ৩৯ নং ওয়ার্ডের পার্শ্ববর্তী সোনাতলা এলাকার একটি রাস্তা কাটতে গেলে স্থানীয়রা এতে বাধা দেন। আর এই বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে সোনাতলা এলাকাবাসীর সঙ্গে মইয়ারচর, নোয়াখুররমখলা, নাজিরেরগাঁও গ্রামের লোকদের সংঘর্ষ শুরু হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয়পক্ষ একে অপরের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে পুলিশসহ উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। সংঘর্ষ চলাকালে মইয়ারচর এলাকার গ্রামের মুরব্বি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ সহ কয়েকজন একটি দোকানে আটকা পড়েন। এসময় উত্তেজিত লোকজন তাদের দোকান ঘিরে রাখে। নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের তাৎক্ষণিক বের হতে দেয়া হয়নি। পরে সন্ধ্যা ৬টার দিকে এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ আটকে পড়াদের উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে আসেন। এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো: নিজাম উদ্দিন, টুকেরাবাজর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শহীদ আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট নূরে আলম সিরাজী, কান্দিগাও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো: আব্দুল মনাফ, বিশিষ্ট মুরব্বি জিহাদ আহমদ, ব্যবসায়ী কয়সর আহমদ, ফজলুর করিম ফুল মিয়াসহ এলাকার মুরব্বীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিপুল সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবি সদস্য এলাকায় অবস্থান নেন। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে দু’পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এছাড়া উভয় পক্ষে অর্ধশতাধিক লোকজন আহত হন। তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম জানা যায়নি।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, এই এলাকা আমার নিজের এলাকা। উভয় পক্ষকে সংযত থাকার অনুরোধ জানিয়েছি। সংঘর্ষের খবর পেয়ে এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করি। এলাকাবাসী সংযত থাকবেন বলে আশা করি। তিনি সবাইকে সংঘাত পরিহার করে টেবিলে বসে সমাধানে সাড়া দেয়ার আহবান জানান।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। উভয় পক্ষে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। আজ বৃহস্পতিবার সড়ক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন মইয়ারচর গ্রামবাসী।
বৃষ্টির পানিতে তীব্র জলাবদ্ধতা বিরাজ করছে মইয়ারচর, নোয়াখুররমখলা ও নাজিরগাঁও এলাকায়। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম রুকন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অনেকেই আহত হয়েছেন। পুলিশ স্থানীয়দের সহায়তায় দোকানে আটকে পড়াদের উদ্ধার করেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করারও চেষ্টা চলছে। পুলিশ ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছে বলে জানান তিনি।