পৃষ্ঠপোষকতা পায় না সিলেটের ব্যাডমিন্টন খেলা ও খেলোয়াড়
সিলেটের ডাক প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ জুন ২০২৩, ৬:৩৯:০০ অপরাহ্ন
সিএম ইউনুস:
ব্যাডমিন্টনে দেশের মধ্যে এগিয়ে থাকলেও সিলেটে ব্যাডমিন্টন খেলা ও খেলোয়াড়দের পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। ফলে একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন ও একজন খেলোয়াড়কে সহযোগিতার আগ্রহ থাকলেও শেষ পর্যন্ত করা সম্ভব হয় না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। খেলাধুলায় উন্নতি করতে হলে বেসরকারি সহযোগিতা (স্পন্সর) আবশ্যক বলে মন্তব্য করেন সিলেট জেলা ব্যাডমিন্টন সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শামীম।
খেলোয়াড়দের অনেকেই জানান, ব্যাডমিন্টন খেলার খরচ এখন অনেক বেশি। ১৬ টাকার একটি শাটল কর্ক (ফেদার) এখন ২৩০ টাকা, ৩৫০/৪০০ টাকার র্যাকেট (ব্যাডমিন্টন ব্যাট) এখন ৭/৮ হাজার টাকায় ক্রয় করতে হয়। ৫০০ টাকার কেডস ক্রয় করতে এখন ৩ হাজার টাকা লাগে। এছাড়াও যাতায়াত ভাড়া ও আনুসঙ্গিক ব্যয় রয়েছে। এভাবে খরচ দিয়ে খেলোয়াড়দের পক্ষে খেলা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সহযোগিতা না পাওয়ায় অনেক ভালো খেলোয়াড় খেলা থেকে হারিয়ে গেছেন। সিলেট জেলা ক্রীড়া সংস্থা ইনডোর স্টেডিয়ামের মাঠ ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে, না হলে ব্যক্তি উদ্যোগে স্থাপিত ইনডোর মাঠ ব্যবহারের জন্যও টাকা দিতে হতো বলে জানান তারা।
‘খেলাধুলার বিভিন্ন ইভেন্টের মধ্যে এককভাবে সিলেটের সবচেয়ে বেশি সাফল্য রয়েছে ব্যাডমিন্টনে। গত যুব গেমসে সিলেট ১৫ থেকে ১৭টি ইভেন্টে অংশ নিয়ে একমাত্র ব্যাডমিন্টনে স্বর্ণ জয় করে। ব্যাডমিন্টনে সিলেট বহুবার জাতীয়ভাবে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খেলোয়াড়দের সহযোগিতা ও টুর্নামেন্ট আয়োজনে সিলেটের স্থানীয় ব্যবসায়ী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও প্রবাসীদের পৃষ্ঠপোষকতা থাকলে এই অর্জন দেশের সীমা ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়বে’-মন্তব্য করেন খেলোয়াড়-কোচসহ সংশ্লিষ্টরা।
সিলেটের স্বনামধন্য কোচ শিব্বির আহমদ জানান, চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা নিজেদের উদ্যোগে চট্টগ্রাম ব্যাডমিন্টন লীগ করেন। লীগের সবকিছু তারাই করেন জেলা ক্রীড়া সংস্থা শুধু সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ব্যবসায়ীদের উদ্যোগে ব্যাডমিন্টন লীগ ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে এবং সব ভালো ভালো খেলোয়াড় সেখানে অংশগ্রহণ করেছেন। সিলেট ব্যাডমিন্টনে এগিয়ে থাকার পরও এখানে কোন সমন্বিত সহযোগিতা গড়ে উঠল না। তিনি বলেন, আমাদের অনেক ভালো খেলোয়াড় আছেন। কিন্তু সহযোগিতা না থাকায় তারা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারেন না। পাশর্^বর্তী দেশ ভারতের একটি জেলা দলের খেলোয়াড়াদের সাথে আমাদের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়ও হেরে যায়। ভারতের শিলচর জেলা দলের সেই শাটলারকে তারা একটি ব্যাংকের ম্যানেজারের মর্যাদা দিয়ে রেখেছে। সে শুধু সেই ব্যাংকের লোগো ও জার্সি ব্যবহার করবে। তাকে ম্যানেজারের মতো প্রতিমাসে ৪০ হাজার রুপি বেতন দেয়। এতে শাটলারদের খেলায় একাগ্রতা ও আত্মবিশ^াস অনেক বেড়ে যায়। আমাদের জেলা দলের খেলোয়াড়রা তো দূরের কথা, জাতীয় দলের খেলোয়াড়রাও ন্যূনতম এসব সুযোগ পান না।
সিলেটের স্বনামধন্য এক সাবেক খেলোয়াড় জানান, ঢাকার অনেকে সিলেটেকে ব্যাডমিন্টনের রাজধানী বললেও সিলেটের ব্যাডমিন্টনে অগ্রগতি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা ছাড়াই তারা ব্যক্তি উদ্যোগে খেলা ও টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে সিলেটের জন্য সম্মান নিয়ে এসেছেন। শুধুমাত্র জাতীয় কোন টুর্নামেন্ট আসলে জেলা ক্রীড়া সংস্থা সিলেট টিমকে একত্রিত করে শুধুমাত্র একটি জার্সি, ভাড়া ও থাকা-খাওয়ার টাকা দিয়েই পাঠিয়ে দেয়। ব্যাডমিন্টনে জাতীয় প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের প্রাইজমানিও এতোটাই সামান্যই যে উল্লেখ করার মতো নয়।
জাতীয় র্যাংকিংয়ে প্রথম দিকে থাকা সিলেটের এক শাটলার বলেন, আমাদের নিজেই খেলা চালিয়ে যেতে হয় এবং সব দায়িত্ব নিজেই নিতে হয়। কিছুদিন পূর্বে সম্পূর্ণ নিজের খরচে দেশের বাইরের একটি টুর্নার্মেন্টে অংশগ্রহণ করেছিলাম। খেলার শেষের দিকে ইনজুরিতে পড়ায় খেলা ছেড়ে আসতে হয়। দেশে এসে ইনজুরির চিকিৎসা নিচ্ছেন সম্পূর্ণ নিজের খরচে। কেউ একবার জিজ্ঞাসাও করেনি।
সিলেট জেলা ব্যাডমিন্টন সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাডমিন্টন ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য সিরাজুল ইসলাম শামীম বলেন, সিলেটের স্পন্সর সংকট একটি বড় সমস্যা। একটি টুর্নামেন্ট আয়োজন বা খেলোয়াড়দের খেলা চালিয়ে যেতে অনেক খরচ হয়। কোন সহযোগিতা না পেলে দীর্ঘদিন এটা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। সিলেটে দু’একটি প্রতিষ্ঠানকে খেলাধুলায় স্পন্সর করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য জেলা ব্যাডমিন্টনে এগিয়ে যাচ্ছে। আগামীতে বরিশাল, খুলনা এসব জেলার সাথে সিলেটকে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তিনি জানান, সিলেট সিটি নির্বাচনের পরেই ব্যাডমিন্টনের স্কুল প্রতিযোগিতা, বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা, সিনিয়র প্রতিযোগিতা শুরু হবে। তবে টুর্নামেন্ট আয়োজনে অনেক খরচ। স্পন্সররা এগিয়ে এলে সফল টুর্নামেন্টের মাধ্যমে সিলেটের ব্যাডমিন্টনে নতুন যুগের সূচনা হবে। সিলেটের ব্যবসায়ীদের খেলাধুলায় পৃষ্ঠপোষকতা করার বিষয়ে কথা বললে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এর সাবেক পরিচালক ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদ বলেন, ক্রীড়াক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে থাকেন। সিলেটের ব্যাডমিন্টনে স্পন্সর পেতে হলে আগে একে জনপ্রিয় করা প্রয়োজন। খেলা জনপ্রিয়তা অর্জন করলে এবং প্রচার প্রচারণা থাকলে অনেকেই সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। এক্ষেত্রে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।